ইংল্যান্ড—৬ ইরান—২
( জুড বেলিংহাম, বুকোয়া সাকা-২, রহিম স্টার্লিং, মার্কাস র্যাশফোর্ড, জ্যাক গ্রিলিশ) ( মেহেদি তারেমি)
রাশিয়া বিশ্ব কাপে চতুর্থ। গত বছরের ইউরো কাপে রানার্স। এবারের ইংল্যান্ড নিয়ে তাই ফুটবল প্রেমীদের মধ্যে তো বটেই বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও আলাদা একটা নজর আছে। প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ড বুঝিয়ে দিল তাদের উপর যারা আশা করছেন তাদের তারা ডোবাবে না। প্রথম ম্যাচ যে কোনও টিমের কাছেই একটু ঝামেলার ব্যাপার। নিজেদের সেট করতে একটু সময় লাগে। কিন্তু ইংল্যান্ড শুধু হাফ ডজন গোলই দিল না, বাকি টিমগুলোকে জানিয়ে দিল, আমাদের সম্পর্কে সজাগ থেকো। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ইংল্যান্ড এখন পাঁচ নম্বরে। আর এশিয়ার প্রতিনিধি ইরান আছে কুড়ি নম্বরে। তাই ইংল্যান্ডের বড় জয়ের ব্যাপারে কোনও বিস্ময় নেই। বিস্ময় যেটা তা হল দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার এবং অধিনায়ক হ্যারি কেনের কোনও গোল নেই এর মধ্যে। তার মানে ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকিং ফোর্স যে এবার খুবই বিধ্বংসী হবে তার পূর্বাভাস কিন্তু গ্যারেথ সাউথগেটের ছেলেরা প্রথম ম্যাচেই দিয়ে রাখল। বি গ্রুপে এই দুই দলের সঙ্গে আছে আমেরিকা এবং ওয়েলস। প্রথম ম্যাচে যেভাবে গজরাল ইংল্যান্ড, বলেই ফেলা যায়, ওই দুটো টিমকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবে ইংল্যান্ড।
গ্যারেথ সাউথগেটের টিমের সবচেয়ে বড় গুণ হল, দলে প্রচুর গোল করার লোক। ৪-২-৩-১ ছকে টিমকে খেলালেন তিনি। সামনে শুধু হ্যারি কেন। গত বিশ্ব কাপে সোনার বুট পেয়েছিলেন কেন, সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে (৬)। দেশের হয়ে ৫১টি গোল করেছেন। আর মাত্র তিনটি গোল করলে তিনি হবেন দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ভেঙে দেবেন ওয়েন রুনির রেকর্ড। কিন্তু রেকর্ডের কথা মাথায় রেখে তিনি যে খেলবেন না তা ইরানের বিরুদ্ধে ম্যাচেই বুঝিয়ে দিলেন কেন। সামনের দিকে অবাধে বিচরণ করেছেন। কখনও ডান দিকে, কখনও বাঁ দিকে। আবার সতীর্থদের জন্য গোলের বল সাজিয়ে দিয়েছেন। এ রকম একজন অলপারপাজ, ফ্রি হুইলিং ক্যাপ্টেন যাদের আছে, তারা বড় কিছু আশা করতেই পারে। কেনকে বাদ দিয়েই আফ দজন গোল করল ইংল্যান্ড। কারণ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যাঁরা নিয়মিত গোল করেন সেই বুকোয়া সাকা, রহিম স্টার্লিং বা মার্কাস র্যাশফোর্ডরা নিজেদের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া করে গোলের পর গোল করেছেন। ইরানের দুর্ভাগ্য তাদের এক নম্বর গোলকিপার