skip to content
Monday, July 1, 2024

skip to content
Homeফিচারভূত চতুর্দশীর রাতে ভূষণ্ডির মাঠে কেমন আছে ভূতেরা?

ভূত চতুর্দশীর রাতে ভূষণ্ডির মাঠে কেমন আছে ভূতেরা?

Follow Us :

ভূষণ্ডির মাঠে কারিয়া পিরেত ছিল এক খোট্টা ভূত। তার কি খোনা গলা? কে জানে। ছিলিম টানা ভূতেদের গলা একটু ফ্যাসফেসে হতে পারে, তবে খোনা বোধকরি হবে না। পেনেটির গঙ্গা পেরিয়ে, কোন্নগর ছাড়িয়ে শের শাহ্-এর গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড ধরে আরও একটু এগোলে বাবলা গাছ, আঁশ শেওড়া আর ঘেঁটু ফুলের গন্ধে মম করা যে মাঠ তার নামই ভূষণ্ডি। এখন আর সেই মাঠ নেই। সব উঁচু হাই-রাইজ। আর সিন্ডিকেট সভা। ভূতেরা কোণঠাসা। তাও টানা মাঠে কৃষ্ণা-রাতে উবুদশ হাওয়া খেলে। শাঁ শাঁ করে শব্দ হয়। আলেয়া ভূত হাতে হারিকেন নিয়ে ভাসতে ভাসতে জলা পার হয়। কেমন একটা কুয়াশা-স্তর ভারী করে থাকে চারপাশ।

কারিয়া পিরেত বিহার মুল্ক ছেড়ে কী করে যে এই গেঁয়ো বাংলার মাঠে, তালগাছে আশ্রয় পেল তা রাজশেখর বসুরও জানা নেই। তবে সে ভোজপুরি সুরে বাংলা গান গায়। ‘পরথম বিহা করলাম আমি জিলা বরধমান। বাসর ঘরে বউ হমারে করলো অভিমান।’

আরও পড়ুন – বাঙালির বটতলাবাজারে ‘সুকুমার’ আর ‘সন্দেশ’ এক অবিশ্বাস্য আলোর ফোয়ারা

শিবু হচ্ছে ব্রহ্মদত্যি ভূত। পৈতে আছে। খড়ম খুলে ফেলে আবার পরে নিয়েছে। পায়ে বেল কাঁটা ফুটে ব্যথা বেদনায় একেবারে টনটনে অবস্থা। বেল গাছেই তো নিত্য আবাস শিবুর। লালনের গানে বুঝেছে নৃত্যকালীকে কেউ বামনি বলে চিনতে পারবে না। পৈতাই নেই। সোনার পৈতা তো কোন ছাড়। নৃত্যকালী গায়ে আগুন কেন দিয়েছিল তাও জানা যায় না। শিবু ভেদ বমিতে গত হওয়ার পর, গ্রামের লোকেরা তাঁকে কুনজর দিয়েছিল। অন্ধকার হলেই ভামের মত পা টিপে টিপে ছায়াময় শরীরে ঘুরে বেড়াত ঘরের চারদিক। নেত্যকালী (এই নামেই আদর করে ডাকত শিবু) জানে এরাই হচ্ছে আসল শয়তান। শয়তানের চেহারা ঠিক কেমন? অবশ্য ইংরিজি শয়তান আর বাংলা শয়তানের মধ্যে বিস্তর ফারাক। বাংলার শয়তানরা পশুর মাথা কেটে ধর্মস্থানে ফেলে আসে। বিদেশি শয়তানদের মধ্যে এ সবের চল কম।

ভূষণ্ডির মাঠের ভুতেরা

শিবু হিসেব করে গুনে দেখে, ভূষণ্ডির মাঠে কত রকমের ভূত আছে। সে নিজে বেম্মো। এ ছাড়ায় যক্ষ আছেন। মোহর পাহারা দেয়। একটা ভুতু সাপ পুষেছে। চোখ-দাঁত-নখ কিছুই নেই। ভুতু সাপেরা যেমন হয়। পুরনো আমলের গন্ধ মাখা একটা কালো ঘড়া। তারমধ্যে খোলামকুচির মত কিছু তামার পয়সা। তাকেই যক্ষ ভাবেন বিশাল সম্পত্তি। জানেনই না ভূত সমাজের কত কত কোটি কোটি টাকা হাপিস করে বেওসায়ি ভুঁড়িওলা-ভূতেরা জাস্ট হাওয়ায় উবে গিয়েছে।

এ ছাড়াও পেতনি আছে। মেছো। গেছো। নাছোড়বান্দা। কেউ মাছ নিয়ে হাঁটলেই পিছু নেয়। মুসলমান ভূত মরলে নাকি মামদো হয়। সেও আছে। স্কন্ধকাটা এক জন আছে ইটের পাঁজার গর্তে থাকে। শাঁখচুন্নি আছে। গামছা পরে থাকে। বকের মত হাত-পা নিয়ে সুক্ষ্ম পাতলা শরীরে উড়ে উড়ে বেড়ায়। শাঁখা পরা এই শাঁখচুন্নিই একবার লম্বা হাত বাড়িয়ে গাছ থেকে লেবু পেড়ে এনে সোয়ামিকে খেতে দিয়োছিল। তাঁর তো ভিরমি খেয়ে একেবারে হাত-পা থম মেরে যাওয়ার দশা। তারপর শেষে এক বদ্যি এসে টোটকা দিয়ে তার দাঁত-কপাটি ছাড়ায়। তবে শাঁখচুন্নিরা পেতনির মত বদমেজাজি না। ভূষণ্ডির পেতনিদের পা-গুলো সব পিছন দিকে ঘোরানো। কোরিয়ান ভূতেদের নকল করে লম্বা চুল গুলো সব সামনের দিকে পেতে রাখে। সবই কে-ড্রামার মায়া।

ভূষণ্ডির মাঠের লম্বা চুলের পেত্নী

শিবু আর কারিয়া পিরেত মওজ করে ছিলিম ধরায়। যক্ষও আসেন। আঁধারে নিশি ডাকে। ঘোলা জলের ডোবা থেকে বুজগুড়ি ওঠে। ওখানে একটা দুষ্টু ছেলে সেই কবে ডুবে গিয়েছে। সে দেও ভূত হয়ে গিয়েছে। জলে কেউ নামলেই পা টেনে ধরে। মাঝে মধ্যে কানাভুলোর পাল্লায় পড়ে জ্যান্ত লোকেরাও দিক ভুল করে ভুষণ্ডির মাঠে চলে আসেন। তবে তাঁরা আর কেউ রাম নাম করেন না। ওটা নাকি মর্ত্যভূমের কোন একটা পার্টি কপিরাইট নিয়েছে। শিবুদের কোনও পার্টি-ফার্টি নেই। গ্যাসের জ্বালায় খানিক ফার্ট আছে। সুখ আছে। অল্প দুঃখও।

RELATED ARTICLES

Most Popular