চেন্নাই: বিজেপি (BJP) নেত্রীকে মাদ্রাজ হাইকোর্টের (Madras High Court) বিচারপতি (Judge) হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ নিয়ে নেটিজেন দুনিয়া তোলপাড়। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম (Supreme Court Collegium) গত ১৭ জানুয়ারি মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাদুরাই বেঞ্চের আইনজীবী লেক্ষ্মণা চন্দ্র ভিক্টোরিয়া গৌরীকে (Lekshmana Chandra Victoria Gowri) বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ মঞ্জুর করে। তারপর থেকেই নেট দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা, নিন্দা ও নানান মন্তব্যে দেওয়াল ছেয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলেও কেন্দ্র সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ভিক্টোরিয়া গৌরী হলেন বিজেপি মহিলা মোর্চার জাতীয় সাধারণ সম্পাদক। নাগেরকোয়েলের বাসিন্দা গৌরী মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাদুরাই বেঞ্চের আইনজীবী। এরকম একজন সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসকদলের নেত্রীকে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে উন্নীত করা নিয়েই প্রশ্ন জেগেছে দেশের মানুষের মধ্যে। অনেকে জানতে চেয়েছেন স্বাধীন ভারতে এরকম কোনও দৃষ্টান্ত অতীতে আছে কি? নেটিজেনরা জানতে চেয়েছেন, আইনজীবী গৌরী, যিনি নিজের নামের আগে চৌকিদার বসাতে ভালোবাসেন, তাঁর পদোন্নতির কথা ভাবা যেতে পারে। অথচ সামাজিক মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করার কারণে বাদ দেওয়ার যুক্তি খাড়া করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। এ কেমন ধারা ‘বিচার?’
আরও পড়ুন: Engineering Student Gokulraj Death: খুনের ঘটনায় মন্দির পরিদর্শনে মাদ্রাজ হাইকোর্টের দুই বিচারপতি
প্রসঙ্গত, এর আগে বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণ আইয়ার বামমনস্ক আইনজীবী তথা কেরলের বিধায়ক এবং মন্ত্রীও হয়েছিলেন। পরে কেরল হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টেরও বিচারপতি হিসেবে কাজ করেছেন আইয়ার। আদ্যন্ত শ্রমিক-কৃষকদের অধিকার রক্ষার লড়াই করা বৈদ্যনাথপুরম রামকৃষ্ণ আইয়ার আইনজীবীদের জন্যও সংগ্রাম করেছিলেন। দেশে গরিবদের জন্য আইনি সাহায্য দেওয়ার আন্দোলনের জনক ছিলেন তিনি। মানবাধিকার রক্ষা, সামাজিক বিচার এবং প্রকৃতি রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন আজীবন। ১৯৯৯ সালে তাঁকে পদ্মবিভূষণ দেওয়া হয়।
তৎকালীন মাদ্রাজ বিধানসভায় তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে জেতেন ১৯৫২ সালে। ১৯৫৭ সালে আবার নির্দল হিসেবে জেতেন। তাঁকে সমর্থন দেয় কমিউনিস্টরা। ইএমএস নাম্বুদ্রিপাদ মন্ত্রিসভায় তিনি স্বরাষ্ট্র, আইন, কারা, বিদ্যুৎ, সেচ, সমাজকল্যাণ ও জলমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৯-এর পর তিনি ফের আইন পেশায় ফিরে আসেন। ১৯৬৮ সালে তিনি কেরালা হাইকোর্টে এবং ১৯৭৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এই ঘটনার পরই একদল আইনজীবীর লেখা খোলা চিঠি টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয়। তাঁরা বিচারপতি হিসেবে আইয়ারের নিয়োগের তীব্র বিরোধিতা জানান। সেই ঘটনার পর এবার গৌরীর পদোন্নতির সুপারিশও নজর কেড়েছে সকলের।
২০১৯ সালের ৩১ অগাস্ট গৌরী একটি টুইটে লিখেছিলেন, আমি বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। আপনারাও বিজেপিতে যোগ দিন। নতুন ভারত গড়তে আসুন সকলে মিলে হাত মেলাই। প্রসঙ্গত, তাঁর এই টুইটের কয়েক মাস আগেই নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। মাত্র ৪৯ বছর বয়সি গৌরীর নাম মোট ১৭ জন আইনজীবীর মধ্যে ছিল। যে কারণে সকলকে পিছনে ফেলে গৌরীর নাম প্রস্তাবে অনেকেই ভ্রূ কুঁচকেছেন।
নেটিজেনদের দেওয়াল ভরে গিয়েছে নানান মন্তব্যে। কেউ বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির সরকারে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে খর্ব করে এটাকে ‘রসিকতা’র স্তরে নামিয়ে আনা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বিচারপতি হিসেবে গৌরীর গ্রহণযোগ্যতা ও সিনিয়রিটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।