আলিরেজা বেইর্যানভার্ড কুড়ি মিনিটের মাথায় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে বসে গেলেন। পরিবর্ত গোলকিপার সেই জায়গাটা সামলাতে পারেননি। হোসেন হোসেনিকে দোয দিয়ে অবশ্য লাভ নেই। ইরান ডিফেন্সই চাপের মুখে বার বার ভেঙে পড়েছে। ফিফার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ইরান ম্যাচ শুরুর আগে তাদের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে গলা মেলায়নি। কিন্তু ম্যাচের মধ্যে তাদের এই সাহস দেখা যায়নি।
ইংল্যান্ড প্লেয়াররা শুরু থেকেই নিজেদের মধ্যে অসংখ্য পাস খেলে একটার পর একটা আক্রমণ গড়ে তোলে। গোল পাওয়াটা যেন শুধু ছিল সময়ের অপেক্ষা। সেটা এল ৩৫ মিনিটে। বাঁ দিক থেকে লুকা শয়ের সেন্টারে সবার অলক্ষ্যে পিছন থেকে এসে হেড করে গোল করে গেলেন মিডফিল্ডার জুডে বেলিংহাম। মাত্র ১৯ বছর বয়স ছেলেটার। বিশ্ব কাপের প্রথম ম্যাচেই যা ম্যাচিওরিটি দেখালেন তাতে দলে তাঁর জায়গা পাকে। ৪৩ মিনিটে ২-০ করে ফেললেন বুকোয়া সাকা। গত বছর ইউরো ফাইনালে পেনাল্টিতে গোল মিস করার পর তাঁকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। বছর ঘুরতে প্রথম সুযোগেই সাকা বুঝিয়ে দিলেন তাঁকে নিয়ে এবার সমালোচনা নয়, হবে আলোচনা। বাঁ দিক থেকে হ্যারি ম্যাগুয়েরের সেন্টার লাফিয়ে উঠে হেড করলেন সাকা। কিন্তু ইরানের জন্য তখনও আরও দুঃসময় অপেক্ষা করছিল। বাঁ দিক থেকে কর্নারে হ্যারি কেন বল নামিয়ে দিলেন ঋইম স্টার্লিংয়ের জন্য। বাঁ পায়ের ভলিতে গোল করলেন স্টার্লিং। ম্যাচের বয়স তখন ৪৬ মিনিট। চতুর্থ রেফারি ৪ মিনিট ইনজুরি টাইম দেখালেও রেফারি কিন্তু খেলালেন ১৪ মিনিট। এটাও একটা বলার মতো ঘটনা বটে।
বিরতির আগেই যদি তিন গোল হয়ে যায় তাহলে আর ম্যাচে কিছু থাকে না। কিন্তু এই ইংল্যান্ড তো অন্য ধাতুতে গড়া। তাই ৬২ মিনিটে একক চেষ্টায় গোল করে এলেন সাকা। কিন্তু এর তিন মিনিট পরেই খানিকটা আত্মতুষ্টির খেসারত দিতে গোল খেতে হল ইংল্যান্ডকে। যে জর্ডন পিকফোর্দ তখন পর্যন্ত কোনও কঠিন বল ধরেননি তিনিই গোল খেলেন। মেহেদি তারেমি সেন্টার ব্যাক জন স্টোন্সকে পিছনে ফেলে উঁচু শটে গোল করলেন। এর পরেই নামানো হল মার্কাস র্যাশফোর্ডকে। এবং তিনি নেমেই অনেকটা দৌড়ে দলের হয়ে পঞ্চম গোলটা করলেন। কিন্তু তখনও ইংল্যান্ডের গোলক্ষুধা মেটেনি। সেটা সম্পূর্ণ করলেন আরেক পরিবর্ত জ্যাক গ্রিলিশ। ডান দিক থেকে র্যাশফোর্ডের গড়ানে সেন্টারে টোকা মেরে গোল করলেন। তবে ইরানের প্রশংসা করতে হবে তারা কিন্তু হতাশ হয়নি। সংযুক্ত সময়ে পেনাল্টি থেকে গোল করলেন সেই মেহেদি তারেমি। গ্যারেথ সাউথগেটকে কিন্তু তাঁর ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশন নিয়ে ভাবতে হবে।