নিউ ইয়র্ক: চূড়ান্ত সতর্কবার্তার (Final Warning) কথা শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীরা (Scientists)। কী সেই সতর্কবার্তা? পৃথিবীর জলবায়ু অপরিবর্তনীয় ক্ষতির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে (Brink of Irreversible Damage)। দুয়ারে কড়া নাড়ছে সমূহ বিপদ। অবিলম্বে সতর্ক না হলে, আর কোনও সম্ভাবনা থাকবে না। আমাদের নীল গ্রহের (Blue Planet) জলবায়ু ক্ষতি (Damage of Climate) এমন পর্যায়ে চলে যাবে, সেখান থেকে আর ফেরত আসা সম্ভব হবে না কোনওভাবেই। ইন্টারগভার্নমেন্টার প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (Intergovernmental Panel on Climate Change – IPCC) তাদের সর্বশেষ মূল্যায়নের (latest assessment) রিপোর্টে সেই কথাই উল্লেখ করেছে।
প্যানেলের রিপোর্টে অবশ্য এটাও উল্লেখ করা হয়েছে, পৃথিবীর জলবায়ু অদূর ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। সেই ক্ষতি এমন পর্যায়ে যাবে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। বলা চলে, জলবায়ুগত ভীষণ ক্ষতির খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে পৃথিবী। তবে মানবজাতির (Humanity) কাছে এখনও সুযোগ আছে ফেরত আসার। অদূর ভবিষ্যতের জলবায়ুগত চরম ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুন: Transgender Job | মহারাষ্ট্রে সরকারি চাকরিতে রূপান্তরকামীদের আসন সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু
রাষ্ট্রসঙ্ঘ কী বলছে?
রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ (Antonio Guterres, United Nations Secretary-General) বলেছেন, “মানবজাতি পাতলা বরফের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে – আর সেই বরফ দ্রুত গলছে। আমাদের বিশ্বের সর্বক্ষেত্রে জলবায়ুগত পদক্ষেপ প্রয়োজন – সবকিছু, সর্বত্র এবং একযোগে। ”
জলবায়ু সঙ্কটে (climate crisis) মানুষের ভূমিকা প্রসঙ্গে গুতেরেজ বলেছেন, বিগত ২০০ বছরে পৃথিবীতে গরম বেড়েছে, তার জন্য মানবজাতি দায়ী। বিগত ৫০ বছরে যে পরিমাণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে পৃথিবীতে (Earth), তা বিগত ২০০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাতাসে (Air), পরিবেশে (Environment), বায়ুমণ্ডলে (Atmosphere) কার্বন ডাইঅক্সাইডের ঘনত্বের (Density of Carbon Dioxide) কথা ধরলে, বর্তমানে যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে পৃথিবী, তা বিগত ২ মিলিয়ন (২০ লক্ষ) বছরে সর্বোচ্চ। এককথায় বললে, পৃথিবীর জলবায়ু এখন টাইমবোমার মতো। সময়ের কাঁটা তার নির্দিশ্ট তালে চলেছে, আর ওদিকে জলবায়ু টাইমবোমা ফাটার অপেক্ষায় প্রহর গুণছে (Ticking Time Bomb)।
‘নো নিউ কোল (No New Coal)’ নীতি নিয়ে চলার উপর জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব। তাঁর বক্তব্য, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ধনী দেশগুলিতে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে আর গরিব দেশগুলিকে ২০৪০ মধ্যে একই পথে হাঁটতেই হবে। পৃথিবীর সবকটি দেশের উদ্দেশ্যে তাঁর আহ্বান ২০৩৫ সালের মধ্যে কার্বন-মুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে (Carbon-Free Electricity Generation) জোর দিতে হবে। এর অর্থ হলো, আমাদের সৌর মণ্ডলের এই নীল গ্রহে গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Gas-Fired Power Plants) থাকলে চলবে না।
জলবায়ু নিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিজ্ঞান প্যানেল (U.N. science panel) একটি গণনা করেছে এবিষয়ে। প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, প্যারিসে উষ্ণতা সীমার (Warming Lmit) মধ্যে থাকার কথা বলা হয়েছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের (Emission of Green House Gas) পরিমাণ ৬০ শতাংশ কমাতে হবে (২০১৯ সালের তুলনায়)। ২০১৮ সালের পর থেকে যে ৬টি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে নতুন এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি এর আগে।
কী বলছে নতুন রিপোর্ট?
রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্ট বলছে, “চলতি দশকে যে পছন্দ ও কার্য বাস্তবায়িত (Implementing Choices and Actions) করা হবে, তার প্রভাব আগামী হাজার হাজার বছর ধরে থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তন মানবজাতির কল্যাণ ও গ্রহের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ (Therat)।”
২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে (Paris Climate Agreement) লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, পৃথিবীতে শিল্প যুগ শুরুর আগে যে তাপমাত্রা ছিল, তার থেকে বড়জোর ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এগনো যাবে, এটাই হলো সতর্কতা সীমা। বর্তমানে পৃথিবী সেই সতর্কতা সীমার কাছে চলে এসেছে। বর্তমানে পৃথিবীতে গরম বৃদ্ধির পরিমাণ ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ খাদের কিনারা থেকে ০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়ার কদম দূরে দাঁড়িয়ে আছে নীল গ্রহ ওল তার বাসিন্দারা। এই সীমা অতিক্রম করলে, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভুগতে হবে। সেখান থেকে আর ফেরত আসা সম্ভব হবে না মানবজাতির পক্ষে।
আইপিসিসি গত বছর সর্তকতা জারি করে বলেছিল, কোনও দেশই পরিণতির মোকাবিলার জন্য তৈরি নয়। মানুষের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রকৃতির উপর এমনভাবে পড়বে যে তাতে কয়েকশো কোটি মানুষের ক্ষতি হবে। তাপপ্রবাহ (Heat Wave), খরা (Drought) এবং বন্যা (Flood) পরিস্থিতি বাড়বে। পশু (Animal), পাখি (Birds), প্রাণী (Living Organisms), গাছপালা (Tree and Plant) ও সমুদ্রতলে থাকা কোরাল (Corals) ক্ষতির মুখে পড়বে।