Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: বুলডোজার চলছে, চলবে

চতুর্থ স্তম্ভ: বুলডোজার চলছে, চলবে

Follow Us :

বুলডোজার চলছে, চলবে। গত মঙ্গলবার আমরা চতুর্থ স্তম্ভে বলেছিলাম, মধ্যপ্রদেশের খারগাঁও এর কথা৷ বলেছিলাম যে কিভাবে সংবিধান, মানবাধিকার, সাধারণ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, গরিব, জুগগি ঝুপড়িতে থাকা মানুষজন, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ঘর দোকানের ওপর দিয়ে বুলডোজার চালানো হচ্ছে৷ কেবল তাই নয় এই বুলডোজার হয়ে উঠছে এক গর্বিত শব্দ৷ এ সব কথা লিখেছিলাম৷ লিখেছিলাম, ২৬ টা মুসলমানের ঘর পোড়ানো হয়৷ ১২ টা গাড়ি, পাঁচটা দোকান ও পুড়ে ছাই। নবাব খান, মঞ্জু বাই, মঞ্জুলা বাই ইত্যাদিদের বয়ানও এক৷ কিন্তু সে সব এফআইআর দায়ের করা হয়নি৷ এর মধ্যে মঞ্জুলা বাই-এর ঘর এই নিয়ে তিনবার পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হল৷ প্রথমবার পুড়েছিল ১৯৯২ এ৷ বাবরি মসজিদ দাঙ্গার সময়ে। ঘটনার পরেই রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী, নরোত্তম মিশ্রা বললেন, জিস ঘর সে পত্থর আয়েঁ হ্যাঁয়, উস ঘরো কো হি পত্থরো কা ঢের বনায়েঙ্গে, যেমন কথা তেমন কাজ৷ দু’দিনের মধ্যে ৩২ টা ঘর আর ১৬ টা দোকান, যার প্রত্যেকটাই মুসলমান মানুষজনের, সেগুলোকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে সমান করে দেওয়া হল৷ বলা হল এই সব কটা ঘর আর দোকান ছিল বেআইনি৷ না সেগুলো বেআইনি বলে কোনও আগাম নোটিস দেওয়া হয়নি৷ জেলাশাসক জানালেন, উই হ্যাভ এ জিরো টলারেন্স পলিসি টুওয়ার্ডস দ্য ক্রিমিনাল, পিরিয়ড। এরপর থেকে শিবরাজ সিং চৌহান, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, নতুন বুলডোজার বাবা হয়ে উঠেছেন। আশা করাই যায়, খুব শিগগিরই দেশের সমস্ত বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা, হয়ে উঠবেন বুলডোজার বাবা, অপরাধের শাস্তি আর আদালতে হবে না, অপরাধের বিচার বিচারকরা করবেন না, অপরাধে অভিযুক্তদের কথা শোনার প্রশ্নই নেই, চালাও বুলডোজার।

মুসলমানরা, সংখ্যালঘুরা, বিরোধীরা, সেকুলার মানুষজন সাবধান, বুলডোজার আসছে৷ এই আবহ তৈরি হচ্ছে, তৈরি হয়েছে, ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যে রাজ্যে। সংবিধান অটুট আছে, বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের জন্মদিনে, তাঁর গলায় মালা পরানো হবে, দেশের প্রধান সেবক টুইট করবেন, भारत रत्न डॉ. बाबासाहेब अम्बेडकर को उनकी जयंती पर शत-शत नमन। समाज के वंचित वर्गों को मुख्यधारा में लाने के लिए किया गया, उनका संघर्ष हर पीढ़ी के लिए एक मिसाल बना रहेगा। ব্যস, হয়ে গেল। ওনার নেতৃত্বে তৈরি দেশের সংবিধান পড়ে থাকবে অবহেলায়৷ বুলডোজার বাবা জন্ম নেবে রাজ্যে রাজ্যে৷ মানুষের মানবাধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, সংখ্যালঘুদের জীবনের অধিকার, ন্যায় বিচার, ধর্মনিরপেক্ষতা এ সব শব্দের কোনও মানেই থাকবে না৷

