দু’দুজন প্রয়াত কমরেডের স্মরণ সভা, মৃদুল দে এবং মদন ঘোষ, রাজ্যের অসংখ্য গরিব মানুষের, না খেতে পাওয়া মানুষের কজন এনাদের চেনেন? অনেকেই চেনেন, না চিনলেও ক্ষতি কী? দীর্ঘ সময় ধরেই এনারা মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির কাজ করেছেন, পার্টিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের স্মরণসভায় এলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। পার্টি মুখপত্রের প্রথম পাতায় ব্যানার হেডলাইন শতবর্ষেই হিন্দু রাষ্ট্রের পথে সংঘ, রুখতে হবে তিন ধারার লড়াইয়ে। শতবর্ষে কারা? আরএসএস-এর জন্ম নাগপুরে ১৯২৫-এ, তারা ২০২৫-এ শতবর্ষে পা দেবে, সীতারাম সেই ইতিহাসের কথা বললেন। যা এদিন বললেন না, তা হল শতবর্ষে তো পা দেবে কমিউনিস্ট পার্টিও, ১৯২৫-এ ওই নাগপুর থেকে মাত্র ৭৩০ কিলোমিটার দূরে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে যাত্রা শুরু করেছিল কমিউনিস্ট পার্টি। আরএসএস আজ হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করার পথে, অন্তত কমিউনিস্ট পার্টি তো তাই মনে করছে, কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি পিছিয়ে গেল কোন কারণে? কমরেড ইয়েচুরি কি সেটা বললেন? সেটাই কি আগে আলোচনা করা জরুরি নয়। একই বছরে পথ চলা শুরু করে আজ সারা দেশে আরএসএস-এর শাখার সংখ্যা ৫০ হাজার, ১০ হাজার সাপ্তাহিক আইটি মিলন, মানে ইন্টারনেটে শাখা চলছে, ৫/৬ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন শাখায় আসছেন। এই বাংলাতে আরএসএস-এর শাখার সংখ্যা ১৪৯২, ৬৮৪৫ টা শাখা আছে কেরালাতে, সেখানে তারা বাড়ছে, এমনি এমনি কেরালা স্টোরি তৈরি হচ্ছে না। দেশের আদিবাসীদের, ওবিসিদের সিংহ ভাগ ভোট পাচ্ছে বিজেপি। বিজেপির সাংসদ লোকসভায় ৩০৩, আর সিপিএম-এর ৩ জন, সিপিআই-এর ২ জন। এর মধ্যে ৪ জন তামিলনাড়ু থেকে, ডিএমকে-র জোটের জন্য, জোট না হলে দেশে কমিউনিস্ট দলের সাংসদ ১ জন। ইয়েচুরি কলকাতায় এসে বলছেন রুখতে হবে আরএসএস-কে, কারণ এই শতবর্ষেই তাদের লক্ষ্য হিন্দু রাষ্ট্র।
প্যাকেজ
তো এই শতবর্ষে আরএসএস-এর হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি লক্ষ্যকে কেমনভাবে রুখবে সিপিএম, কী বললেন কমরেড ইয়েচুরি? বললেন তিনভাবে লড়তে হবে। প্রথমত জাতীয় স্তরের বিরোধী দলগুলির একজোট প্রচার কর্মসূচিকে রাজ্যে রাজ্যে নিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ এই যে বিরোধী দলগুলো যাঁরা মাঝে মধ্যেই দিল্লিতে একসঙ্গে মিছিল করছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে যাচ্ছেন সেই সব দলগুলোর এক মিলিত প্রচার কর্মসূচি রাজ্যে রাজ্যে নিয়ে যেতে হবে। মানে এ রাজ্যেও প্রত্যেক বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা আসবেন, একজোট হয়ে মিছিল সভা করবেন। বেশ। দু’নম্বর টা কী? বেকারী, দারিদ্র, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কে করবে? আর বিরোধী দলগুলো কি বেকারত্ব, দারিদ্র, মুল্যবৃদ্ধি বিষয়ে একমত নয়? তাহলে তাদের খামোখা ঐক্যবদ্ধ করতে হবে কেন? তাঁরা তো নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হবেন। তিন নম্বর? তিন নম্বর হল নির্বাচনের আগে প্রতিটি রাজ্যের সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুসারে সুনির্দিষ্ট কৌশল নিয়ে বিজেপিকে পরাস্ত করতে হবে। সেটা কীরকম? ইয়েচুরি ব্যাখ্যা দিলেন, কেরালায় তো লড়াই বাম আর কংগ্রেসের, কাজেই ওখানে জোটের দরকার নেই। মানে? আগে হাত ধরে রাজ্যে যাবেন, রাজ্যের মানুষের কাছে প্রচার করতে, বিজেপির বিরুদ্ধে, তারপর বাম আর কংগ্রেস জোট না করে রাজ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়বেন? বাঃ। আর কী আছে ঝোলায়? উনি জানালেন, বিহারে তো মহাগঠবন্ধন আছেই বা তামিলনাড়ুতেও আছে কাজেই সেখানে তো কোনও সমস্যাই নেই কিন্তু এই বাংলায় তৃণমূল আর বিজেপিকে হারাতে হবে। কী কাণ্ড বলুন তো? বাংলায় প্রথমে রাহুল, ইয়েচুরি, নীতীশ, তেজস্বী, অখিলেশ মমতা খাড়গেরা আসবেন বাংলার মানুষকে বোঝাতে, আরএসএস-কে রুখতে, পটনায় যাবেন বক্তৃতা করবেন এক মঞ্চে বসে, তারপর ওই মমতা কে হারাতে কংগ্রেস আর বামের জোট হবে। এসব কথা যখন বলেন তখন এই মানুষগুলোর সুস্থতা এবং সদিচ্ছা, দুটো নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। আচ্ছা মানুষকে এত বোকা ভাবার কি কোনও কারণ আছে? দিল্লিতে জোট হবে, হাত ধরাধরি করে মিছিল হবে, পাটনাতে কনক্লেভ হবে আর তারপর রাজ্যতে এসে সিপিএম বলবে মমতা হটাও, আর তৃণমূল তারচেয়েও জোরে বলবে সিপিএম হাটাও, মানুষ বিশ্বাস করবে? আসুন দেখে নিই মানুষ কী বলছে।
আরও পড়ুন: Aajke | বিজেপির বদহজম
ভক্স পপ
মানুষের মাথায় চার অক্ষরের বোকা শব্দটা ছাপা নেই, মানুষকে গরু গাধা না ভেবে মানুষ ভাবুন, দিল্লিতে দোস্তি আর রাজ্যে কুস্তির ছকবাজি ছেড়ে সঠিক পথ টা বাছুন। এক নির্ভেজাল নওটঙ্কি চালাবেন আর মানুষ কিছুই বুঝবেনা, তেমন ভাবার কোনও কারণ নেই। আপনাদের এই ধ্যাস্টামো মানুষ দেখেছে। আর দেখেছে বলেই ১৯২৫ সালে পথ চলা শুরু করে আজ আরএসএস-বিজেপি-বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ্গ দলের এই বাড়বাড়ন্ত। দেখুন চেয়ে গোটা ভারতবর্ষে বিজেপি একটা আসনে একজন মুসলমানকে জিতিয়ে আনেনি, কর্নাটকে ভোট হল, একজনও মুসলমান প্রার্থী দেয়নি, কোনও কৌশল নয়, হোক চরম অন্যায়, কিন্তু যা মনে করে তাই করছে। আর কমরেড ইয়েচুরি থেকে সম্মিলিত বিরোধী পক্ষ কেবল বুকনি দিয়ে যাচ্ছে, ফলাফল হাতের সামনেই, ১০০ বছর পথ চলার পরে বিজেপি ৩০৩, কমিউনিস্টরা লোকসভায় ৫।