কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Shantanu Banerjee) ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অয়ন শীলের (Ayan Shil) বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ উঠে আসছে। শুধু চাকরি বিক্রিই নয়, জোর করে জমি দখল, এমনকি এজেন্ট লাগিয়ে টাকা তোলা, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মতো নানান অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে অয়ন গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে। সোমবার আদালতএ তোলা হয়েছিল অয়নকে। ১ এপ্রিল পর্যন্ত তাকে ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।
এবার শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির সুইসাইড নোটেও নাম পাওয়া গেল অয়ন শীলের। দাবি, চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলতে এলাকায় দালাল নিয়োগ করেছিলেন অয়ন। সেই টাকা নিয়েও চাকরি দিতে না পারায় শেষে আত্মঘাতী হন শ্রীকুমার এবং তাঁর ছেলে রূপকুমার। অথচ এলাকায় শ্রীকুমারের সুনামই ছিল।
আরও পড়ুন: Calcutta High Court | হাইকোর্টের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে ইডি
কী ঘটেছিল শ্রীকুমারের ক্ষেত্রে?
২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর হুগলির দেবানন্দপুরে শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে রূপকুমার আত্মঘাতী হন। শ্রীকুমারের সুইসাইড নোটে অয়নকে তাঁদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়। স্থানীয়দের দাবি, শ্রীকুমার ও তাঁর ছেলেকে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তোলার কাজে নিয়োগ করেছিল অয়ন। শ্রীকুমার দেবানন্দপুরের তৃনমূল নেতা ছিলেন। চাকরি করে দেবেন বলে দু কোটি টাকারও বেশি তিনি আদায় করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে। সেই টাকা অয়নকে দিয়েছিলেন শ্রীকুমার। হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে টাকা তোলেন বাবা ও ছেলে। কিন্তু অনেকেরইও চাকরি হয়নি। তাঁরা টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিতে থাকেন। সেই চাপেই আত্মঘাতী হন পিতা-পুত্র। স্থানীয়রা জানান, টাকা চাইলে গেলে অয়ন একবার শ্রীকুমারকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বার করে দিয়েছিল।
শ্রীকুমারদের প্রতিবেশী এক আইনজীবী স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায় জানান, গুরু (শ্রীকুমারের ডাকনাম) ডিএম অফিসে চাকরি করতেন। তাঁর স্ত্রী পূরবী সরকারি চাকরি করতেন। ছেলে রূপকুমার নিতান্তই গোবেচারা গোছের ছিল। স্নেহাশিস বলেন, অয়নের চাপেই ছেলেকে মেরে আত্মঘাতী হন শ্রীকুমার।আমরা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এতদিন পুলিশ হাত গুটিয়ে বসেছিল।
ভাঁওতা দিয়ে ফ্ল্যাট, দোকান হাতিয়ে নেওয়াতেও সিদ্ধহস্ত অয়ন, এমনটাই জানাচ্ছেন হুগলি জেলার বিভিন্ন প্রান্তের অনেকেই। চুঁচুড়া আখন বাজারে দত্ত সুপার মার্কেটে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে অয়নের। এক সময় এখানে কম্পিউটারের দোকান ছিল তার। মাকেটের মালিক রাধিকা দত্তের দাবি, ১৫০০ বর্গফুটের এই ফ্ল্যাট প্রথমে ভাড়া নেয় অয়ন। পরে তা কিনেও নেয় সে। কিন্তু ভাড়ার টাকাও দেয়নি অয়ন এবং ফ্ল্যাট কেনার টাকাও পাননি রাধিকা। সেই ফ্ল্যাট এখনও তালাবন্ধ অবস্থাতেই রয়েছে।