ইস্তানবুল: ঐতিহাসিক জয় পেলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এর্দোগান। সোমবার জয়ের পর দেশ ও জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ থাকার ডাক দিয়েছেন। আগামী ২০২৮ সাল পর্যন্ত তিনিই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন। টানা দু’দশক ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখার ইতিহাস রচনাকারী ৬৯ বছর বয়সি এর্দোগান দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং ইসলামপন্থী ভাবাদর্শের হয়েও যেভাবে প্রগতিশীল বিরোধী জোটকে কঠিন লড়াইয়ে পর্যুদস্ত করেছেন তা বিস্ময়কর। তাঁর জেতার সংবাদে রাজধানী ইস্তানবুলের রাস্তায় এর্দোগানের সমর্থকরা গাড়ির হর্ন বাজাতে শুরু করেন। আঙ্কারায় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে উল্লাসে ফেটে পড়েন দলীয় কর্মীরা।
উল্লাস-চিৎকার ও পতাকার ঢেউয়ের মধ্যেই এর্দোগান তাঁর দলের সমর্থকদের বলেন, আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশকে ঐক্য ও সংহতি বজায় রেখে চলতে হবে। এর জন্য হৃদয় দিয়ে আমি সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি। সম্পূর্ণ ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, এর্দোগান তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগলুকে চার শতাংশ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Vande Bharat NJP GHY | সোমবার নিউ জলপাইগুড়ি-গুয়াহাটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু
এর্দোগানের জয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ন্যাটোভুক্ত তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও সম্পর্ক উন্নয়নের কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ইউক্রেনের ভলোদোমির জেলেনস্কি সহ ইউরোপ ও আরবের রাষ্ট্রপ্রধানরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এর্দোগানকে। গত ১৪ মে হওয়া প্রথম দফার ভোটে ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল জোটের নেতা কামাল প্রেসিডেন্টকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী কোনও প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে পুনর্নির্বাচন করতে হয়। সেবার কামাল ও এর্দোগান ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় গত রবিবার দ্বিতীয়বার ভোটগ্রহণ হয়।
ইতিহাস রচনা করে ক্ষমতায় এলেও এখন এর্দোগানকে আরও কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে। যার প্রথমটাই হল, মুদ্রাস্ফীতি অথবা বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। বাজারদর আকাশছোঁয়া হয়ে যাওয়ায় তুরস্কের মানুষের এখন ক্রয়ক্ষমতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এছাড়াও সুইডেনের ন্যাটোভুক্তি তুরস্কের ভেটোর কারণে আটকে রয়েছে। তা নিয়েও আমেরিকা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। এর্দোগানের সামনে পড়ে রয়েছে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পুনর্গঠন কাজ।
উল্লেখ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভয়ঙ্করতম ভূমিকম্পে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের অধিকাংশটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সেই সব এলাকার মানুষের জীবনধারণ, জীবিকা ও আর্থিক পুনর্গঠনের কাজ করাও এর্দোগানের বিরাট চ্যালেঞ্জ। ফলে নির্বাচনে জিতলেও কাঁটার মুকুট নিয়েই সিংহাসনে বসতে চলেছেন তিনি, তা এককথায় বলা যায়।