skip to content
Wednesday, July 3, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | হামাস আক্রমণ, ইজরায়েল এবং ভারত

Fourth Pillar | হামাস আক্রমণ, ইজরায়েল এবং ভারত

Follow Us :

হামাসের আক্রমণ, ইজরায়েলের গাজা অঞ্চলকে মুছে দেওয়ার যুদ্ধ, এসব নিয়ে আলোচনার আগে একটু ইতিহাস আর একটা ছোট্ট তথ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ইতিহাস বলছে, হ্যাঁ, ইহুদিদের লেখা ইতিহাসও বলছে ১৬৯৭-এ রাব্বি ইহুদা হাসেদ ১৫০০ ইহুদিদের এক গোষ্ঠীকে নিয়ে জেরুজালেমে হাজির হন। তার আগে কী ছিল? ইহুদিরা ছিলেন এই অঞ্চলে, রোমান আর বাইজান্টাইন শাসনের সময়ে তাদের পলায়ন শুরু হয়। তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন, কেবল ছড়িয়েই পড়া নয়, এই ছিন্নমূল ইহুদিরা শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক বিরাট ভূমিকা নেন, সারা পৃথিবীতেই। আপনি এক নিঃশ্বাসে দর্শন, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, মেডিক্যাল সায়েন্সের ১০টা মানুষের নাম বললে তার মধ্যে ৫-৬টাই ওই ইহুদিদের পাবেন। ব্যাঙ্কিং ইন্ডাস্ট্রি থেকে শিপিং ইহুদিদের পাবেন, বিশ্বের নাম করা বেকারি ওই ইহুদিদের, নাহুমস বেকারি যাদের, সেই নাহুমসরা ইজরায়েল থেকেই এসেছিলেন। কার্ল মার্কস থেকে আইনস্টাইন ওই ইহুদি ধর্মের মানুষই ছিলেন। বিশ্বে ইহুদিদের জনসংখ্যার পার্সেন্টেজ হল ০.২ শতাংশ। এঁদের মধ্যে ১৯০১ থেকে ২০২২ অবধি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ২১২ জন, মানে পৃথিবীর ২২ শতাংশ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এই ইহুদিরা। আজকে কৃষিবিজ্ঞান বা পশু মৎস পালনে বিজ্ঞানের আধুনিকতম যা যা পদ্ধতি দেখছেন তার ৯০ শতাংশ ওই ইজরায়েলের। ওই এক ছোট্ট ইজরায়েল পাশাপাশি বিরাট আরব দেশগুলোর লাগাতার বিরোধিতা সত্ত্বেও উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে। মাথা পিছু আয় ৪৪০৬০ ডলার, পাশে আমাদের ভারত, ৭১৩০ ডলার। দেশটার দিকে তাকিয়ে দেখুন, চারিদিকে মরুভূমি, জর্ডন নদী ছাড়া আর নদীই নেই, কিন্তু তাদের খাবারের ৯৫ শতাংশ তারা উৎপাদন করার পরে অ্যাভাকাডো, খেজুর আর আলু রফতানি করে, যার মোট মূল্য ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। গোটা বিশ্বে সার্ভেল্যান্স, নজরদারির যে সব সরঞ্জাম, সফটওয়্যার পাওয়া যায়, তার ৮০ শতাংশ ইজরায়েলের, আপনাদের পেগাসাসের কথা তো জানাই আছে।

