অমৃতসর: ধৃত অমৃতপাল সিংকে (Amritpal Singh) নিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (IAF) বিশেষ বিমান (Special Aircraft) অসমের ডিব্রুগড়ে (Dibrugarh) পৌঁছল। দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ মোহনবাড়ি বিমানবন্দরে নামে বিশেষ বিমান। খলিস্তানপন্থী নেতাকে ডিব্রুগড়ে নিয়ে আসা হবে, এটা জানার পর থেকেই বিমানবন্দরকে নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়। এমনকী অমৃতপালকে শহরের যে কুখ্যাত সেন্ট্রাল জেলে (Central Jail) রাখা হবে, সেখানেও কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, অমৃতপালের গ্রেফতারি নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস নেতা তথা সাংসদ রণদীপ সুরজেওয়ালা এদিন বলেছেন, ভারত-বিরোধী প্রচারককে কারা তোল্লাই দিয়েছে। জঙ্গিদের কারা সমর্থন করেছে? কী করে অমৃতপাল পালিয়ে যেতে পারে এবং এতদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে বলে প্রশ্ন তুলেছেন সুরজেওয়ালা। আবার ওদিকে অমৃতপালকে পঞ্জাব পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে ভগবন্ত মান সরকারের পুলিশকে সাবাশি দিয়েছেন দিল্লির আপের শিক্ষামন্ত্রী আতিশী। ছেলের গ্রেফতারি নিয়ে এতটুকু দুঃখের লেশমাত্র নেই তার বাবা-মায়ের মধ্যে। অমৃতের মা জানান, আমার ছেলে সিংহের বাচ্চা। সিংহের মতোই ধরা দিয়েছে সে। বাবার কথায়, বাহে গুরুর প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। সত্য একদিন প্রকাশ হবেই।
রবিবার ভোর। মোগা জেলার রোডে গ্রাম পুলিশে পুলিশ ছয়লাপ। যে গ্রাম এক সময় বিখ্যাত ছিল জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের (Jarnail Singh Bhindranwale) ‘পুরখোঁ কি’ ভিটে বলে। সেই একই গ্রাম থেকে বিস্ময়কর আত্মসমর্পণ আরেক খলিস্তানপন্থী (Pro Khalistan) নেতা অমৃতপাল সিংয়ের (Amritpal Singh)। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির নজর এখন এই গ্রামের দিকে। অমৃতপালের কাছ থেকে এখন গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করবেন, কীভাবে পাক (Pakistan) চরবাহিনী আইএসআই (ISI) তাকে সাহায্য করত।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারের আগে ওয়ারিশ পঞ্জাব দে-র প্রধানকে পুরোপুরি ঘিরে ফেলা হয়। যদিও পুলিশ গুরুদ্বারের ভিতরে ঢোকেনি বলে জানিয়েছেন পঞ্জাবের আইজি। সুখচ্যায়েন সিং গিল জানান, পুলিশ গুরুদ্বার ঘিরে ফেললেও ভিতরে ঢোকেনি। অমৃতপালকে বাধ্য করা হয়েছে বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করতে।
আরও পড়ুন: DA Case Supreme Court | সোমে সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি ঘিরে ফের অনিশ্চয়তার মেঘ
রবিবার খুব ভোরে অমৃতপাল এই গ্রামের গুরুদ্বারে আসে। সেখানে অনুগতদের সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলে, সে আত্মসমর্পণ করতে চলেছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, অমৃতপালের ইচ্ছে ছিল জনসমক্ষে সে ধরা দেবে। কিন্তু, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি তার সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এদিন অমৃতপাল বলে, গত এক মাসে সে পঞ্জাব পুলিশকে লোকচক্ষুর সামনে বেনকাব করে দিয়েছে। আপ মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের প্রকৃত মুখ প্রকাশ করে দিয়েছে। এজন্যই সে আত্মগোপন করে ছিল। আমাকে আদালতের সামনে অভিযুক্ত করা হবে জানি, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে নিষ্পাপ। ভিন্দ্রানওয়ালের ভাগনে যশবীর রোডে একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, শনিবার রাতেই অমৃতপাল পুলিশকে আত্মসমর্পণের কথা জানিয়েছিল। গুরুদ্বারে সকালে পুজোপাঠও করে সে। সকাল ৭টা নাগাদ পুলিশের কাছে ধরা দেয়।
এদিন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে অমৃতপাল সিং। রবিবার ভোরে মোগা জেলার রোডে গ্রামে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। প্রায় এক মাস পাঁচদিন পর পুলিশের কাছে ধরা দিল খলিস্তানপন্থী অমৃতপাল। গত ১৮ মার্চ থেকে পুলিশ তাকে ধরার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছে। তবে অমৃতপালের তথাকথিত আত্মসমর্পণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘদিন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়ালেও হঠাৎ করে কেন ধরা দিল সে? কেউ কেউ মনে করছেন নিরাপদ জায়গা থেকে আশ্বাস পাওয়ার পরেই অর্থাৎ তার সঙ্গে একটি গোপন চুক্তির পরই নাকি সে ধরা দিয়ে থাকতে পারে।
অমৃতপালকে গ্রেফতারির যে ছবি পাওয়া গিয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, মাথায় তার গেরুয়া রঙের পাগড়ি। সাদা কুর্তা। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেফতার করার পর অসমের ডিব্রুগড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেই আপাতত পুলিশের হেফাজতে রয়েছে অমৃতপালের আরও ৮ শাগরেদ ও ঘনিষ্ঠ।