Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | রাহুল গান্ধী, দেশ এবং দেশদ্রোহিতা  

Fourth Pillar | রাহুল গান্ধী, দেশ এবং দেশদ্রোহিতা  

Follow Us :

বিরোধীরা সংসদের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি করে, ওয়েলে নেমে আসে, সংসদের কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়, এসব তো নতুন কিছু নয়। রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা বা দিল্লির সংসদ ভবনে এ ছবি খুবই সাধারণ। কিন্তু শাসকদল হইহল্লা করে সংসদ অচল করে দেয়, এমন ছবি প্রায় নেই বললেই চলে, তো সেটাও আমরা মোদি-শাহ জমানায় দেখলাম। বিজেপির থ্রি নট থ্রি ৩০৩ জন সদস্য মিলে চিৎকার চেঁচামেচি করে সংসদ অচল করে দিল। কেন? আদানির চুরি ধরা পড়েছে তাই? জিডিপি নামছে তাই? শেয়ার বাজারের রক্তক্ষরণ থামছে না তাই? না, এগুলো কারণ নয়, বিজেপি কো গুসসা কিঁউ আয়া? রাহুল গান্ধী বিদেশে গিয়ে নাকি দেশকে অপমান করেছেন, এমন কথা বলেছেন যাতে নাকি দেশের মানসম্মান ইজ্জত সব ভেসে যাচ্ছে তাই বিজেপি সাংসদরা রাহুল গান্ধীর বহিষ্কার চাইছেন, দূর করে দাও ব্যাটাকে। আলোচনা করব এ নিয়ে কিন্তু তার আগে একটা কথা তো পরিষ্কার হল যে রাহুল গান্ধী আর পাপ্পু নয়, রাহুল গান্ধীই এখন বিজেপির সমালোচনার বিষয়, রাহুল গান্ধীকে বিজেপি এখন সিরিয়াসলি নিচ্ছে। মঞ্চে উঠে ওহ তো নাদান হ্যায়, পাপ্পু হ্যায় বলার দিন চলে গেছে, এখন মায় উপরাষ্ট্রপতিকেও দাঁত সামলে মাঠে নামতে হচ্ছে রাহুল গান্ধীর বিরোধিতার জন্য। সেদিনের এক নাদান লড়কা, বিলেতে গিয়ে কী বলল, তাই নিয়ে সংসদ উত্তাল। দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের অন্যতম নেতা দেশদ্রোহী, তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হোক দাবি বিজেপির। 
দেড়শো দিন ধরে ৩৫০০ কিলোমিটার হেঁটে, দাড়ি বাড়িয়ে এবং যাত্রার শেষে তা কামিয়ে রাহুল গান্ধী গিয়েছিলেন লন্ডন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি কিছু সেমিনারে ভাষণ দেন, কিছু আলাপ আলোচনা হয়, সেখানেই তিনি নাকি ভারতবর্ষের গণতন্ত্রকে অপমান করেছেন। কে বলছেন এই কথা? বলছেন স্বয়ং নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি। আহা রে, ভারতবর্ষের গণতন্ত্রের জন্য কী অপরিসীম মায়া মমতা ওনার, তাই ভারি দুঃখ পেয়েছেন। এবং স্বাভাবিক, রাজা যত বলে পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ। অনুরাগ ঠাকুর থেকে স্বাধ্বী প্রজ্ঞা থেকে হিজ মাস্টার্স ভয়েজ ধনখড় সাহেব বলছেন ছিঃ বিদেশে গিয়ে দেশের বদনাম করা, দেশ সম্পর্কে, দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো সম্পর্কে খারাপ কথা বলা, ভাবা যায়, এটা তো দেশদ্রোহিতা। এ বিষয়ে চারটে মূল প্রশ্ন বা বিষয় আমার মাথায় আসছে, যার প্রথমটা আগেই বলে ফেলেছি। সেটা হল রাহুল গান্ধী কিন্তু গুরুত্ব পাচ্ছেন, এর আগে যে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারণ করতেন মোদিজি, সেটা পাল্টেছে। কাজেই বলাই যায় যে রাহুল ম্যাচিওর হচ্ছেন, ক্রমশ একজন সিরিয়স পলিটিসিয়ান হিসেবে উঠে আসছেন। দ্বিতীয় বিষয়টা হল, হঠাৎ এই রাহুল প্রসঙ্গ কেন? রাহুল গান্ধীর বিদেশে তাও আবার কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরিজিতে কী বললেন, তা নিয়ে কি দেশের আমজনতার মাথা ঘামানোর কোনও দরকার ছিল? তাহলে হঠাৎ এই তারস্বরে চিৎকার কেন? কর্নাটকে গিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দিল্লিতে সংসদ ভবনে বিজেপি সাংসদরা বলছেন, এমনকী উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে যাঁর দলনিরপেক্ষ অবস্থান হওয়ার কথা সেই উপরাষ্ট্রপতি ধনখড় সাহেবও তীব্র নিন্দায় ফেটে পড়ছেন, এটা কেন? 

আমার কাছে এর কারণ খুব পরিষ্কার, প্রথম কারণ হল আদানি প্রশ্নের থেকে দৃষ্টি ফেরানো, আদানির রক্তক্ষরণ থামেনি, উল্টে শেয়ার বাজারও টলমল করছে। সেরকম একটা অবস্থায় সংসদে সরকারকে প্রশ্ন করছে বিরোধীরা, সাধারণ মানুষের টাকা, যা নাকি এলআইসি বা ব্যাঙ্কে রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন করছে বিরোধীরা। অস্বস্তিকর প্রশ্ন, যে প্রশ্নের জবাব এই সাংসদদের কছে নেই। মোদিজি যে উত্তর এড়িয়ে যেতে চান, সেই প্রশ্ন থেকে চোখ ফেরানোর জন্যই এই রাহুল গান্ধী প্রশ্নের অবতারণা। মোদিজি নিজেই বলছেন, দেখুন দেখুন দেশের অন্যতম বিরোধী নেতা দেশদ্রোহী। তিন নম্বর বিষয় হল কর্নাটকের নির্বাচন। সেখানেও অস্বস্তিতে বিজেপি, উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের আগে সেখানে দীর্ঘতম রেল স্টেশনের উদ্বোধন করেছিলেন মোদিজি। এবারে কর্নাটকের নির্বাচনের আগে দীর্ঘতম রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধনে এলেন, এরকম আরও উদ্বোধন হবে, কিন্তু কেবল তাতে তো হবে না, তাই দুটো জিনিস আরএসএস–বিজেপি বা মোদি-শাহের সরকার কর্নাটকের মানুষের সামনে রাখতে চায়। প্রথমটা হল বিরোধীরা প্রত্যেকে চোর, দেখুন প্রত্যেকের বাড়িতে ইডি, ইনকাম ট্যাক্স রেড চালাচ্ছে। দ্বিতীয়টা হল কংগ্রেসের নেতা দেশদ্রোহী, বিদেশে গিয়ে দেশের নামে বদনাম করে আসছেন, এরাও ওই টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের সদস্য, এরাও আসলে দেশদ্রোহিতায় সামিল। হিন্দুত্ব, দুর্নীতি আর জঙ্গি জাতীয়তাবাদের স্ট্রং ককটেল বানানো হচ্ছে। এই মুহূর্তে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে এই সম্মিলিত হুক্কা হুয়া এই কর্মসূচির এক অংশ মাত্র। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মহার্ঘ ভাতা কতটা মহার্ঘ?   

