এটিকে মোহনবাগান—২ নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড–১
(লিস্টন কোলাসো, শুভাশিস বসু) (অ্যারন ইভান্স)
টানা পাঁচটা ম্যাচ হেরে কলকাতায় খেলতে আসা নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড যে এটিকে মোহনবাগানের কাছে হারবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। দেখবার ছিল মোহনবাগান গোল করতে কতক্ষণ সময় নেয় এবং শেষ পর্যন্ত কত গোলে জেতে। কিন্তু শেষ দিকে গোল শোধ করে নর্থ ইস্ট যে মোহনবাগানের নাভিশ্বাস উঠিয়ে দেবে তার কোনও আগাম ইঙ্গিত ছিল না। তাই ৮৯ মিনিটে জয়ের গোলটা শুভাশিস বসু করার পর বাগানিদের সেলিব্রেশন দেখে বোঝা গেল, কী রকম ফাঁসের মতো তাদের গলায় চেপে বসেছিল নর্থ ইস্ট। শেষ পর্যন্ত শুভাশিসের গোলে মোহনবাগান তিন পয়েন্ট পেল, তাই হয়তো তিনিই ম্যাচের সেরা। কিন্তু এই পুরস্কারটা পেতেই পারতেন নর্থ ইস্ট গোলকিপার মির্শাদ মিচু। কত বার যে তিনি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন তা গুণে শেষ করা যাবে না। দুর্ভাগ্য তাঁর এবং তাঁর দলের। শেষরক্ষা হল না। টানা ছটা ম্যাচ হারতে হল নর্ধ ইস্টের। আর পাঁচ ম্যাচ থেকে ১০ পয়েন্ট তুলে মোহনবাগান উঠে এল দু নম্বরে।
মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো তাঁর প্রথম একদশে কোনও পরিবর্তন করছেন না। গোলে বিশাল কাইথ। চার ডিফেন্ডার আশিস রাই, প্রীতম কোটাল, ব্রেন্ডন হামিল এবং শুভাশিস বসু। তিন মিডফিল্ডার দীপক টেংরি, হুগো বুমো এবং জনি কাউকো। ফরোয়ার্ডে মনবীর সিং, দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং লিস্টন কোলাসো। এই কোলসো গত বচৃ যে ফর্মে ছিলেন এবার তার ধারে কাছে খেলতে পারছিলেন না। কিন্তু বৃহস্পতিবার তিনি নিজেকে ফিরে পেলেন। বাঁ দিকের প্লেয়ার লিস্টন তাঁর নিজের জায়গা দিয়ে বহু বার বল নিয়ে উঠেছেন। কাট করে ঢুকেছেন ভিতরে। পাসগুলো ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু তাঁর সতীর্থরা সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক পাওয়ার পর দিমিত্রি যেন কী রকম গুটিয়ে গেছেন। এদিনও সামনে শুধু মিচুকে পেয়েও বাইরে না মারলে ম্যাচের ফয়সালা হতে ৮৯ মিনিট লাগে না। মনবীর ভাল। কিন্তু তাঁর মধ্যে গোল করার ব্যাপারে ধারাবাহিকতার অভাব। আর প্রশংসা করতে হবে নর্ধ ইস্ট প্লেয়ারদের। কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলল তারা। নিজেদের ওজন বুঝে এছাড়া কিছু করা তাদের পক্ষে উচিতও ছিল না, সম্ভবও ছিল না। সামনের দিকে মাত্র জনা তিনেক ফুটবলার রেখে, ডিফেন্সে লোক বাড়িয়ে তারা মোহনবাগানের আক্রমণ রুখতে চেষ্টা করল। কিন্তু এটা ঠিক মতো করতে করতেই ৩৫ মিনিটে গোল খেয়ে গেল। তখন আক্রমণ করতে গিয়ে নর্থ ইস্টের প্লেয়াররা একটু এগিয়েই গিয়েছি। ডিফেন্স প্রায় ফাঁকা। এই সময় মাঝ মাঠে বল ধরে হুগো বুমো লম্বা থ্রু পাস বাড়ালেন লিস্টনকে লক্ষ্য করে। ডান দিক দিয়ে দৌড়ে বল ধরে লিস্টন খানিকটা দৌড়লেন। তার পর বক্সে ঢুকে ডান পায়ের কোণাকুণি শটে হার মানালেন মিচুকে। ভাল মুভমেন্ট থেকে ভাল গোল।
গোলের খোঁচা খেয়ে বিরতির পর নর্থ ইস্ট খোলস ছেড়ে বেরোল। খুব বেশি আক্রমণ না করলেও তারা ঝামেলা করতে শুরু করল। যার জন্য প্রথমার্দ্ধে যে বিশাল কাইথকে সেভাবে কোনও বলই ধরতে হয়নি, সেই কাইথকে অবস্থা সামাল দিতে বেশ কয়েকটা বল সেভ করতে হল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল কোথায়? এমিল বেনির কর্নার থেকে অস্ট্রেলীয় মিডফিল্ডার অ্যারন ইভান্স হেড করে গোল করে ম্যাচের সমতা ফেরালেন। তখন ৮২ মিনিট। এর পর যে মোহনবাগান গোল করে জিতবে তা ভাবা যায়নি। কিন্তু সেটাই করে দেখালেন ফেরান্দোর ছেলেরা। ৮৯ মিনিটে দিমিত্রির কর্নারে হেড করে গোল করলেন লেফট ব্যাক শুভাশিস বসু। পর পর দুদিন মোহনবাগান পয়েন্ট নষ্ট করতে করতে বেঁচে গেল। আগের দিন মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে হারা ম্যাচ বাঁচালেন কার্ল ম্যাকহাউ। আর এদিন দু পয়েন্ট নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচালেন শুভাশিস। এটাই চ্যাম্পিয়ন্স লাক। এই ভাগ্য শেষ পর্যন্ত মোহনবাগানের সঙ্গে থাকে কি না তাই এখন দেখার।