মনা বীরবংশী, শান্তিনিকেতন: বহিষ্কার ও সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার সকাল দশটা নাগাদ মহামিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে বোলপুর শান্তিনিকেতন নাগরিকবৃন্দর তরফ থেকে। নতুন করে অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মভূমি শান্তিনিকেতনে।
বেশ কয়েক বছর আগে বিশ্বভারতীর উপাচার্য পদে যোগ দিয়েছেন অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তিনি উপাচার্যের আসনে বসার পর থেকেই বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না রবীন্দ্রনাথের সাধের শান্তিনিকেতনকে। রবীন্দ্রনাথ জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন শান্তিনিকেতনে। বাঙালির প্রিয় জায়গা এই শান্তিনিকেতন। সেই শান্তিনিকেতনেই নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “বহিরাগত”। এ ধরনের বিভিন্ন মন্তব্য করে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন- চাকলা-কচুয়াগামী লোকনাথ ভক্তদের ফিরিয়ে দিল পুলিশ
শান্তিনিকেতনে তাঁর কর্মজীবনে তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীরই অধ্যাপক, কর্মী এমনকি পড়ুয়ারা পাহাড়প্রমাণ অভিযোগ এনেছেন। প্রতিবাদী এই শান্তিনিকেতনের মাটিতে চুপ করে থাকেননি অধ্যাপক, কর্মী, ও ছাত্র ছাত্রীরা। তবে উপাচার্যের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই পড়তে হয়েছে শাস্তির মুখে। তিনজন ছাত্র-ছাত্রী। সোমনাথ সৌ, ফাল্গুনী পান ও রুপা চক্রবর্তীকে তিন বছরের জন্য পুরোপুরিভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বিশ্বভারতী কতৃপক্ষ। পাশাপাশি বেশকিছু অধ্যাপক ও কর্মীদেরকে সাসপেন্ড করেছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন- চিটফান্ড কাণ্ডে অভিযুক্ত হিমন্তকে ‘সারদা’ খোঁচা তৃণমূলের
ছাত্র-ছাত্রীদের বহিষ্কার ও অধ্যাপক, কর্মীদের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার রাত থেকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বভারতীর ছাত্র-ছাত্রীরা। বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বাসভবন “অর্পিতা” বাড়ির সামনে অস্থায়ী মঞ্চ গড়ে তোলা হয়েছে। সেই মঞ্চে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ কর্মসূচি চালাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অধ্যাপক সকলেই। বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই পাশে দাঁড়িয়েছে এই আন্দোলনের।
সূত্রের খবর, সোমবার সকাল দশটা নাগাদ শান্তিনিকেতনের অদূরে দমকল অফিসের সামনে থেকে মহা মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। দমকল অফিসের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে শান্তিনিকেতন পৌষ মেলার মাঠ ও শান্তিনিকেতন থানার পাশ দিয়ে মিছিল পৌঁছবে উপাচার্যের বাড়ির সামনে ধর্না মঞ্চে। দাবী একটাই, “বিশ্বভারতীর গরিমাকে ফিরিয়ে আনতে হবে ও স্বৈরাচারী উপাচার্য পদত্যাগ”।
আরও পড়ুন- ঘুরে দাঁড়াতে ‘কফি হাউস’কে বিপুল অর্থ সাহায্য রাজ্যের
গতবছর পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়। দিনটা ছিলো ১৭ই আগস্ট শান্তিনিকেতন পৌষ মেলার মাঠ বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে এই দমকল অফিসের সামনে থেকে মেলা বাঁচাও কমিটির মিছিল শুরু হয়। তারপরই সম্পূর্ণ চিত্রটা বদলে যায় শান্তিনিকেতনে। অভিযোগ ওঠে, আন্দোলনের নামে শান্তিনিকেতনের উপাচার্যর তৈরি করা অস্থায়ী ক্যাম্প ভেঙে দেওয়ার। পাশাপাশি পে লোডার মেশিন দিয়ে বিশ্বভারতীর অতি প্রাচীন গেট ভেঙে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- সুস্থতার দিকে এগোচ্ছে রাজ্য, কমছে সংক্রমণের হার
যা বিশ্বভারতীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হয় গোটা বিশ্ব। চারিদিকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শান্তিনিকেতনের আকাশে বাতাসে কালো মেঘে ছেয়ে যায়। মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। হাইকোর্টের নির্দেশ বিশেষ কমিটি এই তদন্তভার গ্রহণ করে। আদালতের নির্দেশে পাঁচিল দিয়ে পৌষ মেলার মাঠ ঘেরা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আবারো নাগরিকবৃন্দ ডাকা এই মহামিছিলে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হবেনা তো? আশঙ্কা আঁচ থেকেই যাচ্ছে কবিগুরুর সাধের শান্তিনিকেতনে!