কলকাতা: স্ত্রী সরকারি চাকরিতে যোগ দিলে ছেড়ে চলে যাবে৷ এই আশঙ্কায় তাঁর ডান হাত কবজি পর্যন্ত কেটে দেয় স্বামী৷ নৃশংস কাণ্ড ঘটিয়েই পালিয়ে যায় সে৷ তার খোঁজ করছে পুলিস৷ এদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় নির্যাতিতার চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে৷ হাত খুইয়ে নার্সিংয়ের চাকরিতে মেয়ে যোগ দেবে কী করে সেই প্রশ্ন এখন ভাবাচ্ছে বাপেরবাড়ির লোকেদের৷ তাঁর শরীর স্বাস্থ্যের কথা ভেবেও উদ্বিগ্ন পরিবার৷ যদিও স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর জবাব, ‘আগে উনি সুস্থ হোন৷ তারপর তিনি নার্সের চাকরিতে জয়েন করবেন কিনা সে নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর সিদ্ধান্ত নেবে৷’
পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাসিন্দা রেণু খাতুন যাতে চাকরি করতে না পারেন সেই জন্য তাঁর ডান হাত কেটে দেয় স্বামী সরিফুল৷ রেণু আগে দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করতেন৷ তখন স্ত্রীর সঙ্গেই থাকত সরিফুল৷ সদ্যই সরকারি চাকরির পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হন৷ শুধু চাকরিতে যোগ দেওয়ার অপেক্ষা ছিল৷ বেকার সরিফুল তখন থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন৷ তার মনে হয়, রেণু সরকারি চাকরিতে যোগ দিলে সংসার করবে না৷ তাকে ছেড়ে চলে যাবে৷
পরিবারের অভিযোগ, শনিবার রাতে সরিফুল বাড়িতেই তার বন্ধুদের নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন। রেণু ঘুমিয়ে পড়তেই সরিফুল ও তার দুই বন্ধু চড়াও হয় রেণুর উপর। ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে তাঁর হাতে। ডানহাতের কব্জি বিছিন্ন হয়ে যায়। চিৎকারে আশপাশের প্রতিবেশীরও ঘুম ভেঙে যায়। রাতেই তাঁকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চিকিৎসকরা তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন৷
২০১৭ সালে কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রামের বাসিন্দা রেণুর সঙ্গে কোজলসা গ্রামের সরিফুলের বিয়ে হয়। রেণুর বাবা আজিজুল হক জানান, ছোট মেয়ের বিয়েতে নগদ এক লক্ষ টাকা, ৮ ভরি গহনা-সহ একটি স্কুটি যৌতুক হিসাবে দিয়েছিলেন। বিয়ের পর রেণু নার্সিং প্রশিক্ষণও নেন। এরপর দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পায় তিনি। এমনকী সরকারি চাকরিতেও পরীক্ষা দিয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। শুধু চাকরিতে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু রেণুর এই চাকরি মেনে নিতে পারেননি তাঁর স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। চাকরি যাতে সে না করে, সেজন্য বারবার তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ।