কবিগুরু লহ প্রণাম, জয় শ্রী রাম, জয় শ্রী রাম। সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে বিজেপির খোলা হাওয়ার ডাকের পরেই পই পই করে ক্যাডারদের বোঝানো হয়েছিল, ভাই এটা টেগোরের জনমদিন, জয় শ্রী রাম নঁহি বোলনে কা, যশস্বী অমিত শাহ মঞ্চে হাজির হতেই ক্যাডার ভক্তরা চিৎকার শুরু করল জয় শ্রী রাম, জয় শ্রী রাম। একদা এ রাজ্যের দিদি কে একমাত্র যিনি পিসি বলতেন, সেই শঙ্কু পন্ডা তো আপাতত বিজেপি-তে, তিনি প্রাণ পণে বলছেন কবিগুরু লহ প্রণাম, তলা থেকে ভক্তরা ছন্দ মিলিয়েই স্লোগান দিচ্ছে জয় শ্রী রাম, জয় শ্রী রাম। আসলে স্নেহের মতোই হজম হল এক বিষম বস্তু। সবার সব কিছু তো হজম হয় না, কারওর পেটে ঘি সয় না, কেউ বা আবার ঘি ছাড়া খায় না। ঠিক তেমনই বাংলা, বাঙালিয়ানার কিছু এমন মৌলিক বিষয় আছে, যা আরএসএস-বিজেপির হজম হয় না, হবে না, হতে পারে না। প্রমাণ চাইছেন? রুদ্রনীলের দিকে তাকান, সিপিএম ছিলেন, ঘোর সিপিএম। কোনওদিন যশস্বী বিমান বসু বলেছেন? বলেননি। তারপর দিদিকে মা বললেন, মা মাগো মা। কিন্তু যশস্বিনী মাইয়া বললেন কি? না বলেননি। বিজেপি-তে গেছেন, যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইত্যাদি অনায়াসে বলছেন, বিজেপিতে থাকলে বাঙালি থাকা যায় না, বাঙালিয়ানা বজায় রাখা যায় না, কারিয়াকর্তা হয়ে যেতে হয়, রুটি দিয়ে আলু পোস্ত খেতে হয়, চোলায় চোলায় কি যে সব বেজে ওঠে কে জানে। সেই আবহে বিজেপির কবি প্রণাম, সে আরেক বিশাল কঠিন বিষয়, বদহজম হতে বাধ্য। সেই বদহজমের কাহিনী আজ আমাদের বিষয় আজকে, বিজেপির বদহজম।
প্যাকেজ।
অডিটোরিয়ামে দেখা যায়নি নির্বাচনের সময়ে হাজির থাকা সেই ঝাঁকে ঝাঁকে কুচুবুলুদের। তাঁরা অভিনেতা অভিনেত্রী, উপযুক্ত মূল্য পেলে তবেই অভিনয় করে থাকেন, পাননি সরে গেছেন। রূদ্রনীল থেকে গেছেন, কারণ তাঁকে এবারে যেতে হলে মায়াবতীর দল ছাড়া তো আর কোনও জায়গা নেই। কাজেই তিনি থেকে গেছেন কিন্তু খেয়াল করুন তিনিও এই খোলা হাওয়াতে হাওয়া খেতে এলেন না। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বসেই রইলেন, স্বপন দাশগুপ্ত তিনিও তথৈবচ। রবি ঠাকুর নিয়ে বললেন অমিত শাহ। বললেন দুটো দেশের জাতীয় গান লিখেছেন রবি ঠাকুর। তথ্য বলছে, রবি ঠাকুরের জনগনমন অধিনায়ক জয় হে জাতীয় গান বা জাতীয় গীত নয়, ন্যাশনাল অ্যান্থেম বা জাতীয় সঙ্গীত, এ তথ্য তাঁর জানা নেই, কিন্তু মঞ্চে উপবিষ্ট আর কেউ না হোক স্বপন দাশগুপ্ত এটা জানতেন না তা তো হতে পারে না, কিন্তু সেধে ঘরে সিবিআই ডেকে আনাটা তাঁর উচিত বলে মনে হয়নি। ওদিকে মাননীয় একদা তড়িপার অমিত শাহ ভুলেই গেছেন রবি ঠাকুর অন্য যে দেশের জাতীয় সঙ্গীত লিখেছেন তা হল বাংলাদেশ, যেখানকার নাগরিকদের তিনি উইঁপোকার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন মাত্র