কে যেন চলে গেল! উৎসবের শামিয়ানায় লেগে রইল বচ্ছরকার ঘাম, ক্লেদ, ক্লান্তি। গঙ্গার বুড়ো ঘাটগুলো বিকেল থেকে নেচে উঠেছে বিসর্জনের ঢাকের তালে। ছেলে, বুড়ো, মেয়ে, বউ নাচছে উমার বিদায়-আনন্দে। দুটো পানের পাতা মায়ের গালে স্পর্শ করতে গিয়ে কেঁপে উঠছে হাত। যেন নিজের বাপের ঘর ছেড়ে যাওয়ার দিনটা মনে পড়ছে। দেবীর মুখে খিলি করা পান, মিষ্টি ছোঁয়াতে গিয়ে ভিজে গেল চোখ।
এখন নেই আর নীলকণ্ঠ পাখি। তার জায়গায় এসেছে বাজি। রাতের অন্ধকার চিড়ে উড়ে যাচ্ছে রকেট। মায়ের আসার খবর জানান দিতে কৈলাসে। মঙ্গলবার দশমীর দিনই শয়ে শয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে গেল। কাল থেকে পুরোদমে কাজে ফেরা। মহানগরের সব রাজপথ আজ মিশেছে গঙ্গামুখী পথে।
কলকাতাসহ সব ঘাটে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে করা হয়েছে নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত আলো, পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়াররা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। জলদূষণ ঠেকাতে আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন মানুষও।
ঘাটগুলি ছোটখাট মেলার চেহারা নিয়েছে। ফুচকা, ঘুগনি, আইসক্রিম থেকে ডিম-পাউরুটি, মায় সীতাভোগ, মিহিদানা, ল্যাংচাও বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই জ্যারিকেনে করে গঙ্গাজল ও গঙ্গামাটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সামনেই যে লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজো আসছে। আকাশের আধখানা চাঁদ কোজাগরীর জন্য সেজে উঠছে।
বিসর্জনের জন্য এদিন কলকাতার বেশ কিছু পশ্চিমমুখী যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা নামতেই বাবুঘাট, বাগবাজার, আহিরীটোলাগামী রাস্তা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রীদের হাতে চলে গিয়েছে। তাসা, সাঁওতালি নাচ, রণপেয়ে, ব্যান্ড, ব্যাগপাইপারের সঙ্গে সুদৃশ আলোর গেট দেখতে রাস্তার দুধারে শয়ে শয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন বিকেল থেকেই। ঘাটে ঘাটেও অনেকে এসেছেন মায়ের বিদায় যাত্রা দেখতে।
জলপথেও রয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রিভার ট্রাফিক পুলিশ ঘনঘন মাইকে সতর্ক করে দিচ্ছে। লঞ্চে গঙ্গাবক্ষ থেকে ভাসান দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের চলার ঢেউ এসে লাগছে নদীপাড়ে।
ভাসানের পরেই চলছে কোলাকুলি। শত্রু হও, বন্ধু হও, আজ সব কালিমা ঘুচিয়ে ক্ষমা করার দিন। বৈরিতা দূর করে অসুররূপী যা কিছু অশুভ, যা কিছু ধ্বংসের প্রতীক তাকে বিনাশ করে বিজয় করার দিন। তাই আজ দেবী বিজয়া রূপ ধারণ করে মর্ত্য ছেড়ে পাড়ি দেন নিজের সংসারে। পঞ্চপল্লবের মঙ্গল কলসের শান্তিজল ফিরিয়ে আনুক অপার শান্তি। দেবীর বরাভয়ে যে সেই মন্ত্রটাই আজ উচ্চারণ করে মানুষ। শান্তি দাও মা। এতো যাওয়া নয়, আসা। আবার এসো মা।
দেখুন আরও অন্য খবর: