Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : আমার ঘরে রাজার প্রবেশ নিষেধ

চতুর্থ স্তম্ভ : আমার ঘরে রাজার প্রবেশ নিষেধ

Follow Us :

ব্যক্তির স্বাধীনতা কতটা? রাষ্ট্র সেই স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারে কি? রাষ্ট্র ব্যক্তির জীবনে নাক গলাবে, সেটাই বা কতটা সমীচীন? এ নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। দুটো এক্সট্রিম ধারণা আছে। এক, ব্যক্তি স্বাধীনতা চূড়ান্ত, তাতে কোনও হস্তক্ষেপই মানা হবে না। দুই, রাষ্ট্র সবার উপরে, রাষ্ট্র ব্যক্তি জীবনের ওপরে যে কোনও রকমের হস্তক্ষেপ করতেই পারে, রাষ্ট্রবাদীরা একথা আকছার বলেই থাকে, ব্যক্তির ঊর্ধ্বে রাষ্ট্র।

এই আলোচনার প্রেক্ষিতেই, ১৭৬৩ সালে আর্ল অফ চ্যাথাম, উইলিয়াম পিট বলেছিলেন, “The poorest man may in his cottage bid defiance to all the force of the Crown. It may be frail—its roof may shake, the wind may blow through it, the storm may

enter, the rain may enter—but the King of England

cannot   enter!—all   his   force   dares   not   cross   the

threshold of the ruined tenement!”

গরীবতম মানুষটির কুঁড়েঘরেও রাজার সৈন্যের ঢোকা নিষেধ, নড়বড়ে হতেই পারে, ছাদ টলমল? হতেই পারে, বাতাস ঘরের এপাশ থেকে ওপাশে বয়ে যায়? যেতেই পারে, বৃষ্টি ঢুকে পড়তেই পারে যে কোনও সময়। কিন্তু ইংল্যান্ডের রাজা ঢুকতে পারে না, এই নড়বড়ে কুঁড়েঘরটাতে তার সৈন্যরা ঢোকার চেষ্টাও যেন না করে। এভাবেই তিনি ব্যক্তির স্বাধীনতাকে বুঝিয়েছিলেন। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, গনতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতি ও ব্যক্তির স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়েছে, ফুটনোটে বলা হয়েছে, রিজনেবল রেস্ট্রিকশন, মানে ব্যক্তির স্বাধীনতা থাকবে কিন্তু তার কিছু যুক্তিযুক্ত শর্তও রয়েছে। একজন খুনীকে খুঁজে বার করতে তার ফোন ট্যাপ করা, তার আত্মীয়ের ফোন ট্যাপ করা ঐ রিজনেবল রেস্ট্রিকশনের মধ্যেই পড়ে। কেউ যদি এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বলপ্রয়োগে উৎখাত করতে চায়, তাকে খুঁজে বার করতে বিভিন্ন রকমের সার্ভেল্যান্স হল ওই রিজনেবল রেস্ট্রিকশন, কেউ বোমা, গুলি আর কল্লা কেটে নেবার হুমকি দিলে, তার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করলে, অস্ত্র সংগ্রহের জন্য পয়সা জমা করলে তাকে ধরা যায়, জেরা করা যায়, তার ফোন বা কমপিউটারের উপর নজরদারি চালানো যায়, এটা ওই রিজনেবল রেস্ট্রিকশন।

কিন্তু এই রিজনেবল রেস্ট্রিকশনের বাহানা সামনে রেখে, উগ্রপন্থী এল এল জিগির তুলে, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে ব্যক্তিজীবনের সমস্ত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টাকে রিজনেবল রেস্ট্রিকশন বলে না, সেটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কেড়ে নেবার এক প্রয়াস মাত্র, আর কিছুই নয়। আর এটাই, এই রিজনেবল রেস্ট্রিকশনই এখন দেশে দেশে জঙ্গী রাষ্ট্রবাদী সরকার আর দলের, তাদের অর্বাচীন নেতাদের অস্ত্র। যে অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে তারা সেই নড়বড়ে কুঁড়েঘরেও ঢুকতে চায় যেখানে রাজার প্রবেশ নিষেধ। আজ সুপ্রিম কোর্টের রায় সেই কথাটাই আবার বলল। পেগাসাস মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারকরা বলেছেন, সরকার দেশের সুরক্ষা আর নিরাপত্তার কথা বলে ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : মৌলবাদ

