কলকাতা: স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য শ্বশুর-শ্বাশুড়ি’কে কাঠগড়ায় তুলল জামাই৷ জামাইয়ের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দু’মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তারপর সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলা হয়েছে৷ সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এই নির্দেশ দিয়েছেন।
সাধারণত শ্বশুর-শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে পুত্রবধূর ওপর অত্যাচারের। এবারে ঠিক উল্টো চিত্র ধরা পড়ল কলকাতা হাইকোর্টে। স্ত্রীর মা-বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন জামাই।
কী হয়েছিল..
*তাহিদুর রহমান ভারতীয় সেনা জওয়ান। বিমান বাহিনীতে কর্মরত।
* ২০১৮ সালের ১৮ জুন তাহিদুর জিব্বা তানজিমের সঙ্গে ইসলামিকমতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
* বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর সেনা বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তী কালে তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাবার কথা ছিল।
* ফলে জেব্বা মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় তাঁর মা-বাবার কাছেই বসবাস করছিলেন।
* হঠাৎ তিনি খবর পান তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
* এরপর তিনি তড়িঘড়ি দিল্লি থেকে ফিরে আসেন।
* অভিযোগ তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর খবর তাঁকে জানানো হয়নি।
* স্ত্রীর মৃত্যুর নথিতে তিনি দেখতে পান তাঁর স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে
* ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর দিল্লি থেকে কর্মরত অবস্থায় তিনি বেলডাঙা থানায় স্ত্রীর মা বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
* পুলিশ তদন্ত না করেই চার্জশিট জমা করে বলে অভিযোগ
এরপরই মেয়ের বাবা-মা জামাইয়ের বিরুদ্ধে বেলডাঙা থানার পালটা পন নেওয়ার অভিযোগ তুলে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই সেনা জওয়ান তাহিদুর কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলার শুনানি চলাকালীন তাহিদুরের আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের অভিযোগের সঠিক তদন্ত না করেই পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। আমি এখনো বলছি আমার স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য তার বাবা-মা দায়ী। আমার অভিযোগের পর তারা নিজেদের বাঁচাতে আমার বিরুদ্ধে পর নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে যে অভিযোগ দায়ের করেছে তা ভিত্তিহীন।’
পালটা সরকারি আইনজীবী শুভব্রত দত্ত বলেন, ‘এ কথা সঠিক জামাইয়ের অভিযোগ নিয়ে তাঁকে কোন জিজ্ঞাসাবাদ না করে পুলিশ তদন্ত চালিয়েছে। তাই ওই অভিযোগের সঠিক তদন্ত হয়েছে কিনা তা বলা সম্ভব নয়। ফলে আদালত যা নির্দেশ দেবেন তা সঠিকভাবে পালন করবে পুলিশ।’
এরপরই বিচারপতি রাজশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, ‘তাহিদুর রহমানের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে পুনরায় তদন্ত করতে হবে বেলডাঙার পুলিশকে। পাশাপাশি স্ত্রীর মা-বাবার করা অভিযোগেরও তদন্ত করবে পুলিশ।’
একই সঙ্গে আদালত জানায়, ‘২ মাসের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ করে পুলিশকে সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে নিম্ন আদালতে৷ সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে নিম্ন আদালত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করবেন এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন৷’
সাধারণত পুত্রবধূর ওপর নির্যাতনের ভুরি ভুরি মামলা আদালতে দেখা যায়। স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য তার মা-বাবার বিরুদ্ধে জামাইয়ের অভিযোগে আশ্চর্য হয়েছে আইনজীবী মহল।