দার্জিলিং: রাজনীতি ছাড়ার হুমকি দিলেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা (Raju Bista)। শুক্রবার তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে (2024 elections) যদি গোর্খারা সুবিচার না পায়, তাহলে আমি রাজনীতিই (Politics) ছেড়ে দেব। বিজেপি সাংসদের (Darjeeling MP) এই মন্তব্যকে ঘিরে ইতিমধ্যেই বিজেপির অন্দরে নানান আলোচনা শুরু হয়েছে, চর্চা চলছে পাহাড়েও। আর দুবছর পরই লোকসভার ভোট। তার আগে বিজেপি সাংসদের এই মন্তব্য পাহাড়ের রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে দার্জিলিং কেন্দ্রে জিতেছিলেন বিজেপির সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। তখন বিজেপিকে সমর্থন করেছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং পাহাড়ের আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। সেই সময় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে মোর্চার সম্পর্ক ছিল খুবই তিক্ত। ওই ভোটের আগে বিজেপি গোর্খাল্যান্ড সমস্যা সমাধান করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও একই প্রতিশ্রুতি দেয় বিজেপি। ভোটে জেতেন বিজেপির রাজু বিস্তা। তখনও বিজেপির পাশে ছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তখনকার লোকসভার ভোটে পাহাড় সহ গোটা উত্তরবঙ্গের মানুষ ঢেলে ভোট দিয়েছিল বিজেপিকে। উত্তরবঙ্গের সবকটি লোকসভা কেন্দ্রই দখল করে বিজেপি। ২০১৪ সাল থেকে গত আট বছরে পাহাড়ের রাজনীতিতে অনেক জল গড়িয়েছে। ক্রমশই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।
পরবর্তীকালে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং প্রকাশ্যেই বলেন, গোর্খাল্যান্ড নিয়ে বিজেপি কিছুই করবে না। আমরা বিজেপির সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চাই না। ক্রমে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তৃণমূলের সঙ্গে। মোর্চা নেতা বিমল গুরুং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাহাড়ের মা বলেও সম্বোধন করেন। ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে অলিখিত বোঝাপড়া হয় মোর্চার। মোর্চা ছেড়ে অনেকই তৃণমূলে ভিড়ে যান। বিধানসভা ভোটে পাহাড় সহ উত্তরবঙ্গে লোকসভা ভোটের তুলনায় যথেষ্ট ভালো ফল করে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: Russia-Ukraine Conflict: রুশ হানায় বিধ্বস্ত ইউক্রেন, পুতিনকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব জেলেনস্কির
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মমতা বরাবরই বলে এসেছেন, পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি মানা হবে না। তবে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অথরিটিকে (GTA) আরও ক্ষমতা দেওয়া হবে। একসময় জিটিএ-র বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। এখন অবশ্য সেসব অতীত।
সূত্রের খবর, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সহ পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বুঝে গিয়েছে, পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে বিজেপি আর অগ্রসর হবে না। তাদের সামনে কেবল খুড়োর কল ঝুলিয়ে রাখা হবে। গোর্খাল্যান্ড নিয়ে উত্তরবঙ্গে চাপের মুখে আছে বিজেপিও। সাংসদ হিসেবে সেই চাপ অনেকটাই সামলাতে হচ্ছে রাজু বিস্তাকে। এই অবস্থায় বিজেপি সাংসদ এদিন ঘোষণা করলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে গোর্খারা সুবিচার না পেলে তিনি রাজনীতিই ছেড়ে দেবেন। এখন দেখার আগামী দু বছরে কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।