কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: আমার আপনার ব্যক্তিগত তথ্য শুধু চুরি না, একেবারে রাহজানি হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। আর সেই সব তথ্যের যাবতীয় খুঁটিনাটি বিক্রির জন্য বাজার খুলে বসেছে তথ্যবিক্রির দালালেরা। গাঁটের কড়ি খরচ করলেই যে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি ওই সব তথ্যের মালিকানা পেয়ে যাবেন মুহূর্তে। কোটি কোটি সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতের মুঠোয় চলে আসবে। একটি বেসরকারি সংস্থার তদন্তে উঠে এসেছে এরকম চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কলকাতা থেকে ফরিদাবাদ হোক বা বেঙ্গালুরু থেকে ঔরঙ্গাবাদ। অসংখ্য ভারতীয়ের তথ্যের উপর প্রতিমুহূর্তে নজর রাখছে তথ্য-দালালেরা। প্রতিদিন তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। ফরিদাবাদের একজন বাসিন্দার কথা ধরা যাক। তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে না চিনলেও, তিনি যে গত সপ্তাহে একটা লাল রংয়ের হাতব্যাগ কিনেছেন তা দালালচক্রের জানা। শুধু তাই নয় তিনি কোন অনলাইন অ্যাপ থেকে কিনেছেন, ওই ব্যাগের কত দাম, তিনি নগদে কিনেছেন নাকি কার্ডে কিনেছেন, কুপন ব্যবহার করেছেন কি না, এই সমস্ত খুঁটিনাটি পাচার হচ্ছে প্রতিদিন। বা ধরা যাক ঔরঙ্গাবাদের এক বাসিন্দার কথা। নিয়মিত জোম্যাটো অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন তিনি। শেষ অর্ডার করেছেন ২০০ গ্রাম ধোকলা। খরচ করেছেন ২৪২টাকা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই তথ্য বিক্রি করে তথ্য-দালালেরা না হয় অর্থ উপার্জন করছেন। কিন্তু যাঁদের কাছে বা যে সব সংস্থার কাছে বিক্রি করছেন তাঁদের কী লাভ? ইন্ডিয়ামার্ট, ইনস্টামোজো, ইউ-টিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মত সোশাল মিডিয়ায় ঝাঁপি খুলে বসে আছে দালালেরা। বেসরকারি তদন্তকারী সংস্থাটি এ রকম পঞ্চাশটি তথ্য-দালাল সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
তিনটি পৃথক সংস্থার কাছ থেকে তথ্য কেনে ‘দ্য মর্নিং কনটেক্স’ নামের সংস্থাটি। হাতে চলে আসে সব মিলিয়ে ৫ কোটি ৭৮ লক্ষ তথ্য। তদন্তকারী সংস্থা জানতে পারে ওই সমস্ত ডেটার পিছনে যে অনলাইন লেনদেন তা ডেবিট কার্ড, ইউপিআই অ্যাপ বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা ওই বিপুল সংখ্যক তথ্যের ভিতর থেকে কুড়ি জন গ্রাহককে ফোনে যোগাযোগ করে। দশ জন জানান, তাঁদের ইউজার আইডিতে কমবেশি সমস্ত তথ্যই দেওয়া। বাকি দশ জনকে বলা হয় তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। গ্রাহকেরা জানান, এ ধরনের কোনও অনুমতি তাঁরা দেননি।
তথ্য তো হাতে এল, এ বার? তদন্তকারী সংস্থা জানাচ্ছে এই সমস্ত ডেটা থেকেই তাদের হাতে চলে আসছে গ্রাহকের প্যান কার্ডের খুঁটিনাটি। আগে এই ধরনের তথ্য বিক্রি হত ডার্ক ওয়েবে ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে। কিন্তু এখন অনলাইনের বাজারে এই সব জলভাত। মাত্র ২ থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে হাতে চলে আসছে কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য। গত সপ্তাহেই অনলাইন লেনদেনের গেটওয়ে ‘ইনস্টামোজো’ তাদের পেজ থেকে একটি বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেয়। কোটি কোটি সাধারণ মানুষের প্যান-কার্ডের যাবতীয় তথ্য অনলাইনে বিক্রি হচ্ছিল।
পাচার হওয়া তথ্য তা হলে কোথায় যাচ্ছে? যাচ্ছে বিভিন্ন স্টার্ট-আপ সংস্থার হাতে। ই-মেল এবং টেক্সটের মাধ্যমে গ্রাহকদের টার্গেট করা করা হচ্ছে। আর্থিক সংস্থাগুলি সম্ভাব্য গ্রাহকদের টার্গেট করছে। ক্রেডিট কার্ড, বিমা সংস্থা গ্রাহকদের টার্গেট করছে। জালিয়াতরা ব্যাঙ্ক, টেলিফোন, বিভিন্ন সংস্থার নামে ভুয়ো পরিচয়ে ফোন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে। যেমন কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাং।
এ এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে এ দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ। ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তাঁদেরকেই গিনিপিগ বানাচ্ছে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ডেটাবেস বাজার’।