প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে এই মুহূর্তে সব থেকে ব্যস্ত হলেন প্রিয়াঙ্কা সরকার। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ‘নির্ভয়া’ ছবির শ্যুটিং করছেন নায়িকা। তারই মাঝে ফোনে ধরা দিলেন কলকাতা টিভির প্রতিনিধির সঙ্গে। জানালেন আগামী সায়েন্স ফিকশন ছবিতে কাজ করার জন্য কীভাবে তৈরি করছেন নিজেকে।
১. ‘চংচং ছবিতে পুলিশের চরিত্রে দেখা যাবে আপনাকে। এই চরিত্রের চ্যালেঞ্জ কী আছে?
প্রিয়াঙ্কা- ‘চংচং’ ছবিতে আমি একজন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করছি। একজন পুলিশ অফিসারের শারীরিক ভাষা রপ্ত করতে হচ্ছে৷ সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল, একজন কর্মরত পুলিশের সঙ্গে এই চরিত্রটি একটা সময়ে অবসর জীবন কাটান।মানে দুটো আলাদা বয়সকে ধরা হচ্ছে, তাই এই বিষয়ের উপর একটু হোমওয়ার্ক করতে হচ্ছে। দুটো আলাদা বয়সের আলাদা শরীরী ভাষাকে অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলা বেশ কঠিন। সেটাই রপ্ত করার চেষ্টা করছি।এর সঙ্গে চেহারার একটা পার্থক্য থাকবে। চরিত্রের জন্য কিছুটা ওজন বাড়াতেও হবে। অল্প বষয়ের জন্য এক রকম লুক, বেশি বয়সের জন্য অন্য রকম লুক। মেকআপেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সব মিলিয়ে হাতে সময় নিয়ে এমনভাবে প্ল্যান করা হচ্ছে, যাতে এই অতিমারিতেও সুষ্ঠু ভাবে ছবির শ্যুটিং করা যায়।
২. সৌরভ শুক্লার মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করবেন। কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন ?
প্রিয়াঙ্কা- সৌরভ শুক্লা আমার খুব প্রিয় একজন অভিনেতা। এটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ আমার কাছে, আবার তাঁর মত একজন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার মজাটাও হল কাজের গুণগত মানও বেড়ে যায়। একে সৌরভ শুক্লার সঙ্গে কাজ, তার উপর কঠিন চরিত্র, সব মিলিয়ে খুব এক্সাইটেড হয়ে আছি। চরিত্রটির অনেক গুলো শেড রয়েছে, তাই অভিনয় দেখানোর সুযোগও অনেক বেশি।
৩. এই মুহূর্তে কোন ছবির শ্যুট চলছে?
প্রিয়াঙ্কা- এই মুহূর্তে পরিচালক অংশুমান প্রত্যুষের ছবি ‘নির্ভয়া’-র শ্যুট চলছে। এখানে গৌরব চক্রবর্তী, সব্যসাচী চক্রবর্তী, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র রয়েছেন। খুব ইন্টারেস্টিং একটা চিত্রনাট্য। কোর্ট ড্রামা। প্রচুর সংলাপ। ভীষণ যত্ন নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। অন্যরকমের একটা ছবি।আপাতত এই ছবি নিয়েই ব্যস্ত।
৪. তোমার হাতে বেশ কিছু ছবি আছে। কবে মুক্তির সম্ভবনা রয়েছে?
প্রিয়াঙ্কা- আমার চারটে ছবি রেডি।তার মধ্যে সোহমের সঙ্গেই দুটি ছবি আছে, যশের সঙ্গে একটি ছবি আছে। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি ছবি আছে ‘অনুসন্ধান’। এই ছবিগুলি সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু অতিমারির কারণে থিয়েটার বন্ধ, তাই সত্যি বোঝা যাচ্ছে না কবে ছবি মুক্তি পাবে, কবে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরব। তবে খুশির কথা এটাই যে, আমরা আবার কাজ করছি, মাঝের সময়টা খুব মনখারাপের মধ্যে কেটেছে৷ আমরা যদি একটু নিয়ম মেনে চলি হয়তো খুব শীঘ্রই সব ঠিক হয়ে যাবে। সবার কাছেই অনুরোধ, তখন থিয়েটারে গিয়ে দয়া করে ছবিগুলো দেখবেন।
ওটিটি তো আছেই, আমরা সকলেই ওটিটির ভক্ত হয়ে উঠেছি। তবে কিছু ছবি থাকে যেগুলো বড় স্ক্রিনে দেখলেই ছবির ফিল পাওয়া যাবে। আসলে থিয়েটারের উপর অনেকের জীবিকা নির্ভর করে, তাই সকলের কাছে আমার অনুরোধ সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখবেন প্লিজ।
৫. সায়েন্স ফিকশন এ কাজ করবে। তোমার প্রিয় সায়েন্স ফিকশন ছবি কোনটি?
