কলকাতা: বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার (Justice Rajasekhar Mantha ) বাড়ির সামনে আপত্তিকর পোস্টার (Poster) লাগানো এবং এজলাসের বিক্ষোভের ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) । বলা হয়েছে, পরবর্তী শুনানির দিন ওই অভিযুক্তদের হাজিরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে কলকাতা পুলিশকে (Police)। হাইকোর্টের আরও নির্দেশ ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আদালত অবমাননার মামলার শুনানি ৩ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চেই হবে। প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ ওই মামলার শুনানি শোনার জন্য বিচারপতি টিএস শিভঘ্ননম, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ গঠন করে। যে ৬ জনের বিরুদ্ধে বিচারপতি মান্থার নামে আপত্তিকর পোস্টার লাগানোর অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের নোটিস পাঠানো হয়েছিল কিন্তু কেউই আদালতে হাজির হননি। ওই ৬ জনের নাম মুহবন্ধ খামে কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) এই মামলায় তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট আদালতে জমা দিলেও তা খুলে দেখেনি হাইকোর্ট। বুধবার সরকারি কৌঁসুলির উদ্দেশে বিচারপতি শিভঘ্ননমের মন্তব্য, আমরা এই রিপোর্ট এখনই খুলে দেখছি না। তদন্তের নামে আদালতের সঙ্গে লুকোচুরি খেলবেন না। তদন্ত কী গতিতে এগোচ্ছে, সেটা আমরা দেখব। শামুকের গতিতে নাকি ঘোড়ার গতিতে? বিচারপতি আরও বলেন, পুলিশকে সঠিক নাম দিন। একজন দোষ করেছেন, কিন্তু আর একজনের নাম দেওয়া ঠিক হবে না।
আরও পড়ুন:Teacher Death Protest Debra | মারে মৃত্যু প্রতিবাদী শিক্ষকের, আদিবাসীদের ডাকা বনধে উত্তাল ডেবরা
জানুয়ারি মাসের গোড়াতেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। এক রাতে বিচারপতির যোধপুর পার্কের বাড়ির সামনে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচুর আপত্তিকর স্লোগান লেখা পোস্টার পরে। তাতে কোথাও বিচারপতির ছবির উপরে লেখা ছিল, লজ্জা। আবার কোথাও লেখা ছিল, বিচারপতি মান্থা বিচারের নামে কলঙ্ক। তারপরের দিনই কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতির মান্থার এজলাসে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। আইনজীবীদের এজলাসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। এজলাসের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, হাইকোর্ট চত্বরও ওই একই ধরনের পোস্টারে ছেয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের দাবি, বিচারপতি এজলাস বয়কট করতে হবে। তাঁদের অভিযোগ ছিল, বিচারপতি মান্থা রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য একের পর এক আপত্তিকর রায় দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন বিচারপতি। হই হট্টগোলে সেদিন হাইকোর্টে কার্যত কোনও কাজই হয়নি। বিচারপতির মান্থার এজলাস বয়কটের দাবিতে আইনজীবীদের একাংশ বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন।
পরে বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে আদালতে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ গোটা ঘটনার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চায়। ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয় কলকাতা পুলিশকে। ১০ জানুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ ব্যাপারে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন বিচারপতি মান্থা। গোটা ঘটনাটি জানানো হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকেও। ঘটনার নিন্দা করে ভারতীয় বার কাউন্সিল। তাদের এক প্রতিনিধিদল ওই ঘটনার সরেজমিন তদন্তে কলকাতায় আসেন।