এটিকে মোহনবাগান–২ ওড়িশা এফ সি–০
(দিমিত্রি পেত্রাতোস–২)
নতুন বছরের তিন নম্বর ম্যাচে এসে জয়ের মুখ দেখল এটিকে মোহনবাগান। শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় সল্ট লেক স্টেডিয়ামে তারা বেশ ভাল খেলে হারাল ওড়িশা এফ সি-কে। এমন একটা ম্যচ জিতল মোহনবাগান যে ম্যাচে তাদের গোলকিপার বিশাল কাইথকে তেমন বলই ধরতে হল না। তা বলে কিন্তু ভাববেন না ওড়িশার অ্যাটাকাররা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়িয়েছে। না, তারা চেষ্টা করে গেছে নিরন্তর। তিন মিনিটের মধ্যে নিজেদের ডিফেন্সের গড়িমসির ভুলে ওড়িশা গোল খেয়ে যাওয়ার পর তাদের মাঝ মাঠ এবং অ্যাটাকাররা চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু গোলের দরজা খুলতে পারেননি। এর জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে বাগানের চার ডিফেন্ডারকে। বিশেষ করে দুই সেন্টার ব্যাক প্রীতম কোটাল এবং ব্রেন্ডন হামিলকে। ওড়িশার অ্যাটাকের সেরা অস্ত্র দিয়েগো মরিসিওকে তাঁরা এক বারের জন্যও ভয়ঙ্কর হতে দেননি। এই ব্রাজিলিয়ান এবারের লিগে আটটি গোল করে ফেলেছেন। কিন্তু প্রীতমরা তাঁকে কোনও জায়গা দেয়নি। তাই খানিকটা নিরাপদেই কাটালেন কমলজিৎ। ম্যাচে জোড়া গোল করে সেরার পুরস্কারটা নিয়ে গেলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। বহু দিন পরে বাগানের নয় নম্বর গোল পেলেন। এবং জেতালেন তাঁর টিমকে। ৯৪ মিনিটে আশিক কুরুনিয়নের লাল কার্ড দেখায় কোনও ক্ষতি হয়নি টিমের। এই জয়ের ফলে ১৫ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান উঠে এল তিন নম্বরে। আর একই ম্যাচ খেলে ২২ পয়েন্ট নিয়ে ওড়িশা পড়ে রইল সাতে। বাগানের আর বাকি পাঁচটা ম্যাচ। মনে হয় আই এল প্লে অফে যাওয়া তাদের কেউ আটকাতে পারবে না।
পর পর দুটো ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট হারিয়ে জুয়ান ফেরান্দো এদিন নতুন করে সাজিয়েছিলেন তাঁর দলকে। ৪-২-৩-১। সামনে শুধু দিমিত্রি। চার ডিফেন্ডারের সামনে কার্ল ম্যাকহিউ এবং এফ সি গোয়া থেকে আসা গ্লেন মার্টিন্স। তাঁদের সামনে তিন অ্যাটাকিং মিডিও মনবীর সিং, হুগো বুমো এবং আশিক কুরুনিয়ন। এই মরসুমে লিস্টন কোলাসো প্রতি ম্যাচেই প্রায় ব্যর্থ। তাঁকে এবার প্রথম একাদশ থেকে বাদ যেতে হল। শেষ দশ মিনিটের জন্য নামানো হলেও ওইটুকু সময়ে লিস্টনের পক্ষে তেমন কিছু করা সম্ভব হয়নি। তবে নতুন দলে প্রথম ম্যাচে গ্লেন মার্টিন্স বেশ ভাল খেললেন। দীপক ট্যাংরি চোট পেয়ে এই মরসুমের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন। তাই বাগানের একজন ডিফেন্সিভ মিডিও দরকার ছিল। গ্লেন মার্টিন্স দাঁড়িয়ে গেলে সেই সমস্যা দূর হবে। নক আউটের কঠিন ম্যাচগুলোতে গ্লেনকে লাগবে বাগানের। তাঁর পাশে কার্ল ম্যাকহিউ নিজের খেলাটা ঠিক খেলে গেলেন। এই বিদেশিটি বাগানে আন্ডাররেটেড। কিন্তু দলের পক্ষে খুবই উপযোগী। আর তাঁদের পিছনে বাগানের চার ডিফেন্ডারের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। আরও একবার বলতে হবে রাইট ব্যাক আশিস রাইয়ের কথা। এই পাহাড়ি যুবক কিন্তু প্রতিদিনই উন্নতি করছেন। দিমিত্রির দ্বিতীয় গোলটা তাঁরই সোনার পাস থেকে পাওয়া। এই মরসুমে জুয়ান ফেরান্দোর উপহার হলেন আশিস। লেফট ব্যাক শুভাশিস বসু বরাবরের মতো বিশ্বস্ত। আশিস-দেবাশিসের যৌথ আশীর্বাদে বাগানের ডিফেন্সে অভিশাপ নামবে কী করে?
ওড়িশার চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না। সামনে দিয়েগো মরিসিও, ডিফেন্সে কার্লোস দেলগাদো, মাঝ মাঠে সাউল ক্রেসপো নিজেদের ভূমিকায় বেশ সফল। তবে মরিসিওকে জায়গা দেননি বাগান ডিফেন্স। তাঁর ভারতীয় সহযোগীরাও পারেননি বাগানের টাফ দিফেন্স ভাঙতে। সারা মরসুম জুয়ান ফেরান্দো খোঁটা খেয়ে যাচ্ছেন ডিফেন্ডারদের ভুল ত্রুটির জন্য। মনে হচ্ছে এবার অনেকটাই সামলে নিয়েছে তাঁর ছেলেরা। তিন মিনিটের মধ্যে গোল পেয়ে যায় বাগান। ডান দিক থেকে হুগো বুমোর সেন্টার ড্রপ খেতে খেতে চলে যায় বক্সের মধ্যে ছয় গজের দূরত্বে দাঁড়ানো দিমিত্রি কাছে। হঠাৎ পাওয়া বলটা আলতো পুশে ভুল করেননি দিমিত্রি। এই ম্যাচে জোড়া গোলের পর তাঁর গোল সংখ্যা হল সাত। তাঁর পাশে আশিক কুরুনিয়ন সারাক্ষণই পরিশ্রম করলেন। কিন্তু মনবীর এখনও তাঁর নিজের ভাল খেলার থেকে অনেক দূরে। হুগো বুমোর মধ্যে একটা কিছু করার প্রবণতা আছে। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হতে গিয়ে তিনি নিজেকে ডোবাচ্ছেন, দলকেও। দিমিত্রির দ্বিতীয় গোলটা ৮০ মিনিটে। ডান দিকে দুরন্ত গতিতে উঠে আশিস রাই ব্যাক সেন্টারটা রাখলেন একদম দিমিত্রির পায়ে। ঘাড়ের উপর একজন ডিফেন্ডারকে নিয়েও গোল করতে অসুবিধে হয়নি অজি স্ট্রাইকারের। আর দুটো গোলের সময়েই গোলকিপার অমরিন্দর নেহাতই দর্শক। সাধে কি আর মোহনবাগান তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে!