বিষ্ণুপুর: আজ দীপাবলি। দীপান্বিতা অমাবস্যায় শক্তি রূপে কালী আরাধনায় মেতেছে সারা রাজ্য। প্রতিটি শক্তিপীঠে নেমেছে মানুষের ঢল। কিন্তু, জানেন কী, মা কালীর পুজোর দিনেই হয় মা দুর্গার বোধন! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে এই দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে কালীপুজো নয়, ১৫০ বছরের প্রাচীন রীতি মেনে শুরু হয় দুর্গাপুজা। এই পুজো দেখতে শুধু রক্ষিত পরিবারের আত্মীয় স্বজনেরাই নয়, ভিড় জমান বিষ্ণুপুর শহরের মানুষ।
বিষ্ণুপুর শহরের পাটরাপাড়া এলাকার রক্ষিত পরিবার এক সময় বেশ অভিজাত পরিবার হিসাবেই পরিচিত ছিল। পারিবারিক পেশা ছিল রেশম গুটি ও তসরের ব্যবসা। কথিত আছে, আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে এই রক্ষিত পরিবারের কোনও এক পূর্বপুরুষ রেশম গুটির ব্যবসার কাজে পুরুলিয়ায় যান। সেখানে ব্যবসার কাজ সেরে ফেরার পথে ক্লান্ত হয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন রাস্তার ধারে থাকা গাছের ছায়ায়। ঘুমন্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তি দেবী দুর্গার স্বপ্নে দেখেন। দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন দ্বীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে তাঁর পুজো করার। এরপর সেই ব্যাক্তি বিষ্ণুপুরের বাড়িতে ফিরে এলে দেখেন তাঁদের পারিবারিক তাঁতশালে রাখা রয়েছে দেবী দুর্গার প্রতিমা। তারপর থেকেই দ্বীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে তাঁতশালে পাওয়া প্রতিমার পুজো হয়। দীর্ঘ দেড়শো বছর পরেও রক্ষিত পরিবারের সেই ধারা আজও বহমান। আজও সারা রাজ্য যখন কালীপুজোর তোড়জোড় শুরু করে, তখন রক্ষিত পরিবারের সদস্যেরা ব্যস্ত থাকেন দুর্গাপুজার আয়োজনে।
আরও পড়ুন: জানেন, কেন প্রতি বছর দশমীর ঠিক ২১ দিন পরেই দীপাবলি পালিত হয়
দ্বীপান্বিতা অমাবস্যায় সপ্তমী পুজোর মধ্য দিয়ে সূচনা হয় দুর্গাপুজোর। এর পর তিথি নক্ষত্র মেনে অষ্টমী, নবমী ও বিজয়ার পুজো হয়। ভাইফোটাঁর পর বৃহস্পতি, শনি ও রবিবার বাদে দেবীর বিসর্জন করা হয় ঘটা করে। রক্ষিত পরিবারের দুর্গা প্রতিমা একটু আলাদা। এখানে দেবী সিংহবাহিনী নন, দেবীকে শিবদুর্গা রূপকেই এখানে পুজো করা হয়। শিব ছাড়াও প্রতিমায় থাকে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী এবং সরস্বতী। যেহেতু তিনি কালী পুজোর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন, সেকারণে কালী পুজোর দিন থেকেই চার দিনের এই দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। শুরুর দিন চাল কুমড়ো বলি প্রথাও চালু এখানে।
দেখুন আরও অন্য খবর: