কলকাতা হাইকোর্টে ফের ধাক্কা আয়কর দফতরের। কলকাতা টিভির সাংবাদিক ও অসাংবাদিক কর্মীরা মামলা করেন কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলা খারিজের বিষয়ে আয়কর দফতরের দাবিকে মান্যতা দিলেন না বিচারপতি নিজামুদ্দিন। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার শুনানি পর্বে আয়কর দফতরের তল্লাশিতে আধাসামরিক বাহিনীর অতিসক্রিয়তা নিয়েও আইনি প্রশ্ন উঠল। এই বিষয়ে জবাবি হলফনামা তলব হাইকোর্টের।
এদিন শুনানির শুরুতেই সিল করা খামে আয়করের দফতরের রিপোর্ট জমা করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক কুমার চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, উপযুক্ত কারণ থাকায় এই তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর দফতর।
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক কুমার চক্রবর্তী: রিপোর্টেই উল্লেখ রয়েছে কেন এই তল্লাশি চালানো হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ মতো সিল করা খামে সেই রিপোর্ট পেশ করলাম।
বিচারপতি নিজামুদ্দিন: রিপোর্টে উল্লেখ আছে, আয়কর আইনের বেশ কিছু বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই এই তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে যেহেতু তদন্ত চলছে, তাই এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না।
আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়: তল্লাশিতে সিআরপিএফ-এর ভূমিকা আইন সঙ্গত ছিল না। সিআরপিএফ শুধুমাত্র ফোর্স হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। সিআরপিএফ সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী নয়। তাদের পুলিশ ফোর্সের সঙ্গেও তুলনা করা যায় না। কারণ, তাঁদের কোনও সমস্যা হলে সরাসরি হাইকোর্টেই আবেদন জানাতে হয়। তাদের নিজস্ব কোনও ট্রাইব্যুনাল নেই। কিন্তু পুলিশ ফোর্সের ক্ষেত্রে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (স্যাট) আছে। পাশাপাশি আয়কর দফতরের কাছ থেকে হলফনামা তলব করুক আদালত, যাতে উল্লেখ থাকবে বিগত এক বছরে আয়কর দফতর কোন কোন জায়গায় তল্লাশির ক্ষেত্রে আধাসামরিক বাহিনী ব্যবহার করেছে এবং কোন কোন জায়গায় আয়কর দফতর স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়েছে।
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক কুমার চক্রবর্তী: এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই এই মামলার ক্ষেত্রে হলফনামা জমা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
বিচারপতি নিজামুদ্দিন: আপনার গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি শুনানি পর্বে রাখা যেতে পারে। তবে যেখানে সাংবিধানিক অধিকার খর্বের অভিযোগ উঠেছে, সেই ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে যে আবেদন হয়েছে, তা আমি ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারি না। এ বিষয়ে আপনি আপনার বক্তব্য হলফনামার মাধ্যমে জানাতেই পারেন। কিন্তু এই মামলার শুনানি চলবে।
আবেদনকারীর পক্ষে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য: আমার মক্কেল অজিত কুমার রায়ের সঙ্গে কোম্পানির কোনও সংযোগ নেই। তিনি, তাঁর স্ত্রী ও তাঁর শাশুড়ি প্রবীণ নাগরিক। তাঁরা যে কোনও স্থানে বেড়াতে যেতে পারেন। সেখানেও ভবিষ্যতে আয়কর দফতর তল্লাশির নামে তাঁদের হেনস্তা করতে পারে। তাই মামলা চলাকালীন তাঁদের বিরুদ্ধে যাতে আয়কর দফতর কোনও দমনমূলক পদক্ষেপ না করতে পারে, সেই বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করুক আদালত।
অপর এক আবেদনকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি: আয়কর দফতরের অতিসক্রিয়তায় বিভ্রান্ত আবেদনকারীরা। আয়কর দফতর পুনরায় তল্লাশির নামে হেনস্তা করতে পারে। তাই মামলা চলাকালীন তারা যাতে এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তার উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করুক আদালত।
বিচারপতি নিজামুদ্দিন মৌখিকভাবে আদালতে উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বলেন, এখানে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আছেন। উনি আইন জানেন, মামলা চলাকালীন আয়কর দফতর দমনমূলক কোনও পদক্ষেপ করলে আবেদনকারীদের জন্য আদালতের দরজা খোলা আছে। আদালত পরিস্থিতি বিচার করে সেই সময় সিদ্ধান্ত নেবে।
আদালতের নির্দেশ, আবেদনকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে হলফনামা দেবে আয়কর দফতর। পাশাপাশি আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে তারা অতিরিক্ত হলফনামা জমা দেবে। আয়কর দফতরকে এই হলফনামারও জবাব দিতে হবে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে।