কলকাতা:
‘মা শুনে কয় হেসে কেঁদে
খোকারে তার বুক বেঁধে
ইচ্ছে হয়ে ছিলি মনের মাঝারে’
শুধু গর্ভের সন্তানকে মনের মাঝারে ইচ্ছে হয়ে থাকে? যাকে জন্ম দেননি কিন্তু যে ছিল মনের মাঝারে সেই দত্তক সন্তানদের পরিচয় পত্র নিয়ে মহা ফাঁপড়ে অভিভাবকরা।
২০১০ সালের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের এক দম্পতি৷ চাকুরিরত ওই দম্পতির সন্তান না হওয়ায় সামাজিক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়৷ সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পেতে এবং সন্তান স্নেহের আশায় সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা সন্তান দত্তক নেবেন৷
আরও পড়ুন- কানে হেডফোন ফেটে মৃত্যু যুবকের
২০১৬ সালের আইন মেন সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন জানান ওই দম্পতি৷ নিয়ম মেনে পরিবারের সমস্ত কিছু পরিস্থিতি বিচার করে দত্তক নেওয়ার অনুমোদন পান তাঁরা৷ ১২ এপ্রিল ২০১৬ সালে লেকটাউন থানার মিলেনিয়াম ওল্ডেজ হোম এবং রিহ্যাব সেন্টারে সঙ্গে বারাসাত আদালতে তাঁরা চুক্তিবদ্ধ হন৷ চুক্তিপত্র অনুযায়ী এক কন্যাসন্তানের দত্তক নেন তাঁরা৷ ওই চুক্তিপত্রে মিলেনিয়াম ওল্ডেজ হোম এবং রিহ্যাব সেন্টারের উল্লেখ করেছিল, কন্যাসন্তানের জন্ম ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর৷ দত্তক নেওয়ার পর ওই কন্যার নাম রাখা ‘সানা’ কাল্পনিক নাম৷
আরও পড়ুন- কাঁথি ফেরার পথে দুর্ঘটনা, ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় আহত দিব্যেন্দু
ইতিমধ্যে ‘সানা’ সমাজের বুকে পিতা মাতার পরিচয়ে পরিবারের সকল সদস্যের আদরে লালন পালন হতে থাকে৷ এরই মাঝে ছোট্ট সানার জন্মের শংসাপত্র নিয়ে পরিবারের আনন্দের অনিশ্চয়তার ঘনঘটা৷ কারণ, দম্পতির আইনজীবী রাজীব লোচন চক্রবর্তী জানান, মিলেনিয়াম ওল্ডেজ হোম এবং রিহাব সেন্টারের কর্ণধারদের অবৈধ কাজের জন্য গ্রেফতার করা হয়৷ এবং ওই সংস্থাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়৷ ইতিমধ্যে ওই হোম আড়াইশো শিশুসন্তানকে দত্তক দিয়েছে বলে জানান আইনজীবী রাজীব লোচন৷ সেই সব দত্তক নেওয়া সন্তানের অভিভাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত৷
আরও পড়ুন- ত্রিপুরায় তৃণমূলের উপর আক্রমণের প্রতিবাদে কোচবিহার জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ
কারণ, এঁরা বেশির ভাগই দত্তক নেওয়া সন্তানের শংসাপত্র চেয়ে পান নি৷ এরফলে তাঁরা উদ্বিগ্ন৷ তাঁদের আশঙ্কা তিল তিল স্নেহ মমতা দিয়ে বড় করে তোলা শিশুরা শুধুমাত্র পরিচয় পত্রের তাঁদের কোল থেকে কেড়ে নেওয়া হবে না তো? এই পরিস্থিতিতে মধ্যমগ্রামের ওই দম্পত্তি দিল্লির সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি, ডেপুটি রেজিস্ট্রার জেনারেল, ডিরেক্টরেট অব চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ট্রাফিকিং কলকাতা, স্টেট ব্যুরো অব হেলথ ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ডেপুটি রেজিস্ট্রার অব বার্থ এন্ড ডেট ডিরেক্টরের কাছে আবেদন জানান। কিন্তু, উত্তর ২৪ পরগনা জেলাশাসক সহ সমস্ত বিভাগ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কোনও ভাবেই দত্তক নেওয়া সন্তানের জন্ম শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব নয়৷ কারণ, উপযুক্ত জন্মের তথ্য তাঁদের কারও কাছে নেই৷ পরে বেগতিক বুঝে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ওই দম্পতি৷ আইনজীবী রাজীব লোচন চক্রবর্তী আদালতে বলেন, এই দম্পতিদের কোনও অপরাধ নেই৷ তাঁরা আইন মেনে সন্তানের দত্তক নিয়েছেন৷ এবং তাঁরা স্নেহ এবং মমতা দিয়ে তিল তিল করে সেই সন্তানকে মানুষ করেছেন৷ আজ শুধুমাত্র পরিচয় অভাবেই কি সেই সন্তান পিতৃ-মাতৃদের স্নেহ থেকে বঞ্চিত হবে? এরপরই, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ২০২১ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি শিশু সুরক্ষা দফতরকে নির্দেশ দেন যে, এক মাসের মধ্যেই শিশুর বর্তমান অবস্থান বিবেচনা করে সন্তুষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট পুরসভা জন্মের শংসাপত্রর জন্য সুপারিশ করবে৷ ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট এই মর্মে রিপোর্ট পেশ করেছে৷ শুধুমাত্র মিম্ন আদালতের অনুমোদনের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে সানার ভবিষ্যৎ পরিচয়৷
মিলেনিয়াম ওল্ডেজ হোম থেকে নেওয়া শিশুদের বিগত ছয় বছর ধরে নেওয়া মায়া-মমতা দিয়ে তিল তিল করে বড় করে তুলেছেন অভিাবকেরা৷ আজ কিছু স্বার্থান্বেষী ক্রিমিন্যালদের জন্য বঞ্চিত হচ্ছে ওই শিশুরা৷ এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের৷