কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক : ভোগী না ত্যাগের রাজনৈতিক ইতিহাস আছে অনেক। ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়। জন্ম ১৯১৫ সালের ১৭ এপ্রিল। ১২ অক্টোবর ১৯৯১ সালে মৃত্যু। ১৯৪০ দশকের গোড়ায় দেশের প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতার প্রতীক তাম্রলিপ্ত সরকার দিয়ে কিশোর বয়সেই যার রাজনীতিতে হাতে খড়ি দিয়ে শুরু। সেই বিশ্বনাথ মুখার্জি। যে সরকারে গঠনের সঙ্গে জড়িত আছে এই বাংলার তিন ঐতিহাসিক নাম সতীশ সামন্ত,সুশীল ধারা,অজয় মুখার্জি (বিশ্বনাথ মুখার্জির দাদা)।
১৯৭২ সাল থেকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রতিকৃত বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় ও তার সহধর্মীনি গীতা মুখোপাধ্যায় কাউন্সিলর,বিধায়ক ও ৭ বারের সাংসদ থাকতেন কলকাতার বো ব্যারাকের ( বৌ স্ট্রীট) কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাষ্টের একটা ছোট্ট ফ্লাটে। পিটিসি-দেশের ও বিদেশের বহু নক্ষত্রের পদপর্শ পড়েছিল বৌ ব্যারাকের (স্ট্রিটের) ওই ডি ১২ নং ফ্লাটে।
দেশের ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি আর্তমানুষের পাশে দাড়ানোর বহু ইতিহাস সাক্ষী আছে। সালটা ১৯৬৬ – দেশজুড়ে তখন খাদ্য আন্দোলন চলছে। খাদ্য আন্দোলনে মানুষকে সংগঠিত করতে স্বামী স্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়ে ঘুড়ে প্রচার, মিটিং, মিছিল করছেন।আর এই খাদ্য আন্দোলনের তারা নেতৃত্ব দিচ্ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম প্রথম সারির নেতা বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়।
১৯৬৪ থেকে ১৯৬৯ এম এর সি, ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৭ বিধায়ক (পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার একটা মানপত্রের ছবি আছে) তমলুকের মুখার্জি পরিবারের সন্তান।দাদা অজয় মুখার্জি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী,দেশের বাড়ির সব কিছু ছেড়ে এসে দেশের সেবা,আর্ত মানুষদের সেবায় নিয়োজিত প্রাণ।নিজেদের যা কিছু ছিল তাই দিয়ে হয়ত খুব ভালোমতই চলে যেত তাদের সংসার,তবুও সব লোভ,মায়া ত্যাগ করে মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন মুখার্জি দম্পতি।
সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা এতোটাই ছিল,সে সময় কমিউনিস্ট পার্টি মুখার্জি দম্পতি কে সেন্সর করেছিল।আর সেই সেন্সরের কারণ জানলে অবাক হবেন সেই সময় মেদিনীপুর জেলা জুড়ে বানভাসি অবস্থা। বিশ্বনাথ বাবু ও গীতা দেবী তাদের একমাত্র আড়াই বছরের অসুস্থ সন্তানকে বাড়িতে রেখে বেড়িয়ে পড়েছিলেন আর্ত মানুষের সেবায়।তাদের একমাত্র সন্তানের মৃত্যু হয়। তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক মুখার্জি দম্পতি র এই কৃতকর্মের জন্য দায়ী করে তাদের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে সেন্সর করে।
পার্টির কাজে দিল্লীতে থাকাকালীন অসুস্হ হয়ে পড়লে দিল্লীর এ আই এম এস এ মৃত্যু হয় এই সরল সাদা সিধে জীবন জাপনকারী কমিউনিস্ট নেতার।
১৯৯১ সালের ১২ ই অক্টোবর তার জীবনাবসনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন বলে মনে করেন কমিউনিস্ট নেতৃত্ব। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন তাঁর অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু তৎকালীন রাজ্যপাল ড নুরুল হাসান,একদা তাঁর সংগ্রামী সাথী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু,রাজ্যের প্রাক্তণ মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় সহ বিশিষ্টরা।