মহিষাদল: এ বারও গড়াবে না মহিষাদলের রথের চাকা। ২০২০ সালেও করোনার চক্করে বন্ধ ছিল এই ঐতিহ্যবাহী রথোৎসব। এ বার বসবে না ঘটা করে মেলাও, যা ২৪৫ বছরের প্রাচীন ইতিহাসে খুবই বিরল। তবে রথের চাকা না-গড়ালেও রথের সমস্ত রীতিনীতি পালন করা হবে নিয়ম রক্ষার্থে। গত বছরের মতো এ বছরও রাজবাড়ির কুলদেবতা মদনগোপাল জিউ ও প্রভু জগন্নাথকে রথের মধ্যে তোলা হলেও তাঁরা মাসির বাড়ি যাবেন পাল্কি চড়ে। রথ থাকবে রথের জায়গাতেই। শুক্রবার এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল মহিষাদল রথ মেলা কমিটি।
আরও পড়ুন: ২৮ জুন থেকে ইন্টারসিটি রেল চালু
তবে শুধু করোনা নয়, এর আগেও একবার বন্ধ হয়েছিল রথযাত্রা। সেটা ১৯৩২ সাল। ইতিহাসের পাতা উল্টালে জানা যায়, তখন ভারতে ব্রিটিশদের অত্যাচার চরমে। এমন সময় ওই বছর রথের দিন এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর উপর চরম অত্যাচার চালায় ব্রিটিশ পুলিশবাহিনী। যার প্রতিবাদে রথ একবার টানার পর রথ টানা বন্ধ রাখেন দর্শনার্থীরা। তাঁরা ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিবাদে দাবি জানান, পুলিশকে ক্ষমা চাইতে হবে, নচেৎ তৎকালীন সতেরো চূড়া রথের মাথায় লাগাতে হবে ভারতের জাতীয় পতাকা। আর এই টানাপোড়েনের মাঝে ওই বছর বন্ধ হয়ে যায় রথ টানা। এরপর থেকে অবশ্য রথ টানা স্বাভাবিক নিয়মেই চলতে থাকে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনার কোপে রথ বন্ধ হয়। যার পুনরাবৃত্তি চলতি বছরেও।
আরও পড়ুন: বারবার বয়ান বদল, পুলিশকে বিভ্রান্ত করছেন দেবাঞ্জন
এই রথযাত্রার শুভ সূচনা করেছিলেন, রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের সহধর্মিণী ধর্মপ্রাণ রানি জানকী দেবী। মহিষাদল রাজপরিবারের এই প্রাচীন রথের অন্যতম দ্রষ্টব্য বিষয় হল, এই রথে জগন্নাথদেবের সঙ্গে যান রাজবাড়ির কুলদেবতা গোপালজিউ। তবে অন্যান্য বছর হাজার হাজার দর্শনার্থীর কাছির টানে রথে চড়ে মাসির বাড়ি গেলেও এ বার জগন্নাথদেব ও গোপালজিউ মাসির বাড়ি যাবেন রাজবাড়ির পালকি চড়ে। মহিষাদলের ঘাঘরা গ্রামে মাসির বাড়িতে এক সপ্তাহ কাটানোর পর উল্টো রথের দিন ফের পালকি চড়ে জগন্নাথ ও গোপালজিউ ফিরবেন বাড়িতে।
আরও পড়ুন: ক্যানসার আক্রান্ত ‘নাট্টু কাকা’
রথ পরিচালন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা মহিষাদল বিধানসভার বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী বলেন, “এ বছরও রথ টানা বন্ধ থাকবে। কোভিড নিয়ন্ত্রণে এসেছে৷ তবে তার মানে এই নয় যে, লাখো মানুষের উপস্থিতিতে রথ টানা হবে। মহিষাদল রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম রাজা শঙ্করপ্রসাদ গর্গ ও হরপ্রসাদ গর্গ জানান, করোনার কারণে গতবছরের মতো এ বারেও রথের চাকা গড়াবে না৷ তবে আচারআচরণ মেনেই পালিত হবে মহিষাদলের প্রাচীন রথযাত্রা।