দৃশ্য-১
মধ্যরাত পেরিয়েছে। কিন্তু মেরিন ড্রাইভ দিয়ে হাঁটলে সেটা বোঝার উপায় নেই। মেরিন ড্রাইভের রঙ তখন নীল। চোখে পড়বে শুধু নীল পোশাকের ভীড়। সঙ্গে স্লোগান- ‘ভারত মাতা কি জয়!’ ১২ বছর পর বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত- এটা তো হওয়ারই কথা। তবে এই মেরিন ড্রাইভেই এক ক্রিকেট ফ্যানের সঙ্গে আলাপ হল যিনি ম্যাচের দিন সকালে এসেছেন হায়দরাবাদ থেকে। নাম রিচা সাক্সেনা। আইটি-তে কর্মরত। ম্যাচ টিকিট কেটেছেন ৪০,০০০ টাকা দিয়ে! লেখার ভুল নয়, সত্যিই ৪০,০০০! ম্যাচ টিকিট এত টাকা দিয়ে কিনলেও কোনও হোটেল বুক করেননি। সারারাত মেরিন ড্রাইভেই কাটাবেন এবং মুম্বইয়ে এই সেলিব্রেশনের আমেজটা উপভোগ করবেন। ভোরে ফ্লাইট ধরে সোজা হায়দরাবাদ, ফাইনালের দিন আবার আমেদাবাদ। পরনে থ্রি কোয়ার্টারের সঙ্গে Virat 18 জার্সির রিচা বলছেন, ‘টিকিটের দাম আরোও বেশি হলেও কিনতাম। একটা ম্যাচ থেকে কী কী পেলাম জাস্ট একবার ভাবুন- ১। প্রথমত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতের ম্যাচ ২। বিরাট কোহলির ৫০তম ওয়ান ডে শতরান (সেটাও আবার স্বয়ং শচীনের সামনে) ৩। শ্রেয়সের শতরান ৪। সেনসেশনাল শামি ৫। সবশেষে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ১২ বছর পর টিম ইন্ডিয়ার বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছানো। আর কি চাই!!”
দৃশ্য ২
ম্যাচ তখন একদম জমজমাট। মিচেল-উইলিয়ামসন জুটি দুরন্ত ওয়াংখেড়ের বাইশ গজে। ফাইনালে যাওয়ার আশা তখনও ছাড়েনি ব্ল্যাক-ক্যাপসরা। একইসঙ্গে প্রেস বক্সে বসা নিউজিল্যান্ড থেকে আসা গুটিকয়েক ক্রিকেট কারেসপনডেন্টরাও। নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন ওয়াংখেড়েতে ম্যাক্সওয়েল মিরাকলের পর কি এবার মিচেল মিরাকল! অসম্ভকে সম্ভব করার আশায় বুঁদ তারাও। ঠিক সেই সময় প্রেসবক্সের নীচের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম ১৯৮৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তকে। প্রেসবক্সের নীচের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছেন। চোখে চোখ হতেই হেসে জানতে চাইলাম, ‘আপনিও কি টেনশনে?’ মুহূর্তে বললেন, ‘ক্যায়া তুম সমঝতা কিউ নেহি হ্যায় ইন্ডিয়া কো ইসবার ওয়ার্লড কাপ চ্যাম্পিয়ন হোনেকো হ্যায়। টেনশন লেনে কা কোই বাত হি নেহি হ্যায়। ম্যায় যো বোল দিয়া ইয়াদ রাখনা।’ একইসঙ্গে বললেন, ‘এই টিমটার পারফরম্যান্স দেখেছেন? সবাই পারফর্মার এবং ম্যাচ উইনার। ১৯৮৩ ও ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের থেকেও অনেক বেটার মনে হচ্ছে আমার। এবার ভারত বিশ্বকাপ না জিতলে সেটাই হবে সবথেকে বড় সেটব্যাক!’
দৃশ্য ৩
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের ৪০ ওভার পেরিয়েছে। পুরো ওয়াংখেড়ে জুড়ে তখনও ‘কোহলি’…’কোহলি’ কোরাস! কিন্তু স্বয়ং কোহলি মিড অফে দাঁড়িয়ে ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করলেন আমার নাম নিয়ে মহম্মদ শামির নাম নিন। মুহূর্তে ‘কোহলি কোহলি’ কোরাস বদলে গেল ‘শামি শামি’ স্লোগানে। বিরাট মঞ্চে ‘শামি’ বন্দনার অনুরোধ চেনালো ‘অন্য কোহলি’-কে।
ম্যাচ প্রায় শেষের দিকে। প্রেস বক্স থেকে বেরনোর মুখে দেখা রত্নাকর শেট্টির সঙ্গে। বললেন, ‘ভারত বিশ্বকাপ না জিতলে সেটাই হবে সবথেকে বড় অঘটন!’
দৃশ্য ৪
ম্যাচ কভার করে যখন হোটেলে ঢুকছি তখন প্রায় শেষ রাত। কিন্তু দেখে কে বলব? হোটেলের হল রুমে সেলিব্রেশন চলছেই। সঙ্গে বাজছে DDLJ-এর জনপ্রিয় সব গান। সঙ্গে সঙ্গে ভাবলাম, শাহুরুখ কোথায় এখন? দু’দিন আগে আলিবাগে সপরিবারে দিওয়ালি সেলিবেট করেছেন যতদূর জানি। ওয়াংখেড়েতে রনবীর-রজনীকান্ত-জন আব্রাহামের মতো বলিউডের সেলিব্রিটিদের দেখা গেলেও বলিউড বাদশা-র দেখা নেই। তাঁকে কি আমন্ত্রণ জানানো হয়নি? নাকি অতীতে ওয়াংখেড়েতে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচও দেখতে এলেন না??