সংবিধান ক্রমশ অর্থহীন হয়ে উঠছে৷ আমাদের চোখের সামনে, রোজ সংবিধানের ওপর দিয়েই চলছে বুলডোজার। রাত ১০ টায়, রাত পোহাতেই সেই বুলডোজার হাজির, দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরায়। ক’দিন আগে সেখানে দাঙ্গা হয়েছে, বলা ভালো দাঙ্গা করানো হয়েছে। তার উত্তেজনা পুরোপুরি শান্ত হবার আগেই বুলডোজার এল৷ এরকমটা হবে মনে করেছিলেন বহু মানুষ, তাদের কিছু প্রতিনিধি সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন৷ প্রশান্ত ভূষন, দুষ্যন্ত দবে ছিলেন৷ আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছিল এরকম কোনও ডিমলিশন, ভাঙচুর করা যাবে না৷ বুলডোজারের প্রশ্নই নেই৷ তবুও সাত সকালে ১৯ টা বুলডোজার, দিল্লি মিউনিসিপালিটির ৯ টা টিম, অসংখ্য পুলিশ হাজির হল জাহাঙ্গিরপুরায়৷ একের পর এক বাড়ি, দোকান, জুগগি ঝুপড়ি, ঠেলা দোকান ভাঙা শুরু হয়ে গেল৷

সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারের কী হল? দিল্লি মিউনিসিপালিটির কর্মকর্তারা, পুলিশ জানালো তাদের কাছে সেই আদেশের কোনও নির্দেশ পৌঁছয়নি৷ অতএব মানুষ চোখের সামনে অসহায় হয়ে দেখলো, কারও ৩০, কারও ৪০, কারও তারও পুরনো দোকান ভেঙে চুরমার৷ সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ৷ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের টিনের চাল৷ দোকানের জিনিস৷ কেন? কেন না মোদিজির ডিজিটাল যুগে দিল্লি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দিল্লি মিউনিসিপালিটি, দিল্লি পুলিশের কাছে পৌঁছয়নি। সেই নির্দেশের কথা সবাই জানে, মিডিয়া জানে, মানুষ জানে, জানে তো কি? লিখিত অর্ডার আসেনি, আসার আগেই ভাঙচুর শুরু হয়ে গেল।

উলটে গোদি মিডিয়াতে কি নাচন কোঁদন, এত্তদিনে জাহাঙ্গিরপুরা দিয়ে ৮০ কিলোমিটার স্পিডে বাইক, মোটর কার চলবে৷ দিল্লি সাফ হবে। মনে পড়তে বাধ্য জরুরি অবস্থার সময়ে সঞ্জয় গান্ধীর তুর্কমান গেটের সামনে বুলডোজার চালানোর ঘটনা৷ সে দিন বিরোধিতা করছিলেন, তখনও জেলের বাইরে থাকা সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি, আজ দুজনেই নেই। সে দিন তাঁদের যুক্তি ছিল, বেআইনি কিনা সেটা পরের কথা, এত মানুষের মাথার ওপর ছাদ, তাদের রোজগারের সামান্য আয়োজন কেড়ে, দিল্লি কে সাফ সুতরো করে তোলা এক অমানবিক কাজ, এদিন দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরায় আম আদমির অদজিকারের কথা বলা, আম আদমি পার্টির কোনও নেতাকে দেখা যায়নি৷ দেখা যায়নি কংগ্রেসের কোনও নেতাকে৷ দিল্লি এমপি বা এমএলএ নির্বাচন তো বাদই দিন৷ মিউনিসিপালিটির ভোটে নোটার চেয়েও কম ভোট পাওয়া, সিপিআইএম দলের পলিটব্যুরো নেতাকে দেখা গেল, বুক চিতিয়ে বুলডোজারের সামনে দাঁড়াতে৷ হাতে ছিল সুপ্রিম কোর্টের আদেশের প্রতিলিপি, বুলডোজার থামে।

