দিল্লি: দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়ে উঠেছে। বল্লভভাই প্যাটেল ও বাবা সাহেব দেশকে পথ দেখিয়েছে। তাঁদের কাছেই ঋণী থাকবে দেশ। লালকেল্লায় ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলনের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে জহরলাল নেহরুকে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশের উন্নতিকল্পে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমি কর্মফলে বিশ্বাসী ভবিষ্যতবাণী করতে পারব না। দেশের নারী ও যুব সমাজের উপর আমার আস্থা আছে। দেশের বিকাশে তারাই অগ্রণী ভূমিকা নেবে। এতদিন ছিল সবকা সাথ, সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। এবার থেকে সবকা প্রয়াসে এগিয়ে আসতে হবে দেশের মানুষকে। দেশিয় পণ্য বেশী করে কিনতে হবে। এর ফলে ভারত স্বনির্ভরতার দিকে এগোবে। ৭ বছর আগে প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের ফোন আমদানি করতাম আমরা। বর্তমানে ৩০০ কোটি ডলারের ফোন রফতানিও করছি। বিশ্ব বাজারের বিক্রয়ের জন্য বাড়াতে হবে দেশিয় পণ্যের গুণগত মান। ”
দেশের নাগরিক জীবনে বিকাশের উদ্দেশে তিনি একগুচ্ছ পরকল্পনার কথা জানান, ১০০ শতাংশ গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরি হবে। উজ্জ্বলা সংযোগ মিলবে দরিদ্র মহিলাদের। দেশের প্রতিটি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকবে। কর আদায়ের পদ্ধতি সরলীকরণ করতে হবে। দেশে প্রতিটি ব্লক স্তরে হাসপাতাল হবে। তৈরি হবে আরও অক্সিজেন প্ল্যান্ট। ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে দেশজুড়ে ৭৫ হাজারেও বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হবে।
কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতিতে খেলাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। দেশ অলিম্পিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। খেলায় উন্নতি করেছে মেয়েরাও। নারীশিক্ষার বিস্তারে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী জানান সেনাবাহিনীর স্কুলে পড়াশোনা করতে পারবে সব মেয়েরা।
কয়েক বছরের মধ্যেই উন্নয়নের সব স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে হবে।”। এদিন তিনি বলেন, ” এদেশে বড়সড় বদল আনতে গেলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। ৭০ থেকে ৭৫ বছরের সমস্যা মাত্র কয়েক বছরে মেটার নয়। জল জীবন প্রকল্প শুরুর মধ্যেই সাড়ে সাত কোটি মানুষের ঘরে পানীয় জল পৌঁছে গেছে। গরিবের কাছে পৌঁছে যাবে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন চাল। ১০০ শতাংশ মানুষের কাছে সরকারি সুবিধা পৌঁছে গেলে কোনও বিভেদ থাকবে না।
আরও পড়ুন: নাবালিকার বিয়ে রুখল ব্লক প্রশাসন, কাঠগড়ায় পঞ্চায়েত প্রধান
অতিতে কৃষক নীতি নিয়ে গুরুত্ব দেয়নি সরকার। এখন তাঁদের কথা ভেবে কৃষি আইনে সংশোধন করা হচ্ছে। ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো হোক, ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হোক, ছোট কৃষকদের হাত মজবুত করতে কাজ করছে আমাদের সরকার। চাষ-আবাদের খরচার কথা মাথায় রেখে পিএম কিষাণ নিধি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে।দেড় লক্ষেরও বেশি কৃষক এই প্রকল্পে টাকা পাচ্ছে। আগামীদিনে দেশ গর্ব করবে কৃষকদের নিয়ে। দেশের কোনও অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষ পিছনে পড়ে থাকবে না। সবাইকে বোঝাতে হবে সরকার তাদের পাশে আছে, তাদের উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা করছে।”
আরও পড়ুন:স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্রের কোপ, আত্মঘাতী স্বামী
৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে অমৃত কালের সূচনা করলেন মোদি। লালকেল্লার ভাষণে তিনি বলেন, ১০০ বছরে স্বাধীনতার অমৃত মহোত্সব হবে। তার আগে অমৃতকালে ভারত গড়ার লক্ষঅয় নিয়ে এগবে সরকার। ১০০ বছরে উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে যাবে ভারত। দেশে দুনিয়ার সমস্ত আধুনিক প্রযুক্তি থাকবে। মানুষের জীবনে দখলদারি থাকবে না। বিশ্বের যেকোনও উন্নত দেশের থেকে কম থাকবে না ভারত।
ভারতের রেল পরিবহণ আগের চেয়ে আধুনিক হয়েছে। অমৃত মহোৎসবের ৭৫ সপ্তাহে ৭৫ বন্দে ভারত ট্রেন দেশকে সংযুক্ত করবে। যে গতিতে বিমানবন্দর গড়ে উঠছে, তা অভূতপূর্ব। প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি ন্যাশনাল প্লান্ট খোলা হবে। ১০০ লক্ষ কোটির এই প্রকল্প যুবসমাজের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে। গতিশক্তি এমন একটি পরিকাঠামোগত প্রকল্প, যা আমাদের অর্থনীতিকে পথ দেখাবে। দেশের পরিবহণ ব্যবস্থাকে সংযুক্ত করবে রেলের এই বিশেষ পদক্ষেপ।
করোনা মহামারির সঙ্গে লড়াই করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশে দাড়িয়ে টিকা তৈরি করেছে ভারত। সেই টিকা অন্যান্য দেশেও বণ্টন করা হয়েছে। নিজের টিকা নিজে না বানাতে পারলে অতিমারি পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে যেত।
তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার এসে ৭০-৭৫ বছর ধরে জমে থাকা সমস্যার একে একে সমাধান করেছে। রাম মন্দির সমস্যা মিটেছে, জিএসটি ব্যবস্থা চালু করা গেছে, ৩৭০ ধারা বিলোপ করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি করোনা কালেও দেশে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। তিনি বলেন, দেশে স্বাধীনতার ১০০ বছরের সময় যে প্রধানমন্ত্রী থাকুন না কেন, আজকের নেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপকেই তিনি অনুসরণ করবেন। ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়ে জানান, ২১ শতকে ভারতের স্বপ্নপূরণ কেউ রুখতে পারবে না।