কলকাতা : করোনায় মৃত রোগীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চুরি যাচ্ছে বেলঘড়িয়ার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে। মামলা হাইকোর্টে। চার মাস পর কাকলী সরকার নামের এক করোনা রোগীর মৃতদেহ দ্বিতীয় বারের জন্য ময়না তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
চলতি বছর এপ্রিল মাসে বরানগরের বাসিন্দা কাকলী সরকারের মৃত্যু হয় বেলঘরিয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে। ওই হাসপাতাল কর্তপক্ষ জানায় করোনা কারণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃতদেহের শরীরে দাগ থাকার কারণে মৃতদেহ নেয় না পরিবার। এমনকি হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলাও করেন তাঁরা। সেই মামলার ভিত্তিতেই সোমবার কাকলী সরকারের দেহ দ্বিতীয়বারের জন্য ময়না তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ২২ এপ্রিল ২০২১ সালে কাকলি সরকার করোনা আক্রান্ত হন। তাঁকে ভর্তি করা হয় বেলঘরিয়ার বেসরকারি হাসপাতাল মিডল্যান্ডে। সেখানেই চলছিল তাঁর চিকিৎসা।
আরও পড়ুন – ১২ দিন পর কলকাতার দৈনিক করোনা সংক্রমণ একশোর নীচে
২৪ এপ্রিল ২০২০ রাতে ফোন আসে কাকলি সরকারের পরিবারের কাছে। জানানো হয় রোগীর অবস্থা খারাপ। কাকলী দেবীর ভাই জয়দীপ দাস হাসপাতালে পৌঁছন। কাকলী দেবী তাঁকে বলেন, নার্সিংহোমে একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার চক্র চলছে। করোনা আক্রান্ত মৃত রোগীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কাকলী দেবী তাঁর ভাইকে এই কথা বলার পর একজন নার্স এসে কাকলি দেবীকে একটি ইনজেকশন দেন। তার পরের দিন অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল সকালে কাকলী দেবীর মৃত্যু হয়।
এরপরই তাঁর পরিবার ময়না তদন্তের দাবি জানায়। সাগর দত্ত হাসপাতালে হয় ময়নাতদন্ত। রিপোর্টে দেখা যায় কাকলি দিদির মুখ থেকে গ্যাঁজলা উঠে মারা গেছেন। হাতেও রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। পরিবার অভিযোগ জানায়, করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এমন পরিস্থিতি কেন হবে? ফলে পরিবার তাঁর মৃতদেহ নেয় না। হাসপাতালেই পড়ে থাকে কাকলী দেবীর মৃতদেহ।
আরও পড়ুন- জলপাইগুড়িতে জ্বরে আক্রান্ত শতাধিক শিশু, একজনের দেহে করোনা সংক্রমণ
অন্যদিকে, তাঁর পরিবার রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয়। কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে আর কোনও রোগী ভর্তি করতে পারবে না। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
স্বাস্থ্য কমিশনের এহেন রায়ে খুশি না হয়ে পরিবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় জানান, ওই নার্সিংহোমে লাইসেন্স ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ সালে শেষ হয়ে গিয়েছে। তার সত্বেও নার্সিংহোমে চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রোগী তাঁর বাড়ির লোককে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার বিষয়টি জানানোর পর তাঁকে ইনজেকশন দেওয়া হয়। তারপরই রোগীর মৃত্যু হয়। এরপর হাসপাতাল ময়না তদন্ত করলেও তদন্তের রিপোর্টে খুশি নয় পরিবার। কারণ তদন্তে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক আছে কিনা তার উল্লেখ নেই। সিআইডি তদন্তেরও দাবি করা হয়।
এই মামলায় সোমবার বিচারপতি রাজশেখর মান্থার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, কাকলী সরকারের দেহ দ্বিতীয় বার ময়না তদন্ত করতে হবে। এনআরএস হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে করাতে হবে তদন্ত। মৃতার শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক রয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখবেন এই তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে আদালতে এই তদন্তের রিপোর্ট জমা করার করতে বলা হয়েছে।