skip to content
Thursday, July 4, 2024

skip to content
HomeআজকেAajke | আগে বালতি উলটে দেখা…

Aajke | আগে বালতি উলটে দেখা…

Follow Us :

রাজনীতির মানুষজন চটজলদি অনেক কথা বলেন, মজার কথা বলেন, সপাটে বলেন, এক কথার সেই উত্তরগুলো বহুদিন মনে থাকে। অনেকসময় সেসব কথা বলার জন্য সমালোচিত হন, অনেক সময়েই সেসব কথা মানুষের মনে থেকে যায়। বেশিরভাগ সময়েই এরকম কথা আসে সেই রাজনৈতিক নেতার বিরোধী কোনও নেতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে। বহুকাল আগে, সেসময় সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, স্ত্রী মায়া রায়কে নিয়ে গিয়েছিলেন দার্জিলিংয়ে, সেখানে দলাই লামা এক লাইব্রেরির অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সেদিনেই কলকাতায় ফরোয়ার্ড ব্লকের বিশিষ্ট নেতা হেমন্ত বসুকে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করে কিছু দুষ্কৃতী। খবর পাওয়ার পরেই সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় সাংবাদিকদের বললেন, এর পিছনে সিপিএম আছে। সাংবাদিকরা সেই সময়ের সিপিএম রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্তের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে উনি বলেছিলেন, উনি কি কুকুর নাকি যে শুঁকে বলে দিলেন। এই হাজির জবাবি দেখেছি জ্যোতি বসুর মুখে। রাজীব গান্ধী তখন বড্ড নতুন রাজনীতিতে, বাংলার নির্বাচনী প্রচারে এসে বলেছিলেন, অনেক বয়েস হয়েছে, এবার জ্যোতি বসুর অবসর নেওয়া উচিত। জ্যোতি বসু প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, ওনাকে রিটায়ার করিয়ে অবসর নেব। এই জ্যোতি বসুই জনসভাতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, পুলিশকে গুলি ছুড়লে পুলিশ কি রসগোল্লা ছুড়বে? সুব্রত মুখোপাধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে বলেছিলেন, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না। সে ট্যাগলাইন এখনও থেকে গেছে। নন্দীগ্রামে সূর্যোদয়ের পরে এক উদ্ধত মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, দে উইল বি পেইড বাই দেয়ার ওন কয়েন। সেই সময়েই বিনয় কোঙার বলেছিলেন, গ্রাম ঘিরে লাইফ হেল করে ছেড়ে দেব। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবথেকে সরস কথা আমরা শুনতাম সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মুখে এবং আপাতত শোনা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতায়। তিনি অনায়াসে অমিত শা-কে হোঁদল কুতকুত বলে দিতে পারেন, অনায়াসে সিপিএম কংগ্রেস বিজেপিকে জগাই মাধাই গদাই বলে দিতে পারেন। সেই তাঁর মুখে গতকাল এরকম এক মজার কথা শুনলাম, যার রাজনৈতিক তাৎপর্য বিশাল। শুভেন্দু অধিকারী, শান্তনু ঠাকুর বা সুশান্ত মজুমদারেরা দু’দিন আগেই বলেছেন পাঁচ মাসের মধ্যে সরকার ফেলে দেব। গতকাল তার জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আগে বালতি উলটে দেখাক, তারপরে অন্য কথা হবে। সেটাই আমাদের বিষয় আজকে।

বিজেপির রাজ্য নেতাদের ঘিরেছে এক চরম হতাশা, এঁদের বেশিরভাগই আান্দোলন, রাস্তায় নেমে মিছিল মিটিং করে বড় হননি। শুভেন্দু সেসব করেছেন কিন্তু তা ছিল মমতার ছায়ায়। মাথার উপরে ছাতা না থাকায় অসহায়তা ঝরে ঝরে পড়ছে ওঁর প্রতি পদক্ষেপে। দিলীপ ঘোষ ডাকাবুকো, রাস্তায় নামতে পারেন, কিন্তু এ বাংলায় কোন গণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি? বাইকে চড়লে আর গামছা কাঁধে দিলেই যদি রাজনীতি করা যেত তাহলে তো সমস্যা ছিল না। উনি গরম গরম কথা বলতে পারেন, এবং মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন। বাংলার রাজনীতির জন্য এই সামান্য পুঁজি যথেষ্ট নয়। সুকান্ত মজুমদার তো সদ্য রাজনীতিতে নেমেছেন। অন্য কিছু নেতা আছেন যাঁরা ভেবেছিলেন অমিত শাহ গাছ থেকে ফলটা ছিঁড়ে মুখে পুরে দেবেন, ভেবেছিলেন মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। 

