সোমবার নতুন সচিব পাচ্ছে বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থা অনির্বান দত্ত যিনি এই মুহূর্তে সংস্থার কোষাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে অনির্বান বসেছেন মাত্র ক মাস আগে। ঠিক মতো দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগেই তাঁকে সচিব পদে বেছে নিতে চলেছেন গভর্নিং বডির সদস্যরা। সোমবার আই এফ এ-র নতুন গভর্নিং বডির প্রথম সভা। সেই সভাতেই বিনা নির্বাচনে সচিব হতে চলেছেন অনির্বান, ময়দানে যিনি জয় নামে পরিচিত। অনির্বানদের পরিবার বহুদিন ধরেই আই এফ এ-র সঙ্গে যুক্ত। তাঁর জ্যাঠা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন আই এফ এ-র সচিব। তাঁর বাবা প্রদ্যোত দত্ত ছিলেন আই এফ এ-র সচিব। তাঁর জাঠতুতো দাদা সুব্রত দত্ত ছিলেন আই এফ এ-র সচিব। সেই বিচারের ভবানীপুরের দত্ত পরিবার আই এফ এ-কে চতুর্থ সচিব উপহার দিতে চলেছে। বলাই বাহুল্য তাঁর পূর্বসুরিদের মতো অনির্বানও জর্জ টেলিগ্রাফ ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত।
মধ্য তিরিশের অনির্বান এত তাড়াতাড়ি সচিব পদে বসতে পারতেন না, যদি জয়দীপ মুখোপাধ্যায় হঠাৎ করে সচিব পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতেন। জয়দীপ সচিব হয়েছিলেন ২০১৯ সালে। তাঁর মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত। কিন্তু ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি হঠাৎই সচিব পদ থেকে সরে দাঁড়ান। আই এফ এ মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দিন কে দিন জয়দীপ ক্রমশ একা হয়ে পড়ছিলেন। আই এফ এ-তে সচিবই সর্বেসর্বা। কিন্তু কাজ করতে গেলে একটা টিম লাগে। যাঁর আশীর্বাদ নিয়ে জয়দীপ আই এফ এ-র সচিব হয়েছিলেন সেই সুব্রত দত্তের সঙ্গে বহু ব্যাপারে তাঁর মতের মিল হচ্ছিল না। আই এফ এ-তে সফলভাবে কাজ করতে গেলে সুব্রত দত্তের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হয়। এটাই নিয়ম। জয়দীপ মনে করেছিলেন তিনি একাই পারবেন। সেই ভাবনাটাই ভুল ছিল।
অথচ মাত্র তিন বছরে জয়দীপ কিন্তু কম কাজ করেননি। আগের সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় প্রায় ১২ কোটি টাকার দেনা রেখে বিদায় নিয়েছিলেন। জয়দীপ সচিব হয়ে এসে সেই টাকা শোধ করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রায় তিন কোটি টাকা মিটিয়েওছিলেন। এর পর এসে পড়ে কোভিড। ময়দানে সব খেলা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় আই এফ এ-র কোষাগারে কোনও টাকা ছিল না। কর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য খরচ মেটাবার জনয় জয়দীপ নিজের পকেট থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ধার দেন। সেই টাকায় কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মেটে। ২০২০ সালে ফুটবল না হওয়ায় আই এফ এ-র কোষাগারে কোনও আয় হয়নি। কিন্তু ২০২১ সালে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ এবং আই এফ এ শিল্ড করে অনেক টাকা ঘরে এনেছিলেন জয়দীপ। এর পর কলকাতায় আই লিগের সব ম্যাচ সংগঠন করে আই এফ এ। সেখান থেকে তাদের কোষাগারে ৬৫ লাখ টাকা ঢুকেছে। তাই জয়দীপ যখন পদত্যাগ করেন তখন সংস্থার ভাণ্ডারে প্রায় এক কোটি টাকা রেখে গেছেন। তাঁর আমলে আই এফ এ-র কোনও দেনা নেই। আরও একটি কাজ তিনি করে গেছেন। তাঁর পূর্বসুরি উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় ঐতিহাসিক আই এফ এ শিল্ডকে অনূর্ধ্ব ১৯ টুর্নামেন্ট করে ফেলেছিলেন। জয়দীপ কিন্তু টুর্নামেন্টটাকে আবার সিনিয়রদের টুর্নামেন্ট করে ফেলেছিলেন।
জয়দীপের আমলে বাংলার ফুটবলে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। মোহনবাগান এবং ইস্ট বেঙ্গল আই লিগ ছেড়ে চলে গেছে আই এস এল-এ। ২০২০-তে কোভিডের জন্য কলকাতা ফুটবল হয়নি। ২০২১-এ শুধু হয়েছে প্রিমিয়ার লিগ। কিন্তু মোহনবাগান বা ইস্ট বেঙ্গল তাতে অংশ নেয়নি। তিন প্রধানের মধ্যে শুধু মহমেডান অংশ নেয়, এবং তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়। এ বছর আবার ইস্ট বেঙ্গল ও মোহনবাগানের খেলার জন্য আই এফ এ হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে। ইস্ট বেঙ্গল হয়তো খেলবে। কিন্তু মোহনবাগান খেলবে এ কথা জোর করে বলা যাবে না। তবে এ বছর আই এফ এ-র সব কটি ডিভিশনেরই খেলা হওয়ার কথা। নতুন সচিব অনির্বানের কাঁধে তাই গুরু দায়িত্ব। তবে তাঁকে গাইড করার জন্য থাকছেন প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত। সচিবের মতো পরিবর্তন হচ্ছে সংস্থার তিন সহ সভাপতি পদে। নতুন তিন সহসভাপতি হচ্ছেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই, সুরুচি সঙ্ঘের স্বরূপ বিশ্বাস, সাদার্ন সমিতির সৌরভ পাল এবং বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি। প্রেসিডেন্ট এবং চেয়ারম্যান পদে থেকে যাচ্ছেন অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুব্রত দত্ত। আর অনির্বানের ছেড়ে যাওয়া কোষাধ্যক্ষের পদে আসতে চলেছেন দেবাসিশ সরকার।