ইমামি ইস্ট বেঙ্গল–০ রাজস্থান ইউনাইটেড–০
ডুরান্ডের দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়হীন ইমামি ইস্ট বেঙ্গল। তাও তাদের কপাল ভাল যে ম্যাচটা হারতে হয়নি। ৬২ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল রাজস্থান। বারবোজা জুনিয়রের দুর্বল সট আটকে দেন বৃহস্পতিবারের ইস্ট বেঙ্গল অধিনায়ক কমলজিৎ সিং। শুধু সেবারই নয়, কমলজিৎ এদিন কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে বেশ কয়েকবার লাল হলুদের পরিত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আই লিগের দল দুদিন আগেই মোহনবাগানকে হারিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। এদিন ইস্ট বেঙ্গলকে রুখে দিয়ে তারা বুঝিয়ে দিল মোহনবাগানকে হারানোটা নেহাতই অঘটন ছিল না। আর ইস্ট বেঙ্গল? পর পর দুই ম্যাচে গোল নেই তারকাখচিত দলের। রবিবার বহুদিন পর কলকাতায় ডার্বি হবে। টিকিটের হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু দুই দলের যা হতশ্রী পারফরম্যান্স তাতে ডার্বির মহিমা সেদিন রক্ষিত হয় কি না তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
ইস্ট বেঙ্গলের টিম ম্যানেজমেন্ট বলতেই পারেন, অনেক দেরিতে তাদের দল গঠন হয়েছে। বিদেশিরা এসেছেন মাত্র কয়েক দিন হল। প্র্যাক্টিসের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি। কোনও যুক্তিকেই অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু ইন্ডিয়ান নেভি, রাজস্থান ইউনাইটেডের মতো অখ্যাত অজ্ঞাত দলগুলির বিরুদ্ধে টিম গোল করতে পারবে না, এটা মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর। ময়দানের সাধারণ ধারণা হল, গত দু বছরের তুলনায় টিম এবার ভাল হয়েছে। কিন্তু প্রথম দুটি ম্যাচে যা নমুনা দেখা গেল তাতে সেই কথাটা কতটা সত্যি তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশেষ করে ফরোয়ার্ড লাইনে। গোল করার জন্য ইস্ট বেঙ্গল ভীষণভাবে তাকিয়ে ভি পি সুহেরের দিকে। ৬৯ মিনিট মাঠে ছিলেন এই দক্ষিণী স্ট্রাইকার। কিন্তু এমন কিছু করেননি যাতে তাঁকে মনে রাখতে হবে। এই অবস্থায় ইস্ট বেঙ্গলকে টানতে পারতেন ব্রাজিলিয়ান অ্যালেক্স লিমা। কিন্তু তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে ভাল খেলার বুট জোড়া তিনি জামশেদপুর এফ সি-র লকারে রেখে এসেছেন। তাঁর বদলি এলিয়ান্দ্রোও তথৈবচ। না আছে একটা ভাল ড্রিবল, না আছে একটা ভাল পাস। লিথুয়ানিয়া, মালটা, থাইল্যান্ডে খেলে আসা এই ব্রাজিলিয়ানের লাল হলুদ জার্সিতে দাঁড়াতে সময় লাগবে। বরং সাইপ্রাসের ডিফেন্ডার কিরিয়াকু প্রথম ম্যাচে মন্দ নন।
এই পরিস্থিতিতে লাল হলুদের পক্ষে বেশ ভাল খেললেন অনিকেত যাদব। মাঝ মাঠে ইস্ট বেঙ্গলের আক্রমণকে সচল রাখলেন তিনিই। পরের দিকে নেমে শৌভিক চক্রবর্তীও মন্দ নন। যদিও বক্সের মধ্যে রেমসাঙ্গাকে ফাউল করে রাজস্থানকে পেনাল্টি উপহার দিলেন তিনিই। মাঝ মাঠে অনিকেতের পাশে তুহিন দাসও যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু দলকে জেতাতে হলে তো দরকার সুদক্ষ স্ট্রাইকারের। সেই রকম স্ট্রাইকারই তো নেই। তবে ডুরান্ড তো প্র্যাক্টিস টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টে জয়-পরাজয় দিয়ে বিরাট কোনও অঙ্ক কষা ঠিক হবে না। স্টিভন কনস্ট্যানটাইন দক্ষ কোচ। ভারতীয় ফুটবল দলের দায়িত্বে ছিলেন। ভালভাবেই সামলেছেন তাঁর দায়িত্ব। টিমের হতশ্রী পারফরম্যান্স দেখে বারবারই বিরক্তি ধরা পড়ছিল তাঁর চোখে মুখে। ইস্ট বেঙ্গলকে ঠিক মতো দাঁড়াতে গেলে তাঁকে এখন অনেক বেশি খাটতে হবে।
রাজস্থান এবারের টুর্নামেন্টের আবিষ্কার। মোহনবাগানকে হারাবার পর ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে ড্র। এ রকম টিমকে মাথা নীচু করে স্যালুট করতে হয়। অখ্যাত, অজ্ঞাত ছেলেগুলো শৈষ দিকে দৌড় করিয়েছে লাল হলুদ ব্রিগেডকে। কপাল ভাল তাদের বলতে হবে পেনাল্টি শটটা খুবই বাজে মেরেছেন বারবোজা জুনিয়র। তাদের দলেও বলার মতো গোলগেটার নেই। রাজস্থানের বিরুদ্ধে দুবার পিছিয়ে পড়েও তারা তিনটে গোল করেছিল। এদিন পেনাল্টি ছাড়া সে রকম গোলের সুযোগ পায়নি। আর ইস্ট বেঙ্গল পর পর দুটো ম্যাচে একটাও গোল করতে পারল না। শত অজুহাতেও এই ব্যর্থতা মেনে নেওয়া যায় না।