আদিবাসী পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দু’জনেই সমাজের কাছে এক দৃষ্টান্তমূলক বার্তা তুলে ধরলেন। প্রবল বর্ষণের জেরে এদের দু’জনেরই বাড়ি ভেঙে পড়ার মত অবস্থা, তা সত্ত্বেও নিজেদের কথা ভুলে গিয়ে মানুষের জন্য কাজ করা থেমে যায়নি। এই দুই আদিবাসী সরকারী পদে থাকা ভাই বোন তাঁদের কাজের এই দৃষ্টান্ত আবারও অণ্ডালের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি লক্ষ্মী টুডুর কথা ফের মনে করিয়ে দিল।
আরও পড়ুন: রাহুলের ‘ব্রেকফাস্ট পে চর্চা’য় তৃণমূলের এক ঝাঁক মুখ, এলো না আপ
যে স্বার্থত্যাগের শুরুটা ক্ষমতার অলিন্দ থেকে শুরু করেছিলেন দুর্গাপুরের অণ্ডালের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি লক্ষ্মী টুডু, সেই ধারাবাহিকতার ব্যাটনটা এবার হাতে নিল দুর্গাপুরের লাউদোহার প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রাজেন কিস্কু ও দুর্গাপুর ফরিদপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমতি হেমব্রম। রাজেন কিস্কু আর শ্রীমতি হেমব্রম এরা দুইজন সম্পর্কে আবার ভাই বোন। লক্ষ্মী টুডু অণ্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির এই সভাপতি রাজ্যের শাসক দলের টিকিটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েও কেন্দ্র কিংবা বাংলা আবাস যোজনায় কোনো ঘর পাননি। গত নিম্নচাপে বৃষ্টির জলে যখন এক চিলতে মাটির ঘরে জল ঢুকে গিয়ে সবকিছু তছনছ করে দিল,তখন তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধি নিঃশব্দে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন। ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি, তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েও কেন্দ্র ও বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের ঘর লাউদোহার প্রতাপপুর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান রাজেন কিস্কু ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমতি হেমব্রমের হাত ধরে অনেকেই পেবেছেন। অথচ সম্পর্কে ভাইবোন এই দুই পঞ্চায়েত প্রতিনিধির কপালেই জোটেনি মাথা গোঁজার পাকাপাকি জায়গা। নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টিতে মাটির ঘরে জল ঢুকে পড়েছে। এক হাঁটু জল জমেছে ঘরে, ফাটলও দেখা দিয়েছে ঘরের মাটির দেওয়ালে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বাড়ি। হারাতে হতে পারে মাথা গোঁজার ঠাঁই, কিন্তু তাতেও কোনো আফশোস বা হা হুতাশ নেই শ্রীমতি হেমব্রম ও রাজেন কিস্কুর। আর পাঁচ জনের মতো সরকারি নিয়ম মেনেই তাঁরা ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করতে চান না বলে জানিয়েছেন দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমতি হেমব্রম ও প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রাজেন কিস্কু।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সীমান্তে জঙ্গিহানায় শহিদ দুই BSF জওয়ান
যে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সুপারিশে একটার পর একটা সরকারি প্রকল্পের ঘর পেয়েছে এলাকার মানুষজন, আজ প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন লবনাপাড়া গ্রামে শ্রীমতি হেমব্রম ও রাজেন কিস্কুর মাটির ঘর টানা বৃষ্টির জেরে ভেঙে পড়েছে। মান,অভিমান ক্ষোভ, বিক্ষোভ নয়, আর পাঁচজনের মতো যেদিন তালিকায় তাঁদের নাম আসবে, সেদিন তাঁরা সেই সরকারি নিয়ম মেনেই ঘর নেবেন বলে জানিয়েছেন। প্রয়োজনে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে উঠবেন, কিন্তু নিয়মের বেড়াজাল টপকে সরকারি প্রকল্পের ঘর পেতে ইচ্ছুক নয় এই ভাই বোন। দলেরই দুই কর্মীর এই স্বার্থত্যাগ দেখে গর্বিত পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুজিত মুখোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, ‘এর চেয়ে বড় কথা আর কি হতে পারে। যখন কাটমানি আর হাজারও দুর্নীতির বেড়াজালে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের এক শ্রেণির কর্মী নেতাদের বিরুদ্ধে ভুঁড়ি ভুঁড়ি অভিযোগ উঠছে, ঠিক সেখানে লক্ষ্মী টুডু, শ্রীমতি হেমব্রম আর রাজেন কিস্কুর মতো মানুষজন যারা সরকারি পদে থেকেও নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে না বেড়িয়ে খোলা বাতাসে যেন অনেকটা স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন। আর তাই লক্ষ্মী, শ্রীমতি আর রাজেন যেন মুক্ত আকাশে বেঁচে থাকার অনেকটাই রসদ জোগালেন।’