দার্জিলিং: পর্যটকদের ভ্রমণের আহ্লাদকে আটখানা করে দিল আচমকা শিলাবৃষ্টি। বুধবার শান্ত-নির্জন শৈলশহর দার্জিলিংয়ে বেড়াতে আসা মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন ঝরঝর করে পাথরকুচির মতো শিলা পড়তে দেখে। দুপুর নাগাদ হঠাৎই আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায়। দিনের বেলাতেও আলো জ্বেলে চলতে হয় গাড়িগুলিকে। তারপরই নেমে আসে টুপটাপ করে বরফের কুচি। মুহূর্তে জোড়বাংলো সহ বিভিন্ন রাস্তা সাদা বরফের চাদরে ঢেকে যায়। প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট শূন্য হয়ে যায়। কচিকাঁচারা খোলা জায়গায় নেমে পড়ে শিল কুড়াতে। বিশেষ করে বাঙালি পর্যটকদের মধ্যে আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায়। পাহাড়ের রানিকে শ্বেতসিক্ত বসনে দেখে সেই ছবিকে ক্যামেরাবন্দি করেন সকলেই।
এদিকে, জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয় দুপুরে। মেঘে গোটা আকাশ অন্ধকার করে এসেছে। পাশাপাশি চলছে শিলাবৃষ্টি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কা বাসিন্দাদের। জেলার মালবাজার মহকুমার চালসা, নাগরাকাটা, লাটাগুড়ি, মালবাজার জুড়ে শিলাবৃষ্টি। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন জায়গাতে অন্ধকার করে ধেয়ে আসছে ঝড় ও বৃষ্টি। শিলাবৃষ্টির কারণে বেশকিছু বাড়ির চালের টিন ফুটো হয়ে গিয়েছে৷ মাল শহরেও শিলাবৃষ্টি হয়। সঙ্গে ঝড়। এদিন দুপুর থেকেই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। হঠাৎই শুরু হয় তীব্র ঝড়ো হাওয়া। সঙ্গে মুষলধারায় বৃষ্টি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শিল পড়তে শুরু করে। বড় মাপের শিল পড়তেও দেখা যায়। ৩১ নং জাতীয় সড়কে গাড়ি দিনের বেলায় গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে শুরু করে। এছাড়াও ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকাতেই শুরু হয়েছে ঝড়বৃষ্টি।
আরও পড়ুন: Albinen | Switzerland | সুইজারল্যান্ডে থাকতে চান? ৫০ লক্ষ টাকার লোভনীয় অফার
এমনিতেই দার্জিলিংয়ে (Darjeeling) এখন পর্যটকদের জোয়ার। বিশেষত মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হতেই কলকাতার গরম এড়াতে অনেকেই অস্থায়ী ডেরা বেঁধেছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে। দার্জিলিং চিরকালই পর্যটকদের (Tourist) কাছে অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। শৈলশহরে সারাবছরই পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে পর্যটন মরশুম বলতে এপ্রিল থেকে মে মাস এবং নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত থাকে। মূলত কাঞ্চনজঙ্ঘা (Kangchenjunga), টয়ট্রেন (Darjeeling Himalayan Railway) ও চা বাগানের (Darjeeling Tea Garden) জন্য দার্জিলিং পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় স্থান।
পাহাড়ের টানে ফের পর্যটকরা দার্জিলিংয়ে আসতে শুরু করেছেন। এমন অবস্থা যে দার্জিলিংয়ের হোটেলগুলিতে অগাস্ট মাস পর্যন্ত সমস্ত রুম মোটামুটিভাবে বুক হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত গাড়িচালক থেকে শুরু করে হোটেল মালিক প্রত্যেকে খুশি। বহুদিন বাদে পর্যটনের এমন জোয়ার আসাতে ব্যবসায় ভালো লাভ হবে বলেই আশা তাঁদের।
মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে চারটি স্পেশাল জয়রাইড চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি জয়রাইডেই একটি অতিরিক্ত ফার্স্ট ক্লাস কোচ সংযোজন করা হবে। টয়ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে চললেও পর্যটকরা মূলত দার্জিলিং থেকে ঘুম হয়ে আবার দার্জিলিং ফেরা পর্যন্ত জয়রাইডগুলোই ইদানীং বেশি পছন্দ করছেন। সেই কারণে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের যাত্রী-সংখ্যা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। কম যাত্রীর জন্য ১ মার্চ থেকে ১০ জুলাই নিউ জলপাইগুড়ি-দার্জিলিংয়ের মধ্যে একটি এসি স্পেশাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
করোনার পর থেকে টয়ট্রেনের মাধ্যমে রেলের রোজগারও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। টয়ট্রেনকে দেশী বিদেশি পর্যটকদের কাছে আরও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে একে ঘিরে একের পর এক বিভিন্ন পরিকল্পনা সফল হওয়ায় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা ধরে রাখতে আর কোন সংশয়ই থাকছে না রেল কর্তৃপক্ষের।