আচমকা ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়ির নিওন আলোয় দেখলেন রাত তিনটে! ঘুমটা এমন ভাবে ভাঙল যে সামান্য অলসভাব টুকুও নেই। উল্টে একটা অস্থির ভাব। তাই আর শুয়ে থাকতে পারলেন না। বাধ্য হয়েই উঠে পড়লেন। জল খেয়ে ফের ঘুমোনোর চেষ্টা করতেই যেন হুড়মুড়িয়ে চলে এল বাজে চিন্তা ভাবনাগুলো। তাই আর ঘুমোনোর উপায় নেই। বাধ্যে হয়ে জেগে বসে থাকতে বাধ্য হলেন।
কোভিডকালের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় এই সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেছেন অনেকেই। স্বাভাবিক ভাবেই যে হারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ তাতে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আতঙ্কিত সবাই। এই অবস্থায় উদ্বেগ, উত্তেজনা চিন্তা, আগের কোভিড সংমক্রমণের ভয়াবহতা বার বার মনে পড়ে যেতে পারে। তবে ভয় পাবেন না, জানবেন এ ধরনের অভিজ্ঞতা আপনার একার নয়। স্ট্রেস, টেনসন, উদ্বিগ্ন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চাপে বিশেষ করে এই কোভিডকালে এ ধরনের সমস্যা আরও বেড়েছে । সম্পর্কের টানাপড়েন, অফিসের হেনস্থা, বসের সঙ্গে মনোমালিন্য, টক্সিক ওয়ার্ক কালচার এ রকম অনেক কারণেই মন খারাপ হয়ে যেতে পারে।
তবে এই খারাপ লাগা বা নেতিবাচক চিন্তাভাবনার ভিড় মনে জমতে দেওয়া যাবে না। জীবন পরিবর্তনশীল তাই সবরকম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই কাজগুলো করুন।
১. অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন হলে জীবন নিয়ন্ত্রণে আনুন। প্রয়োজনে নিত্য দিনের কিছু অভ্যাসের বদল করতে পারেন। এক দিনে সব কিছু বদলানো সহজ নয় তাই বেবি স্টেপস নিন, ধাপে ধাপে বদল আনুন। যেমন প্রত্যেক সকালে ১০ মিনিটের জন্য হাঁটতে বেরোন। কিংবা ধুমপান করলে সেই অভ্যেস বদলানোর চেষ্টা করুন।
২. চিন্তাভাবনা গুলোকে সাজিয়ে নিন। চাইলে লিখতে পারেন। এর খুবই সদর্থক প্রভাব পড়ে। তবে লিখতে না চাইলে মনে মনে বিষয়গুলো গুছিয়ে নিন। নিজের সঙ্গে কথা বলুন, কোন কোন কারণে আপনার মধ্যে উদ্বিগ্ন বা অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে সেই নিয়ে কথা বলুন। সমস্যার সমাধান খুঁজতে তাড়াহুড়ো করবেন না বরং আগে চেষ্টা করেন এই নিয়ে আপনার মনে কোনও নেতিবাচক প্রভাব যাতে না পড়ে।
৩. খুশি থাকুন। এটা বলা সহজ ঠিকই কিন্তু কথায় আছে খুশি থাকতে জানতে হয়। তাই ছোট ছোট ভাললাগাগুলোকে গুরুত্ব দিন। কাছে পীঠে ঘুরতে যান, রান্না করতে ভাল লাগলে রান্না করুন। রূপচর্চা করতে পারেন, আঁকতে পারেন, চাইলে পছন্দের ওয়েব সিরিজ ও দেখতে পারেন তবে এক্ষেত্রে সারাদিন রাত এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাটাবেন না। বরং পারলে প্রকৃতির সঙ্গে বেশি সময় কাটান।
৪. শুধু শারীরিক ভাবে ক্লান্তি থাকলেই নয় মানসিক ক্লান্তির সহজ নিরাময় করতে পারে ভাল ঘুম। তাই দিনে ৮ ঘন্টা ঘুমোনোর চেষ্টা করুন। ঘুমোতে যাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন। ওঠার সময়টাও ঠিক করে নিন। সপ্তাহন্তে ঘুমোতে বা ঘুম থেকে উঠতে অল্প সময়ের এদিক ও ওদিক করতে পারেন তবে বাদ বাকি দিন গুলো রুটিন মাফিক ঘুমোলে ভাল ফল হবে।
৫. নেতিবাচক চিন্তাভাবনা একটি আবেগ মাত্র তাই আবেগতাড়িত হবেন না। জীবেন উঠা পড়া লেগেই থাকে তাই দিনের শেষ রাতের অন্ধকার যেমন থাকে তেমনি রাতের আধারকে একেবারে মুছে দেয় দিনের আলো। তাই কোন দুখ বা অপ্রিতিকর পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়বেন না। বরং এই সময় মন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিপ ব্রিদিং, মেডিটেশন বা যোগা করতে পারেন।
৬. মাঝে মধ্যেই ডিজিটাল ডিটক্সের পথে হাঁটুন সোশাল মিডিয়া থেকে কিছুক্ষণ নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। কোভিড ও সংক্রমণ নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় যে কোনও তথ্যের ওপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করবেন না। যাচাই করে নিন। প্রত্যেকবারই সংক্রমণের বাড়াবাড়ি হলেই কোভিড নিয়ে ভুল তথ্যে ভরে ওঠে সোশ্যাল মাধ্যমগুলি।
(ছবি সৌজন্য: Pixabay)