ইতিমধ্যেই সবাই জানেন যে পেগাসাস একটা সফটওয়্যার, যাকে যে ইজরায়েল দেশ তৈরি করেছে, সেই সরকারই বলছে, এক অত্যন্ত শক্তিশালী মিলিটারি ওয়েপন, ইজরায়েল সরকার এই অস্ত্র বেচাকেনার উপরে কিছু নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে, যার ফলে ইজরায়েলের পেগাসাস অস্ত্র তৈরি করে যে কোম্পানি, তারা কোনও ব্যক্তিকে রাষ্ট্র বহির্ভূত কোনও সংস্থাকে এই অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে না। সোজা বাংলায় এই অস্ত্র কিনতে পারে কেবল কোনও সরকার বা সরকারের তরফে কোনও সরকারি সংস্থা। রামা, শ্যামা, যদু, মধু, যার ইচ্ছে হল সে পেগাসাস কিনে নিল আর নজরদারি শুরু করল, তেমনটা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, এই পেগাসাস সিস্টেম বিরাট জটিল, বিশাল পেশাদারি সংগঠন ছাড়া, বহু মানুষের টিমওয়ার্ক ছাড়া এই অস্ত্র ব্যবহার সম্ভব নয়। ফোন, ইন্টারনেটে নজরদারির বিভিন্ন অভিযোগ তো ছিলই, ১৫ জুন ২০২০ সিটিজেন ল্যাব, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের, অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তরফে ন’জন ভারতীয়ের কথা বলা হয়, যাদের উপরে অন্যায় নজরদারি চালানো হচ্ছে।

একমাস পরে ১৮ জুলাই, ২০২০ তে বিশ্বের ১৭টা সংবাদ প্রতিষ্ঠান যাতে আমাদের দেশের দ্য ওয়ার নামে সংবাদ সংস্থাও রয়েছে, তাঁরা জানালেন এই পেগাসাস আক্রমণের কথা, সারা পৃথিবীর ৫০ হাজার ফোন নম্বরে এই পেগাসাস আক্রমণ চালিয়েছে। এবং এই আক্রমণ কতটা সাংঘাতিক, তাও তাঁরা জানায়। জানা যায় পেগাসাস মোবাইল ফোনে ফোন ব্যবহারকারীর কোনও নির্দেশ, কোনও অ্যাকশন ছাড়াই ঢুকে পড়তে সক্ষম। মানে অন্য ভাইরাস কোনও ম্যাল ওয়ার, কোনও অ্যাপের সাহায্য নিয়ে ঢোকে, আপনাকে সেই অ্যাপকে অ্যাকসেপ্ট করতে হয়। পেগাসাসের সেসব কিছুই দরকার নেই, সে নিজে নিজেই আপনার ফোনে ঢুকে পড়তে সক্ষম, এবং তার পরে সে আপনার ফোনের ক্যামেরা, ভয়েজ রেকর্ডিং, বিভিন্ন ফাইল, ই-মেল দেওয়া নেওয়া, ব্যবহার করতে পারে। কেবল আপনার তথ্য জেনে ফেলাই নয়, আপনার ফোন থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে খুন করার ধমকিও পাঠাতে পারে। জানা গ্যালো ফ্রান্সে রাষ্ট্র প্রধান সমেত বহু দেশের রাজনৈতিক নেতার ফোন এই পেগাসাসে আক্রান্ত। সেই দেশে অবিলম্বে তদন্ত শুরু হল। আমাদের দেশেও তদন্তের দাবি উঠল। সরকার জানিয়ে দিল, এসব কিছুই হয় নি, বিরোধীদের চক্রান্ত।

আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : ধর্ম যার যার উৎসব সবার

যশবন্ত সিনহা, দ্য ওয়ারের সিদ্ধার্থ বরদারাজন সমেত বেশ কিছু বিশিষ্ট মানুষ সর্বোচ্চ আদালতে গেলেন, তাঁদের হয়ে বিভিন্ন পিটিশন দায়ের করলেন, কপিল সিব্বল, শ্যাম দিভান, রাকেশ দ্বিবেদী, দীনেশ দ্বিবেদী, মীনাক্ষী অরোরা, কলিন গনজাল্ভেসের মত বিশিষ্ট আইনজীবীরা।

সরকারের তরফে জানানো হল, জাতীয় সুরক্ষার জন্য আইনত কিছু নজরদারি চালানো হয়েছে, বেআইনি কোনও নজরদারি চালানো হয়নি। খেয়াল করুন, সরকার কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করল না, কেবল জানাল, যে নজরদারি চলছে, তা বেআইনি নয়। এই এক কথাই সরকারে তরফে সংসদে জানানো হল, এক কথাই তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানালেন। কিন্তু পেগাসাস নিয়ে স্পিকটি নট। অনর্গল নিজের মনের কথা বলতে থাকা হবুচন্দ্র মন্ত্রী নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি এ নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই কোনও কথা বললেন না, আর সাংবাদিকদের মুখোমুখিতো তিনি হন না, অতএব দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও দেশবাসী জানতে পারল না, ভাঙা কুঁড়েঘরে, যে ঘরে রাজার প্রবেশ নিষেধ সেখানে তাঁর পোষা খোচরবাহিনী ঢুকে পড়েছে কি না।

এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ক’দিন চিৎকার করার পরেই বুঝল আম জনতা পেগাসাস খায় না মাথায় দেয় তা বোঝে না, আসলে এই পেগাসাস যেভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করার কাজে লাগানো হচ্ছে, এই পেগাসাস দিয়ে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভকে যে ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, তা যে শেষমেষ সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিরোধী এই কথা অনেক সময় ধরে মানুষকে বোঝাতে হবে, অনেক ধৈর্য দরকার, তার চেয়ে অনেক সহজ দল ভাঙানো, অনেক সহজ চটকদারি প্রতিশ্রুতি দেওয়া, অনেক সহজ হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা বলা। অতএব তারাও ওই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কিছুদিন পরেই চুপ করে গেলেন। তো ভরসা ছিল সুপ্রিম কোর্ট, দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়। আজ সেই আদালতের বিচারপতিরা ঐতিহাসিক রায় দিলেন।

জানালেন, তাঁদের উদ্বেগের কথা, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ আক্রান্ত হতে পারে, এই চিন্তা তাঁদের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নামিয়েছে, তাঁরা দেশের মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা নিয়ে চিন্তিত, এই বিষয়ে সরকারের গোলমেলে অবস্থান নিয়েও তাঁরা চিন্তিত, তাঁরা তাঁদের রায়ে বলেছেন, না, সরকারের তৈরি করা কমিটির উপর ভরসা করা যাচ্ছে না, এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, তাঁর দুই সহযোগী আর তিনজন বিশিষ্ট পেশাদার মানুষের এক টেকনিক্যাল টিম এই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে, সত্যিই সরকার পেগাসাস কিনেছেন কি না, কিনে তার প্রয়োগ করেছেন কি না, করলে কারা সেই আক্রমণের শিকার, এই সবই খতিয়ে দেখা হবে।

যখন দেশের সবকটা প্রতিষ্ঠান মুখ বুজে ছিল, দেখেও দেখেনি, প্রশাসন আর সরকার যখন এই সামরিক অস্ত্র নিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার কেড়ে নিয়ে এক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ আরও একবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াল, তাদের শপথ, হাওয়া বয়ে যেতেই পারে সেই নড়বড়ে কুঁড়ে ঘরের এ দেওয়াল থেকে ওদেওয়াল ভেদ করে, ছাদ টলমল হতেই পারে, বৃষ্টির জল চুঁইয়ে পড়তেই পারে টপ টপ করে, কিন্তু সে কুটিরে রাজার সৈন্যদের, রাজার প্রবেশ নিষেধ। রাজা বা তার খোচরবাহিনী ঢোকার চেষ্টা করলে, চতুর্থ স্তম্ভ সরব হয়েছে, হচ্ছে, হবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
পলিট্রিক্সের গ্রিনরুম | বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ত্রয়ীর দাপটের কাহিনি
51:38
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধের দামামা | সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিজেপিকে আক্রমন অভিষেকের, কী বললেন সেনাপতি
28:56
Video thumbnail
ISL 2024 | ত্রিমুকুট জয়ের স্বপ্ন অধরাই! আইএসএল চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি
04:30
Video thumbnail
Rahul Sinha | পুরুলিয়ায় BJP প্রার্থীর মনোনয়ন জমা ঘিরে উত্তেজনা, SDO-কে ধাক্কা রাহুল সিনহার
07:52
Video thumbnail
নারদ নারদ (04.05.24) | সন্দেশখালির স্ট্রিং ভিডিয়োয় বিজেপির চক্রান্ত, নাটক শেষ, সব তথ্য ফাঁস: মমতা
33:37
Video thumbnail
District Top News | দেখে নিন আজকের জেলার গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
17:49
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | সন্দেশেখালি নিয়ে নাটক হয়েছে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
05:31
Video thumbnail
Kunal Ghosh | ডেরেকের বাড়িতে জরুরি বৈঠক, উপস্থিত ছিলেন ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ
09:59
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধের দামামা | ভোট আবহে সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিয়োয় শোরগোল রাজনৈতিক মহলে
15:11
Video thumbnail
সেরা ১০ | সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের অভিযোগ পূর্বপরিকল্পিত, প্রকাশ্যে ভাইরাল ভিডিয়ো
17:13