কলকাতা: বকেয়া ডিএ-র (DA) দাবিতে এবার অভিনব প্রতিবাদ মুর্শিদাবাদের একটি প্রাথমিক স্কুলে। সেই স্কুলের একজন শিক্ষক গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে শীর্ষাসন করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেন। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের (Sangrami Joutho Mancha) ডাকে ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি দুদিনের কর্মবিরতি চলছে রাজ্যের সমস্ত সরকারি অফিস-আদালত, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনে সবথেকে বেশি প্রভাব পড়ে কলকাতা হাইকোর্টে। সকাল থেকে উচ্চ আদালতের সরকারি কর্মীরা কলম বনধ পালন করায় শুনানি প্রক্রিয়া প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। বিচারপতিরা নিজেরাই কাজ চালানোর চেষ্টা করলেও, শেষমেশ তাঁরাও এজলাস ছেড়ে চলে যান।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee Live: পাহাড় বনধে রেয়াত নয়, প্রশাসনকে নির্দেশ মমতার
অন্যদিকে, বকেয়া ডিএ-র (DA) দাবিতে কর্মবিরতির (Pen Down) মধ্যেই তৃণমূল শিক্ষক সংগঠন থেকে গণইস্তফা (Resignation) স্কুলের শিক্ষকদের (Teacher)। বকেয়া ডিএ এবং স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি-দাওয়া নিয়ে তৃণমূল শিক্ষক সংগঠন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি বলে ওই শিক্ষকদের অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে লিখিত চিঠি দিয়ে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ছাড়লেন বাঁকুড়ার (Bankura) শালডিহা হাইস্কুলের ৩২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের (WBTSTA) নেতৃত্বের দাবি, ওই শিক্ষকরা তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সদস্য হলেও তাঁরা শিক্ষা সেল থেকে পদত্যাগ করেছেন।
কর্মবিরতিতে সারা রাজ্যের মতো পশ্চিম মেদিনীপুরের উজান হরিপদ হাইস্কুলেও আজ কর্মবিরতি পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় স্টাফ কাউন্সিল। কিন্তু, দেখা যায় তৃণমূলের প্রায় ৮-১০ জন তৃণমূলের লোকজন এসে প্রধান শিক্ষক ও সমস্ত শিক্ষককে ধমক দেয় এবং হেনস্তা করে। তারা বলে যায়, দেখে নেব হেডমাস্টার মশাই সব টিচারকে আমরা দেখে নেব এবং তারা বাইরে গিয়ে জমায়েত করে গেটের তালা লাগিয়ে দেয়।
বহরমপুর আদালতে মঙ্গলবার সরকারি কর্মীরা কাজ বন্ধ করে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমা আদালতে দুষ্কৃতীদের লেলিয়ে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছে। সেই ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছেন তাঁরা। বহরমপুর আদালতের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন আদালতের সরকারি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান।
বারুইপুর মহকুমা আদালতেও এদিন কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ মিছিল হয়। ভাতার ব্লক অফিসের কর্মচারীরা আজ কর্মবিরতিতে শামিল হন। ব্লক অফিসের সমস্ত কর্মচারী কার্যালয়ের সামনে পেন ডাউন কর্মসূচিতে শামিল হলেন। ভাতারের বিভিন্ন গ্রাম থেকে যে সমস্ত মানুষ ব্লক অফিসে আসেন, তাঁদের ফিরে যেতে হয়।
ঝাড়গ্রাম সিএমওএইচ অফিসে দিনভর চলে কর্মবিরতি। মঙ্গলবার বেলা দশটা থেকে ঝাড়গ্রাম সিএমওএইচ অফিসে কর্মবিরতি শুরু করেন ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। যার ফলে ঝাড়গ্রাম সিএমওএইচ অফিসে কাজকর্ম একেবারে স্তব্ধ হয়ে পড়ে।
ডিএ-র দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের কর্মবিরতির প্রভাব পড়ল পুরুলিয়ার সরকারি দফতর ও আদালতে। টানা দুদিন কাজ না হওয়ায় ইতিমধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে জেলায়। আদালতে মামলার পাহাড় আরও উঁচু হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে পুরুলিয়া জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনেরও। উদ্বেগ প্রকাশ করলেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ মহাপাত্রও।
মেদিনীপুর শহরে জেলাশাসকের দফতর চত্বরে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে ডিএ ইস্যুতে প্রতিবাদী মিছিল বের করা হয়েছিল দুপুরে। তারই পাল্টা সেখানেই তৃণমূলের কর্মচারী ফেডারেশনের পক্ষ থেকে তিন শতাংশ ডিএ-র ইস্যুতে ধন্যবাদ জ্ঞাপক মিছিল বের করে। জেলাশাসকের দফতরের সামনে জড়ো হলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে মঙ্গলবার দুপুরে। শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি, লাথালাথি। সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। যৌথ মঞ্চের তরফে গঙ্গাধর বর্মন বলেন, ওরা গায়ের জোরে মিছিল করে এসে আমাদের উপর হামলা করেছে। আমাদের মহিলা কর্মীদের উপর হামলা হয়েছে। লাথি মেরেছে ওই কর্মচারীরা। ফেডারেশনের জেলা সভাপতি শীতল প্রসাদবিদ বলেন, যারা বাম সংগঠনের পক্ষ থেকে এসেছেন তারা কেউই এই কালেক্টরেটের কর্মী নয়। এরা সকলেই দুর্বৃত্ত। ওরাই হামলা চালিয়েছে।