কিন্তু তার আগেই ভেঙে গিয়েছে অনেক ঘরবাড়ি, দোকান, তুলে নেওয়া হয়েছে ঠেলা দোকান৷ গতকাল পর্যন্ত সেই দোকান থেকে মাসে ১০/১৫/১৮ হাজার টাকা আয় করা মানুষগুলো আজ রাস্তায়। আর আম আদমি পার্টির ভূমিকা? নক্কারজনক বললেও কম বলা হয়৷ যে দিল্লিতে ৭০ জনের মধ্যে আম আদমি পার্টির ৬৩ জন এমএলএ, তাদের একজনও রাস্তায় নেই৷ বুলডোজারের সামনে দাঁড়ানো তো দুরের কথা, এনাদের আম আদমির কথা বলা যে কেবল ফাঁকা আওয়াজ তা আবার প্রমাণিত৷

এখানেই শেষ নয়, আর এক কানা ছেলের নাম পদ্মলোচনকে পাওয়া গেল৷ আতিশি মারলেনা, বাবা মা কি কুক্ষণে কার্ল মার্ক্স আর লেনিনের নাম মিলিয়ে, মেয়ের নাম রেখেছিলেন মারলেনা৷ তিনি অক্সফোর্ড থেকে পড়াশুনো করে এসেছেন৷ আপাতত দিল্লির বিধায়ক৷ রাস্তাতে তো নামলেনই না, উলটে বললেন বিজেপি, বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে বিভিন্ন জায়গায় বসিয়ে দিয়ে, তাদেরকে দিয়ে দাঙ্গা করাচ্ছে, ভাবা যায়? একটা তথ্যও আছে তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে৷ অথচ তিনি যা বললেন, তার ফল কত সুদূরপ্রসারী হতে পারে তা বলার আগে একবারও ভেবেছেন, এই মারলেনা?

আগামীকাল, ২২ এপ্রিল, ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের জন্মদিন, গান আছে, দেশ শুদ্ধু লোক যতদিন খাননি কমলা লেবু, খাননি লেনিন, সেই নেতার নামের সঙ্গে নাম তো জুড়েছে, কিন্তু এতটা অসংবেদনশীল, এতটা অশিক্ষিত বক্তব্য তো বিজেপির হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে দেখা যায়, তিনি বলার পরেই দেখা গেল আরেক তরুণ আপ নেতা রাঘব চাড্ডা, যিনি তাঁর জামা কাপড়ের স্টাইল স্টেটমেন্ট আর পারফিউমের জন্যও বিখ্যাত, তিনিও একই কথা বললেন৷ হায়রে আমার স্বদেশ, আর কতবার, কতবার কত বিশ্বাসঘাতকদের আমরা দেখবো? এই নব্য গজিয়ে ওঠা আপের নেতারা না ইতিহাস জানেন, না বোঝার চেষ্টাও করেন৷ দেশ ভাগ হওয়ার পরে কত যন্ত্রণা নিয়ে উদ্বাস্তুরা এদেশে এসেছিল৷ কেন এসেছিল, তাদের ওপরে কী অত্যাচার হয়েছে৷ তার বিন্দুমাত্র ধারণা থাকলেও এমন কথা বলতে পারতেন?

বুধবার সকালে, বুলডোজারের সন্ত্রাস দেখে অপারেশন সানসাইনের কথাও মনে পড়ছিল৷ বুধবার সকালে গ্যারাজ ভেঙে যাওয়ার পর, পান গুমটি ভেঙে যাবার পরে যে লোকগুলো কাঁদছিল৷ তাদের দেখে হাতিবাগান, গড়িয়াহাটের ফুটপাথের দোকানদারদের কথা মনে পড়ছিল৷ সে দিনও, আজও এই লোকগুলোকে জবরদখলকারীই বলা হয়েছে৷ এটা ইললিগাল এনক্রোচমেন্ট, এর ফলে রাস্তা সংকুচিত হয়, এর ফলে শহর নোংরা হয়৷ অতএব একপক্ষ আদালতে যাবেন, আদালত থেকে ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে, বা দেওয়ার আগেই ভেঙে ফেলা হবে। এটাই চলে আসছে বছরের পর বছর৷ এদের কে বসায় রাজনৈতিক দলের নেতারা, বদলে ভালো অর্থ উপার্জন হয়৷ তারপর থাকে পুলিশের তোলা, মাস্তান আর নেতাদের হপ্তা উসুল, তারপরেও হঠাৎ আসে বুলডোজার।