এর পরের বিষয়টা হল, রাহুল গান্ধী ঠিক কী বলেছেন? রাহুল গান্ধী কেন, যদি একজন আম নাগরিকও বিদেশে গিয়ে বলেন ভারতবর্ষ একটা খারাপ দেশ, ওখানে থাকা যায় না, ওখানে মানুষজন খুব খারাপ, তাহলে তো নিশ্চয়ই অমন লোকের এদেশে না থাকাই ভালো, তাঁকে দেশদ্রোহী বলা হবে কি না জানি না, তবে তাকে অক্ষয় কুমার বলে ডাকাই চলে। সে কথা থাক। আসলে বিজেপির এই প্রচারটা নতুন কিছুও নয়। ওরা ওদের দর্শন অনুযায়ীই দেশ আর সরকারকে এক করে দেখে, এক দেশ, এক নেতা, এক ভাষা, এক ধর্ম। সেই ধর্মের বিরোধিতা মানে দেশের বিরোধিতা, সেই নেতার বিরোধিতা মানেই তা দেশদ্রোহিতা, সরকার আর দেশ তাদের কাছে একই। কাজেই এই সরকারের মাথায় বসে থাকা মানুষটি প্যাথোলজিকাল লায়ার, এই কথা বললে, আরএসএস–বিজেপি তাকে দেশদ্রোহিতা বলেই চিহ্নিত করে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্ম তারিখ দুটো, শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা বললেও কম বলা হবে, সে তথ্য হাস্যকর এবং মিথ্যে। দেশের প্রধানমন্ত্রী অনর্গল মিথ্যে বলেন, জি-মেল আসার আগেই তিনি ছবি অ্যাটাচ করে মেল পাঠিয়েছেন, ছোটবেলায় চা বিক্রি করেছেন, পুকুর থেকে কুমির ধরেছেন ইত্যাদি হাস্যকর কথা বলেছেন এবং সেগুলো তো কেবল দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, এসব তথ্য তো বিদেশেও গেছে। ইউরোপ আমেরিকার মানুষ তো জানেন যে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন মানুষের মাথা কেটে হাতির মাথা জুড়ে দেওয়া যায়। তিনি মনে করেন মেঘের আড়ালে বিমান চালালে রাডারে ধরা পড়ে না, এসব বাচাল কথাবার্তা তো তিনি বলেন, যা দেশের ভেতরে দেশের বাইরের মানুষের কাছেও যথেষ্ট লজ্জার। তো রাহুল গান্ধীও কি এরকম কথাই বলেছেন? না, তিনি সেমিনারে গিয়ে বলেছেন, ভারতবর্ষে এই মুহূর্তে গণতন্ত্র বিপন্ন, তিনি বলেছেন ভারতবর্ষের বিশাল গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য আজ বিপন্ন। আচ্ছা এই কথাটা কি দেশের বিরুদ্ধে? এই কথাটা কি কারওর অজানা? 

