কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: এই মুহূর্তে বিজেপিই যে দেশের সামনে বড় বিপদ আবারও তা বুঝিয়ে দিল সিপিএম। আসন্ন ২৩তম পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাবে (CPIM Party Congress Resolution) বিজেপিকেই প্রধান বিপদ বলে উল্লেখ করেছে ওই বাম দল। তাদের বিচ্ছিন্ন ও পরাস্ত করাই আশু কর্তব্য, এমনটাই মনে করছে সিপিএম(CPM)। এজন্য দলকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্যান্য বাম শক্তিকেও ঐক্যবদ্ধ করার পক্ষে সওয়াল করেছে সিপিএম।
আগামী এপ্রিল মাসে কেরলে বসছে সিপিএমের ২৩তম পার্টি কংগ্রেস। এ মাসেই তা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে পার্টি কংগ্রেস পিছিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার দিল্লিতে পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
এই খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের সামনে বিজেপিই এখন মূল বিপদ। বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতা এবং নয়া উদারনীতির জোড়া আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই গড়ে তুলতে হবে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকে বিজেপি তার আগ্রাসী মনোভাব আরও তীব্র করেছে। ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে রাজনীতির মোড়কে পরিবেশন করছে বিজেপি।
আরও পড়ুন: UP Election 2022: কংগ্রেসের প্রচারে ‘তারকা তালিকা’য় ঢুকলেন গুলাম নবি আজাদ, বাদ পড়লেন রাজ বব্বর
রাজনৈতিক খসড়া প্রস্তাবে সিপিএমের আরও অভিযোগ, বিজেপি জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে দিয়েছে, নাগরিকত্ত্ব সংশোধনী আইন এনেছে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের কথা মাথায় রেখে। বিজেপি শাসনে মানুষ ন্যূনতম অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এক কথায়, বিজেপি আরএসএসের হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। সিপিএম মনে করে, এর বিরুদ্ধে বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জরুরি। এর জন্যই সংসদের ভিতরে ও বাইরে অবিজেপি দলগুলের সঙ্গে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।
ওই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বিজেপি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে গেলে দলকে আরও মজবুত করতে হবে। আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকতে হবে। সিপিএমের দাবি গত কয়েক বছরে বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে বিজেপিকে কিছুটা ধাক্কা দেওয়া গিয়েছে।
বিগত পার্টি কংগ্রেসেও সিপিএম বিজেপিকে বড় বিপদ বলে উল্লেখ করেছিল। বলা হয়েছিল, কংগ্রেস ও বিজেপিকে এক বন্ধনীতে ফেলা ঠিক হবে না। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট হতে পারে না। গত বছর রাজ্য সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোটে কংগ্রেস এবং আইএসএফের সঙ্গে জোট বেঁধে সংযুক্ত মোর্চা গঠন করেছিল। তা নিয়ে বঙ্গ সিপিএমের অন্দরে কম বিতর্ক হয়নি। অভিযোগ উঠেছিল, আলিমুদ্দিন স্ট্রিট দলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন মানেনি। পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্তকেও লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিধানসভা ভোটে এই প্রথম সিপিএম বা বমেরা একটি আসনও পায়নি, যা নজিরবিহীন।
আরও পড়ুন:China Bridge Pangong Lake: লাদাখে প্যাংগং হ্রদে চীনের সেতু বেআইনি, দাবি কেন্দ্রের
আগের মতো আগামী পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তাবেও বিজেপিকে পরাস্ত করার ডাক দিয়েছে সিপিএম। যখন যেমন ভোট হবে তখন বিজেপি বিরোধী সমস্ত ভোটকে সংহত কারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাবে। একই সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলিকেও সঙ্গে নিয়ে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রাম চায় সিপিএম। তাদের মতে কংগ্রেস দুর্বল হয়ে পড়ায় ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আনতে পারছে না।
খসড়া প্রস্তাবে সিপিএমের আরও বক্তব্য, তৃণমূল সিপিএম তথা বাম বিরোধিতা থেকে এখনও সরতে পারেনি। তারা এক সময় এনডিএ-র শরিক হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও ছিল। সেই তৃণমূলই এখন দেশে বিজেপি বিরোধিতার প্রধান মুখ হতে চাইছে। ধর্মনিরপেক্ষ বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করার কথা বলা হলেও তৃণমূল যে তার মধ্যে পড়ে না, তাও শুক্রবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।