নয়াদিল্লি: লোকসভায় পাশ হল মহিলা সংরক্ষণ বিল। ৪৫৪টি ভোট পক্ষে পড়েছে। বিপক্ষে পড়েছে ২টি ভোট। এর আগেই মহিলা সংরক্ষণ বিলকে সমর্থন জানায় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। বুধবার এই বিলের উপর আলোচনায় সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী দুজনেই সমর্থনের বার্তা দেন। লোকসভায় বিলের বিতর্কে অংশ নিয়ে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল বলেন, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণ ছাড়া এই বিল অসম্পূর্ণ। অন্য বিরোধী দলগুলির সুরে সুর মিলিয়ে তিনিও মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে বিজেপির গড়িমসির নিন্দা করেন। নতুন জনগণনা, আসন পুনর্বিন্যাসের জন্য দেরি কেন, এই আজ থেকেই কার্যকরী করার দাবি তোলেন কংগ্রেস নেতা।
অন্যদিকে, পাটনায় সাংবাদিকদের সামনে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম রূপকার নীতীশ কুমার দাবি করেন, মহিলা সংরক্ষণ বিল বিজেপি কার্যকর করতে পারবে না। এটা কেবলমাত্র ভোটের আগে রাজনৈতিক চমক। ওরা যদি এই বিলকে কার্যকর করতে চাইত, তাহলে অনেক আগেই তা করত। আমরা অনেকদিন ধরে মহিলা সংরক্ষণের কথা বলে আসছি। ওরা কানে তোলেনি। জাতিগত জনগণনার কথাও বলে আসছি, করছে কি ওরা?
এদিন শুরুতেই কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী লোকসভায় বলেন, তাঁরা এই বিলকে সমর্থন করেন। তবে সোনিয়ার দাবি, এই সংরক্ষণের মধ্যে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের পৃথক কোটা রাখা উচিত। এর জন্য তিনি জাতিগত জনগণনার দাবিও তোলেন। কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সোনিয়া আরও বলেন, এই বিল রাজীবজির স্বপ্নের বিল। উল্লেখ্য, বাংলার তৃণমূল কংগ্রেসও এই বিলকে সমর্থন জানিয়েছে।
সোনিয়া বিলের উপর বিতর্কে আরও বলেন, ভারতীয় নারীদের সহনশীলতা মহাসমুদ্রের মতো। একটা নদীর মতো সে সকলের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যায়। আজ বলতে গিয়ে মনে পড়ছে, আমার স্বামী রাজীব গান্ধী স্বপ্ন দেখতেন, ভোটে মহিলাদের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিতে। সে কারণে আজকের এই মুহূর্তটির সঙ্গে আমার আবেগ জড়িয়ে আছে।
সোনিয়া গান্ধীর বক্তব্যের শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, অধীরজি আপনাকে আমি বলছি, এটা সেই দেশ যেখানে মহিলারা নিজেদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে না। এই দেশের ঐতিহ্য হল, ভাইরা বোনদের রক্ষা করে। নারী কল্যাণ নিয়ে সকলেরই বলার অধিকার রয়েছে।
বিলের উপর আলোচনায় তৃণমূল কংগ্রেসের কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ দেশের একমাত্র রাজ্য যেখানে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হলেন একজন মহিলা। অন্য রাজ্যের তুলনায় আমাদের বিধানসভাতেই সবথেকে বেশি সংখ্যায় বিধায়ক রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কুস্তি সংস্থার অভিযুক্ত প্রধান ব্রিজভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে বিজেপি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যারা চক্রান্তকারী তারা এখনও এখানে বসে রয়েছে। হাথরাসে গণধর্ষণ, আসিফা মামলা তুলে কেন্দ্রকে বেঁধেন তিনি। কাকলি বলেন, আইআইটির মহিলা গবেষকরা স্টাইপেন্ড পাচ্ছেন না, সরকারের সেদিকে কোনও নজর নেই।
রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বিলের উপর আলোচনায় বলেন, নির্বাচনের লক্ষ্যেই বিজেপি মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করেছে। এই বিল প্রথমে আমরাই ২০১০ সালে রাজ্যসভায় পাশ করিয়েছিলাম। কিন্তু, লোকসভায় পাশ হয়নি। ফলে এটা কোনও নতুন বিল নয়। আমার মনে হয় নির্বাচনে চমক দিতেই ওরা এই সময়টাকে বেছে নিয়েছে। কিন্তু, জেনে রাখা দরকার আসন পুনর্বিন্যাস ও জাতিগত জনগণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটা কার্যকর করা যাবে না। এখন দেখা দরকার সেগুলো হতে কত সময় লাগায় বিজেপি।