Placeholder canvas
HomeআজকেAajke | তোতাপাখি বনাম দলের সংস্কৃতি, শমীক বনাম অনুপম হাজরা

Aajke | তোতাপাখি বনাম দলের সংস্কৃতি, শমীক বনাম অনুপম হাজরা

ক’দিন আগেই বলছিলাম না অন্তত বাংলা বিজেপিতে মুষল পর্ব চলছে, তো সেই মুষল পর্বের ছবি গতকাল আবার এসেছে। রাজ্য বিজেপির একমাত্র নেতা যিনি নাকি দলের জাতীয় সম্পাদকও বটে, তিনি সটান চলে গেলেন তৃণমূলের এক অনুষ্ঠানে। গিয়ে বললেন এই উপাচার্য বিজেপি সেজে নিজের গদির মেয়াদ বাড়াতে চাইছেন। কোন উপাচার্য? বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, যিনি উপাচার্য হয়ে আসা ইস্তক তৃণমূলের স্থানীয় নেতা থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত কাউকে রেয়াত করেননি। যা বলেছেন তা সাধারণভাবে এক দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের কাছ থেকে আশাই করা যায় না। কিন্তু সে তো ছিল তৃণমূলের ব্যাপার, সেখানে হাজির একদা কেষ্ট মোড়লের খুঁজে আনা প্রতিভা, একদা বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা। সঙ্গে সঙ্গেই এই ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াও এসে গেছে, সে আলোচনায় আসছি পরে। এই এক অনুপম হাজরাতেই থেমে নেই, ডাকসাইটে গামছা কাঁধে দিলু ঘোষ আবার নাজেহাল, এবার অবশ্য দলীয় কর্মীদের কাছেই। একবার আমরা দেখেছিলাম দার্জিলিংয়ে, এধার ওধার থেকে উড়ে আসছিল বোম্বাইয়া চাঁটি, দেখেছিলাম দিলু ঘোষের গ্লোরিয়াস রিট্রিট, গৌরবজনক পশ্চাদপসরণ। সেই দিলু ঘোষ গতকাল কেবল ওই মাথায় চাঁটিটাই যা খাননি, দেহরক্ষী না থাকলে অবশ্য চাঁটি পড়ত নিশ্চিত। কেন? সেও জানাচ্ছি একটু পরে। এবং বাংলা বিজেপির ইন্টেলেকচুয়াল নেতা মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তিনি এসবের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যা বললেন তাতে মুষল পর্বের ছবিটা আরেকটু স্পষ্ট হল। আসলে তিনি পড়েছেন ফ্যাসাদে, চারিদিকে যা চলছে তা খুব রাবীন্দ্রিক নয়, কিন্তু তাঁকে গলা গম্ভীর করে সেসব সেমসাইড গোলের ব্যাখ্যা দিতেই হচ্ছে। আপাতত ওটাই ওনার একমাত্র কাজ। প্রতি সাঁঝে রিপোর্টাররা নিয়ম করে ওনার কাছে যান, আর ওনার কীই বা বলার থাকে বলুন? বিজেপি এই রাজ্যে কই? এ রাজ্যে বিরোধী তো রাজ্যপাল, ইডি আর সিবিআই। তার মধ্যে রাজ্যপাল হঠাৎই কেমন যেন মিইয়ে গেছেন। সে থাক আপাতত আমাদের আলোচনা বাংলা বিজেপির মুষল পর্ব নিয়ে। সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, তোতাপাখি বনাম দলের সংস্কৃতি, শমীক বনাম অনুপম হাজরা।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে নিয়ে বিতর্ক সেই শুরুর দিন থেকেই। উনি এসে ইস্তক বুঝেছিলেন এই পদকে কাজে লাগিয়ে একটা কিছু হওয়া যাবে, কাজে লাগাচ্ছিলেনও। কিন্তু একটা সময়ে এসে সব মাত্রা পার করে ফেলার পরে এমনকী বিজেপির নেতারাও সমর্থন দেওয়া বন্ধ করেন। কিন্তু সে তো অন্য কথা, ওই বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের ডাকা এক অনুষ্ঠানে চলে গেলেন বিজেপির জাতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। বিশ্বভারতীর এক সময়ের অধ্যাপক, এই বোলপুর থেকেই তৃণমূলের সাংসদ, হঠাৎই তাঁকে এনে হাজির করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তারপরে তিনি দল বদলে আপাতত বিজেপির জাতীয় সম্পাদক, কিন্তু রাজ্যে কেউ ওনাকে পাত্তাও দেয় না, কী নেতা কী কর্মী, কারও কাছেই তিনি কল্কে পান না। এদিকে তাঁর নিজস্ব কোনও সংগঠনও নেই, পঞ্চায়েত ভোটেও জেতার এলেম নেই।

আরও পড়ুন: Aajke | হ্যাঁ, এক পক্ষের দুর্নীতির দিকেই নজর, কিন্তু সেই দুর্নীতিই বা আছে কেন?

সেই তিনি তৃণমূলের অনুষ্ঠানে হঠাৎ হাজির হলেন, বললেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সুযোগ নেওয়ার জন্য বিজেপি সাজার চেষ্টা করছেন। তিনি এর আগে দলবদলের পরেও এরকমই হঠাৎ কেষ্ট মোড়লের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। সেখানে মাছের ঝোল ভাত খেয়ে আসেন বলেই আমরা জানি। তো এই তৃণমূলের প্রতিবাদ সভায় যাওয়ার পরেই দলের জাতীয় সম্পাদককে রাজ বিজেপির মুখপত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, উনি দলের সংস্কৃতি বোঝেন না, তৃণমূলে যাওয়ার ছক কষছেন ইত্যাদি। তাঁর কথা শুনে অনুপমের অনন্য প্রতিক্রিয়া, তিনি বলেছেন শমীক তো এসি ঘরের তোতাপাখি। বিজেপি একসময় নিজেদেরকে পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স বলে গর্ব বোধ করত। এখন সেই বিজেপির জাতীয় সম্পাদক, রাজ্য বিজেপির মুখপত্রকে এসি ঘরে বসা তোতাপাখি বলছে, রাজ্যের মুখপাত্র বলছে দলের জাতীয় সম্পাদক দলের সংস্কৃতিই জানে না। এবং দিলু ঘোষ, যিনি দলের রাজ্য দফতরে তাঁর নিজের অফিস খুইয়েছেন, কদিন আগেই দলের ওই দফতরেই সাংবাদিক সম্মেলন যেখানে হয় সেখানে সমর্থক নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন। সমর্থকরা স্লোগান দিচ্ছিল হবু মুখ্যমন্ত্রী দিলীপ ঘোষের নামে। তারপরে ওই ঘরে তালা পড়েছে, যে কেউ ঢুকে পড়বে তা আটকানোর জন্য তালা দেওয়া হয়েছে। সেই দিলু ঘোষ গিয়েছিলেন পূর্ব মগরাহাটে, তাঁর অনুগামীদের নিয়ে বিজয়া সারতে। সেখানে বিজেপি নেতারা পুজো করেছিলেন, পুজোর খরচা বাবাদ ১ লক্ষ টাকা অনুদান বিজেপির তরফ থেকেই দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে নাকি ৩০ হাজারের হিসেব মেলেনি, তাই বিক্ষোভ, সেই বিক্ষোভের মুখে পড়লেন দিলু ঘোষ। না এবার চাঁটি পড়েনি, ধাক্কাধাক্কি হয়েছে, দিলু ঘোষকে সেই দার্জিলিংয়ের পরে আবার নার্ভাস দেখাচ্ছিল। তাঁর দেহরক্ষীরা গিয়ে সামাল দেন, চাঁটির হাত থেকে বাঁচেন বাংলা বিজেপির জঙ্গি নেতা দিলু ঘোষ। জানা গেছে এই ঘটনার পেছনে যিনি আছেন, তাঁকে নাকি চিহ্নিত করেছেন দিলুদা, এবং অদুর ভবিষ্যতে তাঁকেও বুঝিয়ে দেওয়া হবে। শান্তিকুঞ্জে অশান্তি হবে? জানি না। কিন্তু আপাতত এটাই বাংলা বিজেপির ছবি, টার্গেট ৩৫টা আসন, দলের জাতীয় সম্পাদক তৃণমূলে গেলেন বলে। তো আমরা সেই কথাই আমাদের দর্শকদের সামনে রেখেছিলাম। দিলু ঘোষের জন্য বিজেপি রাজ্য দফতরে তালা লাগানো হয়েছে, দলের মুখপাত্রকে দলের জাতীয় সম্পাদক এসি ঘরে বসা তোতাপাখি বলছে, দলের মুখপাত্র দলের জাতীয় সম্পাদকের দলের সংস্কৃতিই জানা নেই বলছে, এদিকে লোকসভার টার্গেট ৪২-এ ৩৫। এ রাজ্য থেকে ক’টা আসন পাবে বিজেপি? কী বললেন মানুষজন শুনুন।

বিজেপির এ রাজ্যে তিনজন আলাদা আলাদা নেতা, তিনজনের একজন অন্যজনের মুখ দেখতে রাজি নন। এরপরে দলে এই তিনজনের নেতৃত্বে অন্তত গোটা ১৫ আলাদা আলাদা গোষ্ঠী, তাদের নিজেদের মধ্যে কনস্ট্যান্ট লড়াই চলছে। এইরকম এক পরিস্থিতিতে অমিত শাহ টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন, ৩৫টা আসন জিততে হবে। কিন্তু সিবিআই, ইডি আর রাজ্যপাল দিয়েই কি নির্বাচন জেতা যায়? ২০২৪ সেই সত্যিটা বিজেপিকে বুঝিয়ে দেবে।

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments