skip to content
Sunday, June 30, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : কংগ্রেস, গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি

চতুর্থ স্তম্ভ : কংগ্রেস, গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি

Follow Us :

কংগ্রেস, দ্য গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি। কেন? এমন তো নয় যে কংগ্রেস কোনও নির্বাচনে দারুণ ফল করেছে৷ এমনও নয় যে কংগ্রেস ২ বছর পরে ফিরে পেয়েছে দলের স্থায়ী সভাপতি৷ এখনও সেই অস্থায়ী সভাপতির দায়িত্ব নিয়েই কাজ চালাচ্ছেন সোনিয়া গান্ধী৷ এমনও নয় যে ওই জি ২৩ নামে কংগ্রেসের গোষ্ঠী, যাদের ৯০ % কোনওদিন পঞ্চায়েতেও জিতে আসতে পারবে না, তারা কোনও বিরাট সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ না তেমনও হয়নি৷ এমনও নয় যে বংশানুক্রমিক শাসন চালানোর অভিযোগ থেকে বাঁচতে সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা দলের মূল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছেন৷ উলটে শোনা গেল, রবার্ট ভদরা বলেছেন, দল যদি চায়, তাহলে আমিও রাজনীতিতে আসতেই পারি। তাহলে হঠাৎ কংগ্রেস নিয়ে আলোচনা কেন? কারণ হল কংগ্রেস হঠাৎই রাজনৈতিক আলোচনার শিরোনামে৷ খবর এসেছে, পি কে, প্রশান্ত কিশোর বার তিনেক, সোনিয়া গান্ধী এবং দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে আগামী লোকসভা নির্বাচন, কংগ্রেসের সাংগঠনিক কাঠামো, আগামী রূপরেখা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ কেবল আলোচনাই নয়, পাক্কা খবর, তিনি কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন৷ ইলেকশন স্ট্রাটেজিস্ট হিসেবে নয়, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন।

অনেকদিন পরে কংগ্রেসের সব গোষ্ঠীর নেতা কর্মীরা, আনন্দিত, দলের কর্মীরা উল্লসিত। ২৮ ডিসেম্বর, ১৮৮৫ সালে যে পার্টি পথ চলা শুরু করেছিল, সেই ১৩৬ বছরের গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টির কর্মীরা উল্লসিত৷ কারণ ইলেকশন স্ট্রাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর দলে যোগ দিচ্ছেন৷ অব আচ্ছে দিন আয়েগা। ভাবা যায়? মধ্যে ক’বছরের জন্য নিতীশ কুমারের জেডি(ইউ)-তে যোগ দেওয়া ছাড়া, যিনি কোনও দিন কোনও রাজনীতি করেননি, কোনও আন্দোলন লড়াই এ নামেননি, কোনওদিন নির্বাচনে প্রার্থী হননি, উলটে ২০১৪-তে যিনি ছিলেন মোদিজীর, বিজেপির জয়ের অন্যতম কাণ্ডারি, সেই তিনি গান্ধী, নেহেরু, সুভাষ, প্যাটেল, আজাদের কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন৷ সেটা হেডলাইন৷ সেটা শুনে কংগ্রেস নেতা ও কর্মীরা উল্লসিত।