আরও পড়ুন: Aajke | রাহুল মমতা রসায়নে সিপিএম, অধীর চৌধুরির অস্বস্তি বাড়ল? 

তারপর ২০১৯, হঠাৎ নির্বাচনী সফলতা পেয়েও মাথা ঘুরেছে, ১৮ট সাংসদ, সেই হিসেবে তখনই ১২১ জন বিধায়ক জেতার কথা, তার উপরে ডজন ডজন মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী মাঠে নেমেছেন, অমিত শাহ রাস্তায়, টালিগঞ্জের চোখে আঙুল দাদা রুদ্রনীল থেকে ঝিঙ্কু মামণিরা স্টেজে এসে পতাকা ধরছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় আর মিডিয়াতে কলরব, গেলেন এবার মমতা গেলেন, সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এবং ফলাফলে সব হুউউউস করে উবে গিয়ে ৭৭-এ খেলা শেষ। কাজেই হতাশা, আরও হতাশা এই পঞ্চায়েতের ফলাফল আসার পরে, খুন জখম, মার পিট ছাপ্পা ভোট যে সব জায়গায় হয়নি তা বিজেপির নেতারা বেশি করে জানেন। জানেন যে আলিপুরদুয়ার থেকে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুরে মানুষ ভোট দেয়নি। পঞ্চায়েতের রেশ থাকলে লোকসভায় আসন পাব তো? বিজেপি নেতারা ভাবছেন। তার ওপরে গোদের ওপরে বিষফোঁড়ার মতো বিরোধী জোট হচ্ছে। সব মিলিয়ে হাত থেকে স্পষ্টতই বেরিয়ে যাচ্ছে যাবতীয় সম্ভাবনা। কাজেই বলে ফেললেন সবথেকে সোজা উপায়ের কথা, ৩৫৫/৩৫৬-র কথা, সরকার ভেঙে দেওয়ার কথা। এক অগণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা বেরিয়ে এল, যে চিন্তা শাহ-মোদি মাথাতেও আনবেন না, ওনারা রাজনীতিবিদ, জানেন কত বড় কেলেঙ্কারি হবে সেটা। কিন্তু এই বালকের দল, শান্তনু, সুকান্ত, শুভেন্দুর দল তো তা বোঝে না, তাঁদের ললিপপ চাই, ৩৫৬ চাই, সরকার উলটে দেব বলেছেন, মমতা তার জবাব দিয়েছেন, বেশ তো একটা বালতি উলটে দেখা। আমরা মানুষকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এক নির্বাচিত সরকারকে ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারা দিয়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলছেন বিজেপি নেতারা, তা কতটা যুক্তিযুক্ত? দিল্লির সরকার যদি নির্বাচিত সরকার ফেলে দেয় তাহলে তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।

এরকম হুমকি আজ নয়, প্রতিটা বিরোধী দল দেয়, এক সহজ পদ্ধতি, রাজ্যপাল বলবেন, আর দিল্লি থেকে জানানো হবে রাজ্যের সরকার ফেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া? আমাদের দেশের ফেডারেল স্ট্রাকচারে এ জিনিস চলতে পারে না, চলা উচিত নয়। বিরাট জনসমর্থন নিয়ে চলতে থাকা এক সরকারকে ফেলে দিলে রাজ্য স্তব্ধ হবে, তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে দেশের রাজনীতিতে, সেটা মোদি–শাহ জানেন আর জানেন বলেই এ কাজে হাত দেবেন না। তাই ওই সুকান্ত, শান্তনু বা কাঁথির খোকাবাবুর আবদারে মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক যা বলা উচিত তাই বলেছেন, একটা বালতি উলটে তো দেখা। 

 

RELATED ARTICLES

Most Popular