কিন্তু উন্নয়ন আর সভ্যতা একসঙ্গেই হাত মিলিয়ে চলে এমনও তো নয়। সবচেয়ে উন্নত রাষ্ট্র আমেরিকা ভিয়েতনামে ন্যাপম বোমা ফেলেছিল, পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল হিরোসিমা নাগাসাকিতে, উন্নত রাষ্ট্র ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকা সব্বার জানা। এখানেও তাই। তো সেই ইহুদিদের আধুনিক ইতিহাস বলছে ১৬৯৭-এ রাব্বি ইহুদা হাসেড ১৫০০ ইহুদিদের এক গোষ্ঠীকে নিয়ে জেরুজালেমে হাজির হন। আর আজ? ইজরায়েলে ইহুদিদের সংখ্যা ৭ কোটির কাছাকাছি। সব ভালোর মধ্যে এইখানেই লুকিয়ে রয়েছে আসল সমস্যা। ওই রোমান বা বাইজান্টাইন শাসনের সময়ে এই অঞ্চলেরই আদি নিবাসী ইহুদিরা হয় ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য হন, কিংবা পালিয়ে যান, এবং এইভাবেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েন। শাইলক থেকে আইনস্টাইন হওয়ার গল্প শুরু হয়। তাদের মিতব্যয়িতা, তাদের সাদাসিধে জীবন, তাদের মেধা কিছুদিনের মধ্যেই চোখে পড়তে থাকে, তাঁরাও আনন্দে ছড়িয়ে পড়তে থাকেন। কিন্তু এর ব্যাকল্যাশও ছিল, ইহুদিরা ভীষণ রকমের ক্লোজ নিট সোসাইটি। নিজেদের মধ্যে থাকা, একে অন্যকে সাহায্য করা, নিজেদের মধ্যে অনুষ্ঠান আয়োজন করা এই সম্পন্ন ইহুদিদের বিরুদ্ধে ইউরোপ জুড়েই এক বিদ্বেষ তৈরি হয়। শেক্সপিয়রের লেখায় মার্চেন্ট অফ ভেনিসে ভিলেন হন শাইলক, এক ইহুদি। ক্রমশ এই বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়তে থাকে, এর মধ্যে কার্ল মার্কস, এক ইহুদির দর্শন নিয়ে সারা পৃথিবীতে ঝড় ওঠে। আবার জন্ম নেয় ওই নতুন ইহুদি বিদ্বেষ, পৃথিবী জোড়া এই ইহুদি বিদ্বেষের সঙ্গে সঙ্গেই ইহুদিরা খেয়াল করেন, তাঁদের দেশ নেই। সম্পন্নতম এক জাতির নিজের ভূখণ্ড নেই।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ৫ রাজ্যেই বিজেপি হারবে, গোহারান হারবে

এবার তাঁরা রওনা দিতে থাকেন ইজরায়েলের দিকে, বিদ্বেষ যত বেড়েছে, তত বেশি করে ইহুদিরা গেছেন বা যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ইজরায়েলে। কিন্তু তখন ইজরায়েল বলে কোনও দেশ তো নেই, তাঁরা তাঁদের পবিত্র জেরুজালেমের দিকেই যেতে থাকেন। ইতিহাস বলছে ওখানেই তাঁদের আদি বসবাস। কিন্তু সমস্যা হল ততদিনে সেই জায়গা জুড়ে আরবরা তাঁদের ঘরদোর বানিয়েছেন, ওটাই তাঁদের ভূখণ্ড, তাঁদের দেশ বলে চিহ্নিত হয়েছে। আজ যদি বল্লাল সেনের নাতির নাতি, কিংবা বাহাদুর শাহ জাফরের নাতনির নাতনি এসে আপনাকে বলে আপনার ঘরদোরে আমাদের থাকতে দিতে হবে, তাহলে আপনি কী বলবেন? সেই প্রতিক্রিয়াই ছিল আরবের মানুষজনদের। ইহুদিদের সশস্ত্র বাহিনী হাগানাহ তৈরি হয়েছে, তারাই ব্রিটিশদের সাহায্য করে প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড দখল করতে, গোটা এলাকাটাকে ম্যান্ডেটরি প্যালেস্তাইন বলা শুরু হল। সেই সময়ে ইহুদিদের জনসংখ্যা মাত্র ১১ শতাংশ, ৭০ শতাংশের বেশি আরব। ওদিকে এর মধ্যে হিটলারের ইহুদি নিধন শুরু হয়েছে। গোটা প্যালেস্তাইন ইজরায়েলের জায়গা জুড়ে তখন ব্রিটিশ কলোনি। ইহুদিরা লুকিয়ে আসছেন, রাতের অন্ধকারে নৌকো করে আসছেন, মোসাদ আলিয়া বেট, এক গোপন সংগঠন তৈরি হয়েছে, যারা ইহুদিদের মূল