অসংখ্য, অসংখ্য এমন বিরাট বিরাট হাউজিং কমপ্লেক্স আছে, বিশাল বিশাল ফার্ম হাউস আছে, যার পুরোটাই বেআইনি, তাদের গায়ে হাত পড়ে না৷ তাঁরা হয় উপযুক্ত জায়গায় উপযুক্ত প্রণামী দিয়ে না হলে লাখ টাকার উকিল দিয়ে সামলে নেন৷ সামলে নিয়েছেন, সামলে নেবেন৷ একান্তভাবে রাজনৈতিক বিরোধিতার জায়গা না থাকলে এঁদের গায়ে আঁচটুকুও পড়বে না৷ আমি জানি, আপনি জানেন, সব্বাই জানেন, মিডিয়া জানে, পুলিশ জানে, প্রতিটা রাজনৈতিক দলের, প্রতিটা নেতাও জানেন। তাহলে নতুন টা কী? নতুন হল এই ভাঙচুরকে ধর্মের সঙ্গে জোড়া৷ নতুন হল এই ভাঙচুরকে নির্বাচনে ভোটের মেরুকরণের সঙ্গে জোড়া হচ্ছে৷ দিল্লিতে বুলডোজার চলছে, দিল্লি মিউনিসিপালিটির ভোট আছে সামনে৷ মধ্যপ্রদেশে চলছে, কর্ণাটকে চলছে৷ কোথাও আজান, কোথাও হিজাব, কোথাও আমিষ নিরামিষ, কোথাও হালাল ঝটকা, কোথাও গোমাংস, আরএসএস – বিজেপি দেশজুড়ে এক নরমেধযজ্ঞ শুরু করেছে৷ আহুতি দেওয়া হচ্ছে দেশের গরিব মানুষদের।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Sandeshkhali | অবিলম্বে গঙ্গাধর কয়ালকে গ্রেফতারের দাবি কুণাল ঘোষের
04:52
Video thumbnail
Sandeshkhali Viral Video | গঙ্গাধরকে ফাঁসানো হয়েছে, দাবি বিজেপি কর্মীদের
10:28
Video thumbnail
Kunal Ghosh | 'সন্দেশখালিতে যা হয়েছে, তা দেশদ্রোহিতা' বিজেপিকে আক্রমণ কুণালের
04:53
Video thumbnail
Mitali Bagh | আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের গাড়িতে ভাঙচুর, অভিযুক্ত বিজেপি বলছে, জনরোষ!
08:16
Video thumbnail
Abhishek Banerjee | মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে কৃষ্ণনগরের কালীগঞ্জে অভিষেকের প্রচার
21:17
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | গরমে হিট শশা মাখা! ভিড় জমাচ্ছেন পথচলতি মানুষ
02:15
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar) | কুলার থেকে বরফ, ওআরএস থেকে জেনারেটর; গরমে এলাহি ব্যবস্থা বেঙ্গল সাফারি'তে
02:16
Video thumbnail
Election 2024 | আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের গাড়িতে ভাঙচুর, অভিযোগ অস্বীকার পদ্ম শিবিরের
08:16
Video thumbnail
Sayantika Banerjee | চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দিরে জুতো পায়ে মন্দিরে শঙ্খ বাজিয়ে বিতর্কে সায়ন্তিকা
03:43
Video thumbnail
Top News | সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিয়ো, তোলপাড় রাজ্য, বিজেপি-তৃণমূল তুমুল তরজা
41:21