তিলজলা: তিলজলা (Tiljala) এলাকায় নাবালিকা মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ-জনতা ধুন্ধুমার। রাস্তা অবরোধের পর এবার রেল অবরোধ বালিগঞ্জ স্টেশনে (Ballygunge Station)। বিক্ষোভকারীদের দাবি, রবিবার রাতে তিলজলা থানা (Tiljala Police Station) এলাকায় ভাঙচুরের অভিযোগে আটক তিন স্থানীয়কে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রেফতার হওয়া তিন জনের মধ্যে এক জন মহিলাও রয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই স্থানীয় তিনজনকে ছেড়ে না দেওয়া হবে, ততক্ষণ এই অবরোধ চলবে বলেও হুমকিও দেয় বিক্ষোভকারীরা। এদিন সকাল থেকেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় তিলজলা এলাকা। পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে ব্যাপক ইটবৃষ্টি। এমনকী পুলিশের গাড়িতে আগুনও লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
সোমবার সকালে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখান তিলজলার স্থানীয় বাসিন্দারা। পিকনিক গার্ডেন-হাওড়া রুটের একটি বাস আটকে সেটির ছাদে চেপে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। বুকে পোস্টার লাগিয়ে এবং চিৎকার করে স্লোগান দিতেও দেখা যায় তাঁদের। এরপরই বালীগঞ্জ স্টেশনে রেল অবরোধ করে। এর জেরে দক্ষিণ শাখার রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে দীর্ঘক্ষণ ধরে। সপ্তাহের প্রথমদিনেই চরম হয়রানির শিকার যাত্রীরা। ঘটনার প্রায় ১২ ঘণ্টা পার, তবুও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ তুলে ক্রমশই জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। এদিন উত্তেজিত জনতা দমকলের গাড়িকে লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়তে থাকে। একটি বাইকেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব়্যাফ নামানো হয়েছে এলাকায়।
আরও পড়ুন: Tilajala Incident | রণক্ষেত্র তিলজলা, পুলিশের গাড়িতে আগুন স্থানীয়দের
প্রসঙ্গত, তিলজলায় (Tiljala) শিশুকন্যাকে (Minor Girl) অপহরণ করে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগে রবিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় অলোক কুমার নামে এক যুবককে। যদিও এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রবিবার সকাল থেকে বারবার বলা সত্বেও মাত্র দু’জন পুলিশ পাঠানো হয় ওই নাবালিকার খোঁজে। কিন্তু তাতেও রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই নাবালিকাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপরই গতকাল রাত থেকেই উত্তাল ওঠে তিলজলা এলাকা। তিলজলা থানার সামনেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকে এলাকার বাসিন্দারা। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে দু’জন মহিলাকে আটক করে পুলিশ। পাশাপাশি ওই এলাকায় ২০০ জন পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, একটি শিশু কন্যাকে খুঁজতে মাত্র দু’জন পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। আর বিক্ষোভ হটাতে ২০০ জন পুলিশ। সোমবার সকালেও উত্তাল হয়ে ওঠে তিলজলা এলাকা। দুজন মহিলাকে আটক করার প্রতিবাদে দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করে রাখা হয়েছে বন্ডেল রোড। এখনও পর্যন্ত চলছে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় ওই অভিযুক্ত দাবি করেছে, তাঁর স্ত্রীর সন্তান হচ্ছিল না। গর্ভে সন্তান ধারণ করলেও, বার বার গর্ভপাত হচ্ছিল। তাই তান্ত্রিকের পরামর্শ মতো একাজ করেছে। তান্ত্রিক বিধান দিয়েছিল, একটি শিশু কন্যার বলি দিতে হবে।
যদিও এই দাবি মানতে নারাজ এলাকার লোকজনেরা। তাঁদের দাবি, পুলিশকে মিস গাইড করতে একথা বলছে অলোক। এলাকা বাসিন্দারা জানান, অভিযুক্তের স্ত্রী গর্ভাবস্থায় ছিলেন। তাহলে এটা গল্প ছাড়া কিছু না। তিন মাস হল তিলজলার এলাকার ওই বাড়িতে ভাড়া আসেন। অলোকের স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ায় কিছুদিন এখানে থেকে বিহারে চলে যান।
তাঁদের অভিযোগ, ওই শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করার জন্য অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা করেছিল আলোক। গতকাল সকাল ৭টার সময় শিশুটির মা ২০০ টাকা দিয়ে দুধ আনতে পাঠায়। তারপর থেকে ওই শিশুকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ। সেখানে দেখা যায়, শিশুটি বাড়ির নীচ থেকে উপরের দিকে তাকিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলছে। তারপরেই ভিতরে ঢুকে যায় শিশুটি। আর বের হয়নি শিশুটি। তার মানে বাড়ির মধ্যেই সে ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের।