প্রধানমন্ত্রী কি বাঙালি হতে চাইছেন? কেন বলছি? তাহলে শুনে নিন। এবার একটা গল্প বলি, গল্পটা সত্যি কি না আমি জানি না. কিন্তু যিনি আমাকে বলেছিলেন, তিনি অযথা মিথ্যেই বা বলবেন কেন? তাই এ গল্প সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সে অনেকদিন আগের কথা, বিটি রোডের ধারে, সিঁথির পরে, রাস্তার উপরেই ঠাকুরবাড়ি। বিরাট বাড়ির দোতলায় রাস্তার দিকেই এক বিরাট বারান্দা, আর রবি ঠাকুর তখন এই বাড়িতেই। বিকেল হলে ওই বারান্দায় পায়চারি করেন, পরনে আলখাল্লা, তখন একমুখ দাড়ি, আমরা এখন যেমন ছবিতে দেখি, ঠিক সেরকম। তো একদিন তিনি পায়চারি করছেন, হঠাৎ খেয়াল করলেন রাস্তার ধারে এক যুবকও পায়াচারি করছে, ঠিক তাঁর মতো হাত দুটোকে পিছনে দিয়ে। রবি ঠাকুর হাঁটছেন, সেও হাঁটছে, উনি ঘুরলে, সেও ঘুরছে, উনি দাঁড়ালে, সেও দাঁড়াচ্ছে। খানিক দেখে রবি ঠাকুর এক দারোয়ানকে দিয়ে ছেলেটিকে ডেকে পাঠালেন, ছেলেটি এল। রবি ঠাকুর জিজ্ঞেস করলেন, “আমার মতো করে হাঁটছ কেন?” ছেলেটি বলেছিল, আমি কবি হতে চাই। রবি ঠাকুর ভারি আমোদ পেয়েছিলেন, ছেলেটির সঙ্গে তাঁর আর কোনও কথোপকথনের বিবরণ নেই, সম্ভবত বলেছিলেন, বুঝিয়েই বলেছিলেন যে অনুকরণ করলেই কবি হওয়া যায় না, বসন রাঙালেই যেমন সন্ন্যাসী হওয়া যায় না। সেই ছেলেটি বুঝেছিল না বোঝেনি জানা নেই তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে এই কথা বোঝানোর মানুষই নেই। পুরো জীবনটাই, ওই বসন রাঙিয়ে পার করে দিলেন, এখন দাড়ি বাড়িয়ে রবি ঠাকুর হওয়ার চেষ্টা করেছেন। এক আধুনিক উদার শিক্ষক, দার্শনিকের ভূমিকায় নামতে চাইছেন এক কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অনর্গল মিথ্যে বলা এক গোঁড়া হিন্দু, জঙ্গি জাতীয়তাবাদী। আমরা জানি উনি রবিঠাকুর পড়ার ভান করছেন মাত্র, রবি ঠাকুর পড়েননি। একই সঙ্গে দুটো বই পড়া, খবরের কাগজ আর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করার মতোই এক সস্তা ভনিতা মাত্র। এটাও, ওই চা বেচা বা কুমির ধরার মতোই এক প্রকাণ্ড মিথ্যে, উনি এখন ইমেজ বিল্ডিং-এ ব্যস্ত। আসলে তিনি বাংলায় এসে বাঙালি হওয়ার চেষ্টা করছেন, সেটাই আমাদের বিষয় আজকে।
এই যে রেমাল এল, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু অংশে ক্ষয়ক্ষতি হল, আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাই নিয়ে কিছু বলেছেন? কোনও সাহায্য? প্রশাসনিক বৈঠক রাজ্যের অফিসারদের সঙ্গে? না। আমাদের মনরেগার টাকা কৃষকরা পাননি, কোনও কথা? তৃণমূল চুরি করেছে, বেশ, যদি জানেন যে মনরেগার টাকা চুরি হয়েছে, তাহলে সেই মামলায় কতজন গ্রেফতার হয়েছে? তদন্তের রিপোর্ট কোথায়? আবাস যোজনা চুরি হয়েছে? কতজন গ্রেফতার? কত টাকা উদ্ধার? একজনও নয়।
আরও পড়ুন: Aajke | লোকসভা নয়, বাংলার মানুষ বিধানসভার নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন
আসলে বাংলার মানুষকে না খাইয়ে মারার চেষ্টা চলছে, উনি ‘ও আমার দেশের মাটি’ বলে বাঙালি হওয়ার চেষ্টা করছেন, ভোটের সময় বাঙালি বনে গিয়ে যদি দুটো ভোট পাওয়া যায়। এর আগেও করেছেন, চোলায় চোলায় বাজবে জোয়ের ভেড়ি, আমরা শুনেছি। ওনার জানাই নেই বাঙালি মানে রবীন্দ্রনাথ নজরুল, ওনার জানাই নেই বাঙালি মানে রামমোহন বিদ্যাসাগর, ওনার জানাই নেই বাঙালি মানে কৃষক আন্দোলন, নকশালবাড়ি, ওনার জানাই নেই বাঙালি মানে সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল। ওনার জানা নেই বাঙালি মানে অকাদেমি আর নন্দন, বাঙালি মানে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান। ওনার জানাই নেই বাঙালি মানে জীবনানন্দ, শঙ্খ ঘোষ, ওনার জানাই নেই বাঙালি মানে ইলিশ চিংড়ি, নবমীতে পাঁঠার ঝোল, ওনার জানাই নেই বাঙালি মানে এক পাতেই ভোগের খিচুড়ি আর ইদের সেমাই। আর এসব আত্মস্থ না করে টেলিপ্রম্পটারে ও আমার ও আমার বলে চেঁচালেই বাঙালি হওয়া যায় না। আসলে উনি বহুরূপী সেজে ভোট ভিক্ষাতে নেমেছেন, বাংলার মানুষের জন্য নয়, বাংলার জন্য নয়, দুই গুজরাতি শিল্পপতির হাতে দেশ বেচে দেওয়ার প্ল্যান মাথায় নিয়ে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে মাঝেমধ্যেই ভোটের সময় এলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিকৃত উচ্চারণে বাংলা কবিতা আউড়ে বাঙালি হওয়ার চেষ্টা করেন, তা নিয়ে আপনাদের মতামত কী? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
ভোট এলেই বাঙালি হওয়ার সাধ জাগে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর। এমন নয়, উনি যে রাজ্যে যান, সেই রাজ্যেই এই নৌটঙ্কি করেন, ওড়িশা গেলে খানিক ওড়িয়া ভাষাতে বলেন, মহারাষ্ট্রে মারাঠি বলার চেষ্টা করেন, তামিল, মালয়ালম এসবও। যদি সারা বছর এসব শেখার চেষ্টা করতেন তাহলে কিচ্ছু বলার ছিল না, আসলে উনি ওই তিন লাইন আউড়ে আমাদের ভোট চাইতে আসেন, পুরোটাই বিশুদ্ধ নৌটঙ্কি।