কবছর আগে। এবং মাননীয় অমিত শাহ এটাও জানেন না যে এই উপ মহাদেশের আরেকটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত লেখা ও সুরের অনুপ্রেরণা রবি ঠাকুর। বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতনের ছাত্র আনন্দ সমরাকোন রবি ঠাকুরের প্রত্যক্ষ্য সাহায্যেই লিখেছিলেন শ্রীলঙ্কা মাথা, যা ওদেশের জাতীয় সঙ্গীত। এসব জানতে গেলে হয় বাঙালি হতে হয়, নাহলে রবি ঠাকুর পড়তে হয় উনি তার কোনওটাই নন। তার ওপরে আরএসএস-বিজেপি, মাত্র গতকালই বলেছি, রবি ঠাকুরের বিশ্ব মানবতা ওনাদের দর্শনের ডায়ামেট্রিকালি অপোজিট, একেবারে উলটো পথের দর্শন। আরও অনেক ছড়ালেন মনি মাণিক্য, তারমধ্যে জার্মানির প্রসঙ্গ এল, যে হিটলার, যে গোয়েবলস এর পূজারী আরএসএস-বিজেপি, সেই সংগঠনের একজন রবি ঠাকুরের জার্মানির থেকে আইনস্টাইনের চলে যেতে বাধ্য হবার পরে রবি ঠাকুরের অনুভূতির কথা বললেন, কিন্তু হিটলারের নাম নিলেন না, ফাসিস্ত দর্শনের নাম নিলেন না, বললেন না শেষ দিন পর্যন্ত রবি ঠাকুর বিশ্বাস করতেন, বলতেন ঐ জার্মানি কে হারাতে পারবে কেবল রাশিয়া, হ্যাঁ, ঐ কমিউনিস্টরা, না এসব কথা তিনি হয় জানেন না বা বলার প্রয়োজন মনেই করেন না। তাহলে কেন রবি প্রণাম? দেখানোর জন্য? ভান করার জন্য? রবি ঠাকুরের পুজো না করে বঙালি হওয়া যায় না, তাই খানিক নৌটঙ্কি? তাই কি রবি ঠাকুরের জন্মদিনে বন্দেমাতরম? রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম গাওয়াটা জরুরি ছিল? কী বলেন মানুষজন? শুনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: Aajke | রবিঠাকুর বনাম আরএসএস-বিজেপি
ভক্স পপ।
শেষ কবে এসেছিলেন অমিত শাহ এই সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে? ১১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বাংলার সভাপতি ছিলেন দিলীপ ঘোষ, রাজ্যের দায়িত্বে ছিলেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ জী, এবং শুভেন্দু অধিকারী। সেদিন মঞ্চে এসেই অমিত শাহ বলেছিলেন লক্ষ্য ২০০ পার করা, আমার সঙ্গে বলুন ভারত মাতা কী জয়, জয় জয় শ্রীরাম। ২০০-র জায়গায় ৭০ পেলে কি হবে ভক্তরা শিখেছে জয় শ্রীরাম, তাঁরা নেতাজির জন্মদিন হোক আর রবি ঠাকুরের, জয় শ্রীরাম বলে চেল্লাচ্ছেন। এবং রবিঠাকুরের জন্মদিনের অনুষ্ঠান সম্ভবত বিশ্বে এই প্রথম শেষ হল বন্দেমাতরম গেয়ে। যে বন্দেমাতরমের মাত্র প্রথম স্তবকই গাওয়া হয়েছিল কংগ্রেস অধিবেশনে, কেন? পুরোটা গাওয়া হল না কেন? সুভাষ বসু আর জহরলাল গিয়েছিলেন রবি ঠাকুরের কাছে, কারণ বন্দেমাতরম গাওয়া নিয়ে কংগ্রেসের অনেকের আপত্তি ছিল। রবি ঠাকুর প্রথম স্তবকটুকুই গাইতে বলেছিলেন, সেই রবি ঠাকুরের জন্মদিনে সম্পূর্ণ বন্দেমাতরম গেয়ে আরএসএস-বিজেপি শ্রদ্ধা জানালেন আমাদের রবি ঠাকুরকে। পুরো বদহজম। বিজেপির বদহজম।