কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (Chief Minister Mamata Banerjee) সঙ্গে শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) এত ভাল সম্পর্ক যে মুম্বই-কলকাতা এক ফোনে সমস্যা মিটে যেতে পারত। এমনিতেও এসআরকে (SRK) বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। ব্যাপারটা এতদূর গড়ানোর কথাই নয়।
কিন্তু গড়িয়েছে এবং এখন এমন পর্যায়ে যে গতকাল, সোমবার পাঠানো দু’পক্ষের শেষ বৈঠকের মিনিটস পাঠিয়ে কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation) শাহরুখের কেকেআর (KKR)-কে বলেছে আগামী সাত দিনের মধ্যে কিছু টাকা পুরসভা তহবিলে জমা দিয়ে ইডেনে ম্যাচ (Eden Match) করা সংক্রান্ত বাকি দেয় টাকার চূড়ান্ত হিসেবনিকেশে অবিলম্বে বসতে। ২০১০-২০১৯ ইডেনে ৬০ ম্যাচ আয়োজনের প্রমোদকরের দশ বছরের টাকা দেয়নি কেকেআর। পুরসভার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে। তারা আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। অন্য কোনও ডিফল্টার হলে হয়তো তারা আদালতেই চলে যেত। কিন্তু এটা আর পাঁচটা সংস্থা নয়। কেকেআর এবং শাহরুখ জড়িত। প্রেক্ষিতটাই আলাদা। একই সঙ্গে তারা মনে করে আইন হল আইন। একটা পর্যায়ের পর পদক্ষেপ নিতেই হয়। সে যে-ই জড়িত থাক।
১০ বছরের মোট বকেয়া বার্ষিক আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মুনাফার মাপে কিছুই না। মোট রোজগারের শতকরা ৫ ভাগেরও কম। অঙ্কটা দশ বছরে তিন কোটি টাকার কাছাকাছি। এর ওপর আইন মোতাবেক শতকরা ১৮ শতাংশ ইন্টারেস্ট বসতে পারে। মেয়র নিজস্ব অধিকারবলে সেই সুদের টাকা মকুবও করে দিতে পারেন। কিন্তু যে মূল অংকের টাকা দশ বছর ধরে দেওয়া হয়নি সেটা মকুব করা প্রায় অসম্ভব।
আরও পড়ুন: Rinku Singh | KKR | একা রিঙ্কু রক্ষা করে নকল কেকেআর গড়
এই বকেয়া টাকা নিয়ে কেকেআরের সঙ্গে পুরসভার সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক অচলায়তন তৈরি হয়ে রয়েছে। পুরসভা চায় ইডেনে ম্যাচ আয়োজনের প্রমোদকর। যা সিট পিছু ১৫ টাকা। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী ২০১০-১৯ কেকেআর ইডেন প্রমোদকর বাবত এক টাকাও পুরসভাকে দেয়নি। মাঝে তিনবছর ২০২০-২০২২ কোভিদের জন্য ইডেনে খেলা হয়নি। চলতি বছরের টুর্নামেন্টের বিল করাই হয়নি। তাহলে দেয় টাকার অঙ্ক আরও বাড়বে।
কলকাতা টিভি অনলাইন -এর তরফে মেয়রকে যোগাযোগ করা হলে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এখনই কিছু বলতে পারছি না। এই ফাইলটা এলে দেখে বলতে পারব।” তবে যতদূর জানা গিয়েছে, এবারের আইপিএলের শুরুতে কেকেআর কর্তা ভেঙ্কি মাইসোর যখন সল্টলেকে আরবান ডেভেলপমেন্টের অফিসে মেয়রের সঙ্গে সৌজন্যসাক্ষাৎ করতে যান তাঁকে এই বাকি টাকার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল অনেক দিন পড়ে রয়েছে। টাকাটা এবার মিটিয়ে দিতে।
পুরসভা এবার টাকা উদ্ধারে অনমনীয় দেখে কেকেআরের তরফে দুবাইবাসী তাদের ফিনান্স হেডকে কলকাতা পাঠানো হয়। তিনি পুরসভায় বসে বৈঠক করেন পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমারের সঙ্গে। কেকেআর প্রথমে প্রমোদকর সম্পূর্ণ মকুবের আবেদন জানিয়েছিল এই বলে যা তারা নিছক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়ে নেই। বরং জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলার মুখোজ্জ্বল করছে। তাদের ক্ষেত্রে কেন প্রমোদকরের টাকা মকুব হবে না? আইপিএল তো জলসা বা নিছক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নয়। কেন আর পাঁচটা অনুষ্ঠানের সঙ্গে তাদের আয়োজিত ১০ ম্যাচ গুলিয়ে ফেলা হবে?
পুরসভার কাছে এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য মনে না হওয়ায় কেকেআর নতুন দাবি তোলে যে বৃষ্টির জন্য কিছু ম্যাচ হয়নি। সেগুলোকে বাদ দিয়ে দেয় অর্থের পরিমাপ ঠিক করতে হবে। দুই, অনেক টিকিট তারা দিয়েছে কমপ্লিমেন্টারি হিসাবে। সেই সব সিটের ওপর তারা চেয়ারপিছু ১৫ টাকা করে কেন দিতে যাবে? প্রচুর দর্শক বা অতিথিকে যেখানে নিখরচায় খেলা দেখিয়েছে সেই সব সিটের ওপর কেন আবার কর ধার্য হবে? সেই বিপুলসংখ্যার আসন বাদ দিয়ে প্রমোদকর বিচার্য হোক উপযুক্তভাবে।
পুরসভা কমপ্লিমেন্টারি টিকিটের যুক্তি মানেনি। বলেছে কাকে আপনারা ফ্রি টিকিট দেবেন বা দেবেন না সেটা আপনাদের সিদ্ধান্ত। প্রমোদকর ধার্য হয় গোটা স্টেডিয়ামের আসনসংখ্যার ওপর। কিছু সিট বেছেবুছে নয়। আর পরিত্যক্ত ম্যাচের সংখ্যাও তারা হিসেব করে জানিয়ে দিয়েছে। মোট ৩। অর্থাৎ ৫৭ ম্যাচের প্রমোদকর বাকি রয়েছে কেকেআরের। কমিশনারের স্বাক্ষরিত মিনিটসে বলা হয়েছে আগামী সাতদিনের মধ্যে কিছু টাকা জমা করে বাকি বকেয়া অর্থ দ্রুত মিটিয়ে দিতে।
সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেই আশ্চর্য হচ্ছেন যে ভেঙ্কি মাইসোর দ্রুত ব্যাপারটা মিটিয়ে নিচ্ছেন না কেন? মধ্যবিত্তর কাছে যতই কয়েক কোটি টাকা বুকে ঘা দেওয়ার মতো শুনতে লাগুক। ইডেন থেকে শাহরুখ খানদের মোট মুনাফার পাশে টাকার অঙ্ক খুব নগণ্য। তাছাড়া এসআরকে-র শত্রুও বলতে পারবে না যে টাকাপয়সার ব্যাপারে তিনি কখনও কার্পণ্য করেন বলে। তাহলে কি তিনি অন্ধকারে? নাকি জানেন গোটা ব্যাপারটা?
যদি জানেন তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কার জন্য?
গোটা মরশুম জুড়ে কেকেআরের ব্যাটিং অর্ডার কী হবে যেমন বলা যায়নি। এর উত্তরও পাওয়া যাচ্ছে না।