মাত্র পরশু উত্তরপ্রদেশে এক সাংবাদিক এক মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন, অপ্রিয় প্রশ্ন, এখন তিনি জেলে। ফ্রিডম ইনডেক্স বলছে আমাদের দেশের গণতন্ত্র আজ বিপন্ন, সাংবাদিকদের সত্যি কথা বলার অবস্থা পর্যন্ত নেই, এ কি কোনও নতুন কথা নাকি? রাহুল গান্ধী বলেছেন আমাদের দেশের বৈষম্যের কথা, এটা কি কোনও নতুন তথ্য যা রাহুল গান্ধীর মাথা থেকে এই সেদিন বের হয়েছে? হাজার একটা সমীক্ষা বলছে বৈষম্য বাড়ছে, দেশের ৫ শতাংশ মানুষের কাছে ৮৫ শতাংশ সম্পদ, দেশের ৩০টা পরিবারের কাছে ৬৭ শতাংশ সম্পদ, এবং দেশের সেই বিত্তশালীরা সরকার এবং মোদিজির প্রিয়পাত্র। তাদের হাতে অনৈতিকভাবে, বেআইনি ভাবে তুলে দেওয়া হচ্ছে দেশের জল, জঙ্গল, পাহাড়, খনি, বন্দর, এয়ারপোর্ট। এটা কি নতুন কথা? কেউ জানে না? তাহলে রাহুল গান্ধী কী বললেন? বিদেশে গিয়েছিলেন কী হিসেবে? তাঁর পরিচয় তিনি ভারতবর্ষের সংসদে বিরোধী দলের অন্যতম নেতা, এই তো। তো তিনি গিয়ে কী বলতেন, নরেন্দ্র মোদি দেশে দুধের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন? দেশে বৈষম্য শেষ? দেশের প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকার কায়েম আছে, মিডিয়া স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক, ধর্মের ভিত্তিতে কোনও ভেদাভেদ নেই? এই সব বলতেন? জরুরি অবস্থার সময়ে ধানবাদে এক নেতা একটা প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্টেশন প্ল্যাটফর্মে বসেছিলেন। তাতে লেখা ছিল, হিটলারশাহি নহিঁ চলি যব, তানাশাহি নহিঁ চলেগি। মানে হল হিটলারের শাসন যখন চলেনি, তখন এই স্বৈরশাসনও টিঁকবে না। তো পুলিশ এসে ধরল, চল ব্যাটা জেলে। সেই নেতা বলেছিলেন, আমি কি কারওর নাম নিয়েছি? আমি কি বলেছি যে ইন্দিরা গান্ধী তানাশাহ, স্বৈরতান্ত্রিক? দারোগা হেসে বলেছিল, এমনিতে পুলিশেরা মাথামোটা হয়, কিন্তু আমি ততটাও মাথামোটা নই যে আপনি কী বলছেন, কাকে বলছেন তা বুঝতে পারব না। চ্যাংদোলা করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জেলে। মানুষ সব জানে, দেশেও জানে, বিদেশেও জানে, রাহুল বললেও জানে, না বললেও জানে। আসলে আদানির বোঝা ক্রমশ মোদিজির ঘাড়ে চাপছে, তিনি মানুষকে স্রেফ বিভ্রান্ত করার জন্যই এই রাহুল আর দেশদ্রোহিতার প্রসঙ্গ তুললেন। সেটা তোলার আগে ভাবুন, গান্ধী মারা গিয়েছিল ওই আরএসএস–হিন্দু মহাসভার প্রতিনিধি গডসের গুলিতে, যে আরএসএস-এর প্রচারক আপনি নিজেই। রাহুলের দিদা, ইন্দিরা গান্ধী মারা গিয়েছিলেন খালিস্তানিদের হাতে, বাবা রাজীব গান্ধী মারা গিয়েছিলেন তামিল টেররিস্টদের হাতে। মোদিজি, আপনার ব্যক্তিগত কথা ছেড়েই দিলাম, আপনার এতবড় সংগঠনে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, ফাঁসিকাঠে চড়েছেন, এক ফোঁটা রক্ত ঝরিয়েছেন এমন একজনকেও দেখাতে পারবেন? দেখাতে হবে না, নামও বলতে পারবেন? পারবেন না। তাই দেশ আর দেশপ্রেম নিয়ে বাওয়ালি বন্ধ করুন।   

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
TMC | 'সনাতন ধর্ম বিরোধী তৃণমূল', কমিশনে অভিযোগ দায়ের 'দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ'-এর
02:12
Video thumbnail
বাংলার ৪২ | তৃতীয়দফা নির্বাচনে চার কেন্দ্রে কোন দল এগিয়ে?
10:18
Video thumbnail
Suvendu-Abhijit | তমলুক থানায় শুভেন্দু-অভিজিতের নামে FIR করলেন অনশনরত শিক্ষকরা
02:48
Video thumbnail
Weather | গরমেও রেহাই নেই তাপপ্রবাহ থেকে, কোথাও জল নেই, কোথাও আবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট
01:41
Video thumbnail
Purulia | মধ্যগগনে ভোট, চড়ছে উত্তেজনা, পুরুলিয়ায় পতাকা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি তরজা
03:31
Video thumbnail
TMC | 'তৃণমূল আঘাত পেলে ৭ তারিখের পর দেখে নেব', হুমকির সুর জলঙ্গির তৃণমূল সভাপতির মুখে
01:53
Video thumbnail
Weather | তাপপ্রবাহের সতর্কতার মাঝে বৃষ্টির সম্ভাবনা, রবিবার রাজ্যের সর্বত্র বৃষ্টির সম্ভাবনা
02:28
Video thumbnail
পলিট্রিক্সের গ্রিনরুম | বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ত্রয়ীর দাপটের কাহিনি
51:38
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধের দামামা | সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিজেপিকে আক্রমন অভিষেকের, কী বললেন সেনাপতি
28:56
Video thumbnail
ISL 2024 | ত্রিমুকুট জয়ের স্বপ্ন অধরাই! আইএসএল চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি
04:30