প্রিয়াঙ্কা- এই অতিমারির পর আমি সায়েন্স ফিকশন বেশি করে দেখছি৷ এই যে পৃথিবী ধ্বংসের পথে, ভিন গ্রহের বাসিন্দাদের আবির্ভাব এই ধরনের প্রচুর ছবি দেখছি। মোটামুটি ওটিটিতে সব ছবি দেখে ফেলছি। তবে প্রিয় সায়েন্স ফিকশন বলতে মনে পড়ল আমি প্রথম থিয়েটারে গিয়ে যে ছবিটি দেখেছিলাম সেটি হল ‘জুরাসিক পার্ক ‘, খুব ছোট ছিলাম৷ কাকতালীয় ভাবে এটা একটা সায়েন্স ফিকশন ছিল। তবে আমার প্রিয় সায়েন্স ফিকশন হল স্টিফেন স্পিলবার্গ এর ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ‘। আমার তো সায়েন্স ফিকশন পড়তে খুব ভাল লাগে। আমার প্রিয় একটি বই হল ওয়েলসের ‘টাইম মেশিন ‘।
বহু ছবি দেখেছি৷ তার মধ্যে ‘ইনসেপশন’ ছবিটি খুব ভাল লেগেছে। আরও বহু সায়েন্স ফিকশনের ছবি আছে যেগুলি আমার পছন্দ। এখন আমি নিজেও এই রকম একটি সায়েন্স ফিকশন কাজ করব ভেবে আমি খুব খুশি। এ-রকম গল্প আমিতো আগে দেখিনি। তাই ‘চংচং’ আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছবি।
৬. রাজা চন্দ ও অঙ্কুশেরর সঙ্গে কাজ কেমন চলছে?
প্রিয়াঙ্কা- রাজা চন্দর পরিচালনায় অঙ্কুশের সঙ্গে যে ছবিটি করার কথা, সেটি সবেমাত্র ঘোষণা করা হয়েছে। এখনও সেরকম কিছুই এগোয়নি। আসলে লকডাউনের জন্য লোকেশন পেতেও সমস্যা হচ্ছে। তবে আশা করব, খুব শীঘ্রই রাজাদার সঙ্গে শ্যুট শুরু হবে। আমি এই কাজটা করার জন্য মুখিয়ে আছি।
৭. করোনাকালে শ্যুটিং কতটা বদলেছে?
প্রিয়াঙ্কা- অনেকটা বদলে গেছে শ্যুটিংয়ের পরিবেশ। কম সময়ের মধ্যে বেশি কাজ করতে হচ্ছে। আগে ১৪ থেকে ১৫ ঘন্টা টানা কাজ করেছি, এখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হচ্ছে৷ কারণ কারফিউ জারি হয়ে যাচ্ছে। কমসংখ্যক লোক নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে৷ ফলের কাজের গতি মন্থর হয়েছে। যতটা সম্ভব মাস্ক ও স্যনিটাইজেশন করতে হচ্ছে। তাই পরিবেশ তো অনেকটাই বদলেছে। তবে এগুলো জরুরি৷ তাই এ ভাবেই কাজ এগোতে হবে।
৮. ভালো চিত্রনাট্য না পরিচালক কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তোমার কাছে?
প্রিয়াঙ্কা- আমার কাছে দুটোই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এমন অনেক চিত্রনাট্য দেখে আমি ইমপ্রেস হয়ে কাজ করেছি, কিন্ত কাজ শেষে দেখেছি এগজিকিউশন ঠিকঠাক হয়নি, যেমন আশা করছিলাম আউটপুট তেমন পাইনি। আবার সাধারণ চিত্রনাট্যকেও ন্যারেটিভ দিয়ে দারুণ ছবি করেছেন পরিচালক এমনও দেখেছি, তাই পরিচালক খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি নিজে নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসি, দারুণ সব আইডিয়া থাকে৷ আলোচনার মাধ্যমে ভালো ছবি তৈরি হয়। তবে মিসফায়ারও হয় অনেকবার (হাসি)।আসলে সিনেমা একটা টিম ওয়ার্ক। সবার সমান গুরুত্ব রয়েছে।
চিত্রনাট্য, পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রগ্রাহক, অভিনেতা, মার্কেটিং প্রযোজক সব মিলিয়ে একটি ছবির সাফল্য নির্ভর করে। আর সময় নিয়ে প্ল্যান করে করলে অবশ্যই ছবি ভালো হবে। আর ঈশ্বরের কৃপায় আমি আমার আগামী ছবির কাজের জন্য অনেকটা সময় পাচ্ছি নিজেকে তৈরি করার।