প্রশান্ত কিশোরের হাতে কি কোনও যাদুকাঠি আছে? যার ছোঁয়াতে কংগ্রেস ফিরে পাবে তার হারিয়ে যাওয়া গরিমা, তার অতীত? প্রশান্ত কিশোর এমন কী নতুন কথা বলছেন, এমন কোন ফান্ডামেন্টাল চেঞ্জ আনতে চলেছেন? যার জন্য এই আশা জেগেছে, পুলকিত হচ্ছেন কংগ্রেস নেতা কর্মীরা? সম্ভবত ২ মে পিকে এবং কংগ্রেস এই ঘোষণা করবেন, তারপর দেখা যাবে কী হয়, কোন কোন পদক্ষেপে মৃয়মান, দৃশ্যতই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন কংগ্রেস কিভাবে ঘুরে দাঁড়ায়? অসম্ভব জনপ্রিয় দল আর অত্যন্ত ক্যারিস্মাটিক নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে, পিকে সফল ২০১৪ সাধারণ নির্বাচনে, দিল্লিতে, তেলেঙ্গানায়, অন্ধ্রতে, তামিলনাড়ুতে, এই বাংলায়, এটা তো সত্যিই। কিন্তু আজকের কংগ্রেসের অবস্থার সঙ্গে তার কি কোনও তুলনা করা যায়? এটাও সত্যি যে শরদ পাওয়ার, স্তালিন, কেসি আর, জগন রেড্ডি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পিকের দারুণ ভালো সম্পর্ক৷ সেই সম্পর্ক থেকে ইউপিএ আবার শক্তিশালী হয়ে উঠতেই পারে৷ কিন্তু কোন শর্তে? জানা নেই। অতএব কেবল স্পেকুলেশন, গেস ওয়ার্ক না করে ঠিক যে সময়ে কংগ্রেসে পিকের, ল্যাটারাল এন্ট্রি হচ্ছে, সেই সময়ে কংগ্রেসের হালটা একবার দেখে নেওয়া যাক৷ সেই তথ্যগুলো থেকে সম্ভবত একটা ধারণা করা যেতে পারে, পিকের আগমনে কেন বাজলো তোমার আলোর বেনু?

বহু আগে দল প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সংসদেই জহরলাল নেহরুকে, আবুল কালাম আজাদ এক শায়রি শুনিয়েছিলেন৷ শাহাব জাফরির লেখা শায়রি, “তু ইধার উধার কি না বাত কর, ইয়ে বতা কি কাফেলা কিঁউ লুটা, মুঝে রাহজনোঁ সে গিলা নঁহি, তেরি রাহবরি কা সওয়াল হ্যায়”। মানে হল, তুমি এদিক ওদিকের কথা বলোও না, আমায় বলো আমাদের সর্বস্য কে লুঠ করল? ডাকাত নিয়েছে? তাদের তো কাজই এটা, তা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই, তুমি বলো সঙ্গে যারা ছিল, তারা এই লুঠ আটকাতে পারল না কেন? আমার কাছে সেটাই বড় প্রশ্ন। সেই শায়রি আজও প্রযোজ্য৷ আরএসএস, হিন্দু মহাসভা, জনসঙ্ঘ, বিজেপি তো কংগ্রেসের বিরুদ্ধে৷ তাদের বিরোধিতা, আদর্শগত বিরোধিতা৷ কংগ্রেসের বিশ্বাস আদর্শ, ধর্মনিরপেক্ষতা, কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণা, বহুস্বরবাদের ধারণার বিরোধী তারা৷ তাদের বিরোধিতা স্বাভাবিক। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি, ডিএমকে, ওয়াই এস আর কংগ্রেস, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি, এনসিপি, বিজু জনতা দল, সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, জেডি (ইউ), জেডিএস, তৃণমূল দল? তারা তো সাধারণভাবে অন্তত কংগ্রেসের এই আদর্শের, ধর্মনিরপেক্ষতার, কল্যাণকামী রাষ্ট্রের, বহুস্বরবাদের বিরোধী নয়, তাহলে তারা কেন বিরোধী হয়ে উঠেছে? বেশ দলের বাইরের কথা বাদই দিলাম, দলের মধ্যের লোকজন কেন দল ছেড়ে এমনকি বিজেপি তে চলে যাচ্ছেন? কেন নিছক খেয়োখেয়ির জন্যই নিশ্চিত জয় পঞ্জাবে এতবড় পরাজয় হল? মানে সেই কবে আবুল কালাম আজাদ যে কথা বলেছিলেন, সেই কথা আজও একইরকম প্রাসঙ্গিক, দলের মধ্যে অকর্মণ্য জি হুজুরের দল বসে আছে৷ তারা হোমেও নেই, যজ্ঞেও নেই। ওঁত পেতে বসে আছে কোথায় কবে রাজ্যসভার আসন খালি হবে, উনি এমপি হবেন।

