কলম্বো: একেই বলে গণঅভ্যুত্থান। শনিবার সকাল থেকে ব্যর্থ প্রেসিডেন্টকে সরাতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা মানুষের অন্তরের তাগিদে। দেশের মানুষ খেতে পারছে না, অর্থনীতি থমকে, শিল্প নেই, জ্বালানি নেই, বিদ্যুতের কোনও ব্যবস্থা নেই। এই অবস্থায় মানুষ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তিনমাস আগে যে বিদ্রোহের সূচনা হয়, মাঝে তা একটু থমকে গিয়েছিল। কিন্তু বিদ্রোহের আগুন ধিকিধিকি জ্বলছিল। শনিবার কিছুটা আচম্বিতেই তাতে ঘি পড়ল। তাতেই সেই আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলে উঠল বিপুল তেজে।
এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে, কেউ জানে না। শনিবার যে জনসমুদ্র প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে তাঁর প্রাসাদ দখল করল, অফিস দখল করল, তার পিছনে কোনও রাজনীতি নেই। বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা সামনে আসেননি। জনতাই এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। আসলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে বলে দেশের মানুষ আর ঘরে বসে মার খেতে রাজি নয়। তাই তারা দলে দলে পথে নেমে পড়েছে। যে দৃশ্য দেখা গেল, তা আক্ষরিক অর্থে উত্তাল জনসমুদ্র।
শুধু প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ দখল করেই জনতা শান্ত হয়নি। তাঁর সাধের সুইমিং পুলে নেমে পড়ে সাধ মিটিয়েছে অনেক যুবক। রাজাপক্ষের রান্নাঘরে ঢুকে ইচ্ছেমতো খাবার খেয়েছে তারা। কেউ কেউ ঢুকে পড়েছে একেবারে তাঁর বেডরুমে। বহুমূল্য খাটে দুধসাদা চাদরে পা দিয়ে জনতা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ঘৃণা উগড়ে দিয়েছে।
পুলিসের সঙ্গে বিদ্রোহী জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ চলেছে দিনভর। রাজপথ রক্তাক্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছে যুবকরা। পরিস্থিতি কার্যত সরকারের আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছে। দেশের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়িযেছেন। সনত জয়সূর্যের মতো শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক পর্যন্ত টুইট করে প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে লেখেন, আপনার প্রাসাদে দেওয়াল লিখন স্পষ্ট। দয়া করে আপনি সরে দাঁড়ান।