কলকাতা: ২০১৯-এ শেষ বার। বাঁধা হয়েছিল মঞ্চ। পরের দুই বছর করোনার মারাত্মক দাপাদাপি। বর্তমানে চতুর্থ ঢেউ হালকা গর্জন করলেও পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তার উপর তৃতীয় বার ক্ষমতা দখল। সব মিলিয়ে এ বছরের ২১-এর দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে কোনও ত্রুটি রাখতে রাজি নয় তৃণমূল কংগ্রেস। দফায় দফায় ধর্মতলার সভা মঞ্চ পরিদর্শন করেছেন দলের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সুব্রত বক্সি, ববি হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেউ বাকি নেই।
ইতিমধ্যেই দূর প্রান্তের জেলা থেকে দলের কর্মী-সমর্থকরা আসতে শুরু করেছেন। সোম-মঙ্গলেই দূরের অনেক জেলা থেকে কর্মীরা চলে এসেছেন। আজ বুধবার সকাল থেকেই হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশনে চোখে পড়েছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের লাইন। একাধিক ভাগে ভাগ হয়ে, শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়েছে কর্মী-সমর্থকদের লম্বা লাইন। শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতির কাজ চলছে জোরকদমে। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রই হোক বা গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম কিংবা সেন্টাল পার্ক-দূর দূরান্ত থেকে আসা কর্মী সমর্থকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শাসক দলের এক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার কথায়, ‘‘কর্মীরাই তো আমাদের দলের সম্পদ। তাই ওদের দেখভাল করা আমাদের দায়িত্ব।’’
কালকের দিনটায় যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, কর্মী-সমর্থক-নেতারা যাতে সুষ্ঠু ভাবে সভা স্থলে আসেন-ফিরে যান, এ প্রসঙ্গে বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার কথায়, “সবাই সাবধানে-শান্তিপূর্ণ ভাবে আসবেন। নিয়ম-শৃঙ্খলা কোনও ভাবেই যেন বিঘ্নিত না হয়। শুধু সভায় আসাই নয়, সুষ্ঠু ভাবে বাড়ি ফিরবেন প্রত্যেকে।” যাঁরা অনেক দূরে থাকেন, বা শারীরিক কারণে ২১-এ সভায় আসতে পারছেন না, তাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ধর্মতলায় আসতে না পারলে টিভি-ভিডিয়োতে চোখ রাখুন। নেত্রীর কথায়, “আমাদের কাছে ২১ জুলাই ঐতিহাসিক দিন। প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। খেয়াল রাখবেন, কোনও ভাবেই যেন সাধারণ মানুষ কোনও সমস্যার মধ্যে না পড়েন।”
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপর লোকসভা। একুশের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন, তা দল এবং নেতা-কর্মীদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ । ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র-সহ অন্যান্য শিবিরগুলিতে মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে । কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায় সে-জন্যই এই ব্যবস্থা। এক একটি শিবির দেখাশোনা করার দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের উপর। যেমন, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে বিধায়ক তাপস রায় ও অন্যান্য নেতৃত্ব হাজির থেকে প্রতিনিয়ত তদারকি করে দেখছেন কারওর কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না ।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কর্মী-সমর্থকদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাই দলের তরফ থেকে মাস্ক বিলি করা হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতন করা হচ্ছে কর্মী-সমর্থকদের। শিবিরগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করা হয়েছে । রাখা হয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স । বিভিন্ন ধরনের ওষুধও। নেতৃত্বের আশা, “ভিড়ের নিরিখে অতীতের সব রেকর্ডকে এবারের একুশ ছাপিয়ে যাবে।’’ গোটা শহরকে ঘিরে ফেলা হয়েছে কড়া নিরাপত্তায়। শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন কলকাতা পুলিশের ৩০ জন ডেপুটি কমিশনার। থাকবেন ৭০ জন অতিরিক্ত কমিশনার, ১৫০ জন ইনস্পেক্টর-সহ ৭৫০ জন পুলিশ আধিকারিক। মোতায়েন করা হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার পুলিশ কর্মী। থাকবে লালবাজারের কুইক রেসপন্স টিম। হাওড়া-শিয়ালদা-কলকাতা স্টেশনকে নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। ধর্মতলায় সভামঞ্চের আশপাশে থাকছে বম্ব স্কোয়াড। চারটি জোনে ভাগ করে ধর্মতলার সমাবেশকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাখছে লালবাজার। মঞ্চের কাছেই থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা দল।
২১ জুলাইয়ের জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ ড্রেসকোড। সম্পূর্ণ খাদির তৈরি। দলের পুরুষ কর্মীদের জন্য খাদির তৈরি ছাই রঙা পাঞ্জাবি। মহিলাদের জন্য খাদির ওড়না। তাতে থাকছে দলের প্রতীক। স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য থাকছে বিশেষ টি-শার্ট। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী সকল কর্মী-সমর্থকের জন্যই মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মঞ্চে এই বিশেষ খাদির পাঞ্জাবি পরে দেখা যাবে তৃণমূলের সমস্ত মন্ত্রী-বিধায়ককেই।