ডেনমার্ক দলের সকলের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। এই গ্রুপের একজনের পোস্ট-ই সকলের অ্যাড্রিনাল ক্ষরণ কিন্তু অন্য খাতে বইয়ে দিয়েছে। তিনি আর কেউ নেই স্বয়ং ক্রিস্টিয়ান এরিকসন। যিনি ইউরো ২০২০ টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই মাঠে মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জ্ঞান হারান।
সেদিনের ঘটনা,ডেনিশ সমর্থকদেরই নয় – বিশ্বের সকল ফুলবলপ্রেমীদের আবেগের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছে। প্রথম দুটি ম্যাচে হারের পর, ডেনমার্ক অন্য চেহারা ধারন করেছে। পরপর দুটি ম্যাচে ৪ গোল করে দেয়। এরপর চেকদের বাধা টপকে সেমি ফাইনালে ডেনমার্ক। সামনে ইংল্যান্ড।
প্রতিটি ম্যাচ এখন বাড়িতে থেকে দলের দেখছেন দলের ‘নম্বর টেন’গেমমেকার ক্রিস্টিয়ান। আর আবেগঘন মেসেজ লিখে পাঠাচ্ছেন সতীর্থদের। চেক দলকে হারানোর পর, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচের লিখেছেন, ‘তোমাদের জন্য আমি গর্বিত’।
এবারের ইউরোতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে এরিকসেন হার্ট অ্যাটাক করে। হঠাৎই মাঠে লুটিয়ে পড়েন। এরপর হাসপাতালে যেতে হয়ে তাঁকে। সেই রাতেই পরে শুরু হওয়া সেই ম্যাচে ডেনিশরা হেরে গেলেও এখন তাঁরা শেষ আটের ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-১ গোলে হারিয়ে উঠে গেছে সেমিফাইনালে। দলটির অধিনায়ক সিমোন কায়ের বলেছেন তাঁদের এই এগিয়ে চলা এরিকসেনের জন্যই!
সেদিন ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ক্রিস্টিয়ান এরিকসন মাঠে জীবন মরণ লড়াই জেতেন সতীর্থ ফুটবলারদের জন্য। অধিনায়ক সিমন কায়ের এখনও বলে চলেছেন,’ক্রিস্টিয়ানকে মাঠের লড়াইয়ে পাচ্ছি না। কিন্তু আমরা জানি,তার জন্যই খেলে চলেছি।’
ডেনিশ দলের কোচ কাসপের হজুলমান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ জিতেই বলেছেন, ‘আমরা এরিকসনের হৃদয় নিয়ে খেলছি,খেলেও যাব। সেই এখন এই দলের প্রাণ ভোমরা।’
আরও পড়ুন – চেকদের হারিয়ে ডেনমার্কের অশ্বমেধের ঘোড়া এখন সেমিফাইনালে
হাসপাতালের বেডে শুয়ে দলের জন্য সেলফি তুলে গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন এরিকসন। সেই ছবিই আজ ডেনিশ টিমের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের প্রোফাইল ছবি হয়ে গেছে । দলের সকলের মনের ভাবটা হল, এরিকসনের হৃদয় আজ রোগাক্রান্ত। কিন্তু তার সেই আসল হৃদয় আজ দলের হৃদয় হয়ে গেছে। তা তরতাজা। সে মাঠে নেই, কিন্তু দলের সকলের মনে আছে। টিমের সঙ্গে আছে। তার সেই লড়াকু মেজাজ নিয়ে এখন ডেনমার্ক প্রতিটি ম্যাচ খেলছে। ইন্টার মিলানের এই ফুটবলার আদৌ আর মাঠে ফিরবেন কিনা জানা নেই। রবিবার, প্রথমবার বাড়ি থেকে বাইরে পা রাখলেন এরিকসন। এক ক্ষুদে ফ্যানের আবদারে তার সঙ্গে ফটোও তোলেন। সেই ছবি, নিমেষে ভাইরাল হয় সোশ্যাল মাধ্যমে।
দলের মিডফিল্ডার,যিনি চেকদের বিপক্ষে প্রথম গোলটি করেছিলেন সেই থমাস দেলানি বলেছেন,’এরিকসন আমাদের দলের সেরা ফুটবলার। ১০ নম্বর জার্সি তার। পারফেক্ট টেন সে। জীবন যুদ্ধ চলছে তার। সেই যুদ্ধে আমরা একে অপরের সঙ্গে আছি। ওয়ান ফর অল, অল ফর ওয়ান। এই হল, আমাদের স্লোগান। সে চেক ম্যাচ জেতার পর আমাদের গ্রুপে লিখেছে-এমন জয়ে সে গর্বিত। আমার তাকে আর গর্ব উপহার দিতে চাই। তাকে বুকে নিয়েই সব ম্যাচ সকলে খেলতে নামছি।’
ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও মেনে নিয়েছেন, ডেনিশ ডিনামাইটদের এক্স ফ্যাক্টর হয়ে গেছে ‘এরিকসন’। তার সেই মাঠের ঘটনা,সেই নিয়ে সেদিন সহ-ফুটবলারদের আবেগ গোটা বিশ্বে এক অন্য স্রোতে বয়ে চলেছে। সেই আবেগ ডেনিশ দলের জোশ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সমর্থকদের আবেগ দ্বিগুণ হয়েছে। সেই আবেগ দলকে টেনে নিয়ে চলেছে।
আরও পড়ুন- শুধু যে তোমারই জন্য ….
কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ শেষে ডেনিশ নেতা সিমোন কায়ের বলেছেন,’এরিকসনের অসুস্থতা দলটির মধ্যে বিশেষ কিছু ঢুকিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনার পর আমরা সকলে, বুঝতে পেরেছি যে-আমাদের মধ্যে কেউ যদি বিপদে পড়ে তাহলে তার জন্য কেউ না কেউ আছে। এটা আমাদের মানসিক নিরাপত্তা দিয়েছে এবং অবশ্যই ক্রিস্টিয়ানকেও একটা ভালো অনুভূতি দিয়েছে।’
এবারের ইউরো জয়ের জন্য ফেবারটি নয় ডেনমার্ক। সেটা খুব ভালো করেই জানেন ক্যাপ্টেন কায়ের। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়! এই কারণেই হয়তো সেমিফাইনালে ওঠার পর এখন ফাইনালেরও স্বপ্ন দেখছেন তিনি,’এটা ঠিক যে ফাইনালে পৌঁছে যাওয়া এক বিরাট ব্যাপার। কিন্তু আমরা ওয়েম্বলিতে ফাইনালের স্বপ্ন দেখছি এখন । এখনও আমাদের দলের সঙ্গে সেরা ফুটবলার’নম্বর টেন-এরিকসন’আছে তো।’
ছবি:সৌ-টুইটার।