ভূখণ্ডে জায়গা করে দিচ্ছে। এই সময় থেকেই আরব মুসলমান আর ইহুদিদের লড়াই নতুন মাত্রা পেল। বিষয়টা কেবল দু’ দল মানুষের বসবাসের জায়গা নিয়ে নয়, লড়াই এবার ধর্মের ভিত্তিতে। আরব মুসলমানরা সম্পূর্ণ প্যালেস্তাইনের দাবিতে লড়তে লড়তে দেখলেন তাঁদের স্বদেশ চুরি হয়ে গেছে। ওদিকে ইহুদিরা ক্রমশ তাদের ক্ষমতা আর জমি বাড়াতে থাকল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল, হিটলারের হলোকাস্টেই মারা গেল ৬০ লক্ষ ইহুদি, এবং ইহুদিদের নিজেদের ভূখণ্ডের দাবি আরও জোরে উঠতে থাকল। ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশ ছেড়ে নিজেদের দেশের দিকে মন দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, ভারত, বার্মা, আফ্রিকার বহু দেশ ছেড়ে দেশে ফিরছিল ব্রিটিশ বাহিনী। তারা ওই ম্যান্ডেটরি প্যালেস্তাইন ছেড়ে দেশে ফেরার আগে বহুভাবে চেষ্টা করে, ভাগাভাগি করে প্যালেস্তাইন আর ইহুদিদের বাসস্থান আলাদা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা খুব সৎ ইচ্ছের ফসল ছিল না। প্যালেস্তাইনের মানুষ তা মেনেও নেয়নি। ব্রিটিশরা চলে যেতেই ইজরায়েল তাদের স্বাধীন দেশের কথা ঘোষণা করল, সেটা ছিল ১৪ মে ১৯৪৮। তাদের ম্যাপে জেরুজালেমকে ঘিরে রামাল্লা, হেব্রন ইত্যাদি আর গাজা অঞ্চল ছেড়ে এক ম্যাপ তৈরি হল। সঙ্গে সঙ্গে মিশর, সিরিয়া, জর্ডন আর ইরাকের সম্মিলিত বাহিনী আক্রমণ করল নয়া দেশ ইজরায়েলকে, বিশ্বসুদ্ধ মানুষ ভেবেছিল আরেকবার ইহুদি নিধন দেখবে, কিন্তু ইজরায়েল আক্রমণ প্রতিহত করল। শুধু তাই নয় নতুন কিছু অংশ দখল করে যুদ্ধ বিরতিতে রাজি হল। ৭ লক্ষ প্যালেস্তাইন মানুষ ইজরায়েল ছেড়ে পালালেন। আর কিছুদিন পরেই ১১ মে ১৯৪৯-এ রাষ্ট্রসঙ্ঘ ইজরায়েলকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিল। সেই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল। আমেরিকা, রাশিয়া চীন, কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি ৩৭টা দেশ এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিল। বিরোধিতা করেছিল ১২টা দেশ যার মধ্যে আমাদের দেশও ছিল, প্যালেস্তাইন স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে ভারত সেদিন এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। এরপর থেকে বরাবর আমাদের দেশের বিদেশনীতির অঙ্গ হিসেবেই আমরা প্যালেস্তাইনের লড়াইয়ের, তাদের স্বাধীন ভূখণ্ডের পক্ষে আর ইজরায়েল জায়নবাদীদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধেই ছিলাম। এই প্রথম নরেন্দ্র মোদির সরকার সেই বিদেশনীতির উল্টো পথে হাঁটা শুরু করেছে। আজ নয়, যবে থেকে মোদিজি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তবে থেকেই। এই বিদেশনীতি কীসের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল?

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়েই এই বিদেশনীতির ভিত্তি রচনা হয়, গান্ধীজি, নেহরু এবং কংগ্রেস বহুবার বহু আলোচনায়, কংগ্রেস অধিবেশনের প্রস্তাবে প্যালেস্তাইনিদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করেছেন, নিন্দা করেছেন ইহুদি জায়নবাদীদের আগ্রাসনের। নেতাজি সেই কবেই এই ব্রিটিশদের দেশটাকে ভাগ করার পরিকল্পনা বুঝেছিলেন, বুঝেছিলেন যে প্যালেস্তাইন–ইহুদি লড়াইটাকে জিইয়ে রাখতে চায় পশ্চিমি দুনিয়া। ১৯৪২-এ আজাদ হিন্দ সরকারের বেতার ভাষণে নেতাজি বলেছিলেন, ‘…Britain has, in other parts of her Empire, for instance in Ireland and Palestine, used the religious issue in order to divide the people. She has been utilizing in India for that same purpose….’ সেই ব্রিটিশরা দেশটাকে ভাগ করিয়ে ছেড়েছে শুধু নয় তারাই আজ ইজরায়েলের পাশে অথচ এই ইজরায়েল, এই পশ্চিমি দুনিয়াই নাকি ঘরে বসে বসে সারা দুনিয়ায় কোথায় কোন রাসায়নিক অস্ত্র, মারণাস্ত্র মজুদ করা হচ্ছে তার খবর পেয়ে যায়। কিন্তু হামাস আসছে আক্রমণ করতে তার খবর তারা পেল না, পেল না নাকি ইচ্ছে করে একটা পুলওয়ামা তৈরি করতে হল। কারণ ইজরায়েলে শাসক নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা হু হু করে কমছিল? প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতার লড়াই চলবে, নরেন্দ্র মোদি কী বললেন তাতে ভারতের মানুষের কিচ্ছু আসে যায় না কারণ এ সরকারের আয়ু ফুরিয়েছে। কিন্তু এই হামাসের আক্রমণের যে বর্বর ছবি আমাদের সামনে এসেছে তা কোনও স্বাধীনতার সংগ্রাম হতে পারে না। নারী স্বাধীনতা কেড়ে, নারীদের বিবস্ত্র করে প্যারেড করিয়ে দেশের স্বাধীনতা, জাতির স্বাধীনতা আসে না। এই বর্বরোচিত আক্রমণের আজ নিন্দা না করলে কবে করব? তাই ধিক্কার রইল এই বর্বরতার জন্য কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে জায়নবাদীদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতার লড়াইয়ের জন্যও থাকল অকুণ্ঠ সমর্থন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Narendra Modi | সংসদের নিয়ম মানছেন না এনডিএ-র সাংসদরাই? কড়া বার্তা মোদির
01:46:40
Video thumbnail
Lok Sabha | INDIA-NDA | সোমে ‘হিন্দু’ মন্তব্যে উত্তাল লোকসভায় আজ INDIA কী করবে?
03:33:16
Video thumbnail
Bharatiya Nyaya Sanhita | আর ৪২০ বলা যাবে না, নতুন আইনে প্রতারণা কত নম্বর ধারায়?
01:44:51
Video thumbnail
Fire | দাউদাউ করে জ্বলছে, ফের বিধ্বংসী আগুন শহর কলকাতায়
59:16
Video thumbnail
Politics | পলিটিক্স (02 July, 2024)
14:55
Video thumbnail
Fourth Pillar | ইডি, আদালত, কৌস্তুভ রায়, কেজরিওয়াল আর হেমন্ত সোরেন, মামলা কিন্তু এক (পর্ব-২)
12:02
Video thumbnail
Aajke | এ এক আজব রাজ্যপাল, নিজের পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত
10:54
Video thumbnail
Kalyan Banerjee | মোদিকে কী বললেন তৃণমূলের কল্যাণ? রেগে লাল বিজেপি সাংসদরা
07:33:25
Video thumbnail
Kalyan Banerjee | ওম বিড়লাকে কী বললেন কল্যাণ? তারপর সংসদে কী হল দেখুন
08:23:26
Video thumbnail
Akhilesh Yadav | সংসদে হেরো সরকার, আর কী বললেন অখিলেশ? উত্তাল সংসদ
08:13:19