পারফর্ম্যান্সের বিচারে নয়৷ গান্ধী ফ্যামিলি ঘনিষ্ঠতা তাঁদের নেতা হয়ে ওঠার একমাত্র চাবিকাঠি৷ তাকিয়ে দেখুন দলের কাঠামোর দিকে৷ ৯ জন সাধারণ সম্পাদক আছেন, একে একে নাম বলি, অবিনাশ পান্ডে, একদা মহারাষ্ট্রের এমএলসি ছিলেন, পরে একবার রাজ্যসভা সদস্য, ওই মহারাষ্ট্র থেকেই। জিতেন্দ্র সিং, আলওয়ারের রাজপরিবারের সদস্য, শেষ জিতেছেন ওই আলওয়ার থেকেই লোকসভা আসনে৷ তারপর থেকে আর জয়ের মুখ দেখেননি। কেসি বেনুগোপাল, আপাতত রাজস্থান থেকে রাজ্যসভা সদস্য। মুকুল ওয়াসনিক, শেষ জিতেছেন ২০০৯ এ মহারাষ্ট্রের রামটেক থেকে৷ তারপর থেকে হেরেছেন। ওমেন চন্ডী, কেরালার মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন, আপাতত অন্ধ্রপ্রদেশের দায়িত্বে, তাঁর হাত থেকেই পিনারাই বিজয়ন ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন৷ এখনও কংগ্রেস কেরালায় ক্ষমতায় আসতে পারেনি। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, এবারে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন, কংগ্রেসের ভোট কমেছে, আসন মাত্র ২ টো। রণদীপ সিং সুরযেওয়ালা, উনি আপাতত কর্নাটকের দায়িত্বে এবং দলের রাষ্ট্রীয় মুখপাত্র, হরিয়ানার এমএলএ ছিলেন। বিহারের নেতা তারিক আনওয়ার, কাটিহার থেকে সংসদে জিতে আসতেন, ২০১৯ এ হেরেছেন। একসময়ে শরদ পাওয়ারের এনসিপি তে গিয়েছিলেন৷ কিছুদিন আগে আবার ফিরে এসেছেন৷ ফিরেই দলের সাধারণ সম্পাদক। অজয় মাকেন, দিল্লির নেতা, শেষ জিতেছিলেন ২০০৯ এ, তারপর থেকে দিল্লিতে কংগ্রেস মোটামুটি নেই বললেই চলে৷

ভোটে দাঁড়ালেই দিল্লির শিখ গণহত্যার প্রসঙ্গ উঠে আসে৷ ওনার নাম ছিল সেই গণহত্যাকারীদের তালিকায়, যে ঘটনা এখনও কংগ্রেসকে বিব্রত করে। তো এই হল সাকুল্যে ৯ জন সাধারণ সম্পাদক, যাদের মধ্যে একজনও লোকসভার সদস্য নয়, তাকিয়ে দেখুন লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা অধীর চৌধুরির দিকে৷ ২০১৯ এ জিতেছেন এই বাংলার থেকে, বহরমপুরের সাংসদ, আগামী নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিততে পারেন, একথা বাংলায় কংগ্রেসের একজনও বিশ্বাস করেন না৷ লোকসভায় বিরোধী দলনেতা, অসম্ভব বাজে বক্তৃতা দেন, রাজ্যে নিজের ছোট্ট গোষ্ঠীর বাইরে বের হতে পারেননি আজও৷ এটাই কংগ্রেসের কাঠামো।

ভোটের হিসেব আরও করুণ৷ ১৯৮৪ র পর থেকে লোকসভায় দলের যে ধস নেমেছে, তা আর থামার নামও নিচ্ছে না৷ ১৯৮৪ তে লোকসভার নির্বাচনে যত প্রার্থী ছিল, তার ৮২% জিতেছিল কংগ্রেস, ২০১৯ এ মোট প্রার্থীর ৮৮% হেরেছে কংগ্রেস। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত মোট প্রার্থীর অন্তত ৫০% জিতেছে কংগ্রেস, একমাত্র ব্যতিক্রম ১৯৭৭, যেবার তারা মোট প্রার্থীর ৩১% জিতেছিল, হ্যাঁ সেই বিরাট পরাজয়ের পরেও ৩১% প্রার্থী জিতেছিল। কিন্তু ১৯৮৪ র পর থেকে মোট প্রার্থীর ৫০% কোনওদিনই জিততে পারেনি। ১৯৮৯ এ ৩৯%, ১৯৯১ এ রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পরে সহানুভূতির হাওয়া নিয়েও ৪৮%, ১৯৯৬ – ২০০৪ এর মধ্যে গড়ে ২৯% প্রার্থী জয়ের মুখ দেখেছিল, ২০০৪ এ মাত্র ৩৫% প্রার্থী জিতলেও মিলিজুলি সরকার তৈরি করেছিল কংগ্রেস, ২০০৯ এ খানিক অগ্রগতি, ৪৭% প্রার্থী জিতলেন, এরপর ২০১৪ তে ৯% প্রার্থী জিতলেন, ৯১% হারলেন, সংখ্যার হিসেবে ৪২০ জন। ২০১৯ এ ৮৮% প্রার্থী হারলেন, ১২% জিতলেন। বিজেপির সামনে ১৩৭ বছরের গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টিকে অসহায় দেখাচ্ছে, দিশাহীন দেখাচ্ছে, এটাই বাস্তব। কিন্তু এর পরেও বিজেপির পরে কংগ্রেসই একমাত্র দল, যার হাতে এখনও রয়েছে ২০% ভোট, এবং দলের কথা ছেড়েই দিন রয়েছে কংগ্রেসের আদর্শ, ঐতিহ্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণা, বহুস্বরবাদের আদর্শ। এই একটা জায়গাই ভরসার, এবং অন্য ভরসার জায়গা হল কংগ্রেসের ইতিহাস, বিজেপির মিথ্যে ন্যারেটিভ যাকে ভুলিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। একবার ভাবুন না, যে দলের নেতারা দেশ স্বাধীন করার জন্য বছরের পর বছর জেল খেটেছেন, মার খেয়েছেন, যে দলের নেতৃত্বে দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে তিন তিনটে যুদ্ধে জিতেছে, সেই দলকে বিজেপি অনায়াসে অ্যান্টি ন্যাশনাল বলছে, কেবল বলছে নয়, মানুষের এক অংশ তা বিশ্বাসও করছে, এই প্রচারের সামনে কংগ্রেসকে অসহায় লাগছে, সেই দলে একজন আসলে তার খোল নলচে বদলে যাবে? আমরা যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, বহুস্বরবাদের বিশ্বাস করি তারা তো এমনটাই চাইব৷ এমনটা হলে খুশি হব, কিন্তু তা হবে কি?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Sharad Pawar | বিগ ব্রেকিং ‘বিজেপিমুক্ত মহারাষ্ট্র’ গড়তে জোট ঘোষণা শরদের
00:00
Video thumbnail
Bankra News বাড়ি তৈরিতে বাধাশুরু বোমাবাজি! পুলিশে ছয়লাপ এলাকা
00:00
Video thumbnail
Weather Update | বৃষ্টিতে নাজেহাল উত্তরবঙ্গ, আর ক'দিন দুর্ভোগ? বড় আপডেট দিল হওয়া অফিস
00:00
Video thumbnail
Raniganj News | রানিগঞ্জে ডাকাতির পরেই, CID-র জালে মাস্টারমাইন্ড কে?
00:00
Video thumbnail
Chopra | একুশ শতাব্দীতে নক্কারজনক ঘটনা! সালিশি সভায় কী হল? জানলে শিউরে উঠবেন
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | ভরাডুবির পর রাজ্যপালকে সমর্থন শুভেন্দুর, মুখ্যমন্ত্রীর কোন কথার প্রভাব?
00:00
Video thumbnail
Indian Railway | ফের বাতিল একাধিক ট্রেন, কোন শাখায়? জানুন বিস্তারিত
00:00
Video thumbnail
Bowbazar | বউবাজার হস্টেলের ঘটনায় বাধাপ্রাপ্ত খোদ পুলিশই? জানুন আসল ঘটনা
00:00
Video thumbnail
C. V. Ananda Bose | বাংলার আর্থিক অবস্থা নিয়ে রাজ্যপালের বড় ঘোষণা, কী বললেন?
00:00
Video thumbnail
Maharashtra | বিগ ব্রেকিং‘বিজেপি মুক্ত মহারাষ্ট্র’ গড়তে জোট ঘোষণা শরদের
01:16