এটিকে মোহনবাগান–১ ইমামি ইস্ট বেঙ্গল–০
(সুমিত পাসি–আত্নঘাতী গোল)
ইনভেস্টর বদলেছে ইস্ট বেঙ্গলের। কিন্তু ডার্বিতে তাদের দুর্ভাগ্যের পরিবর্তন হল না। গত দু বছরের আই এস এল ডার্বির চারখানা ম্যাচেই হেরে ফিরেছিল লাল হলুদ শিবির। রবিবার ডুরান্ড ডার্বিতেও তাদের একই দুরবস্থা হল। এটিকে মোহনবাগানের মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ম্যাচ দেখতে হাজির ছিলেন সল্ট লেক স্টেডিয়ামে। রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় তাঁর সামনেই দাপিয়ে খেলল মোহনবাগান। কিন্তু সারা ম্যাচে তাদের সুপ্রিম্যাসিকে গোলে পরিবর্তন করতে পারেনি তারা। পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো ইস্ট বেঙ্গলের আত্নঘাতী গোলে জিততে হল তাদের। মাঠ ভরা সমর্থকদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল বাগান সমর্থক। মরসুমের প্রথম ডার্বিতে তাদের জয়ে তারা নিশ্চয়ই উৎফুল্ল। কিন্তু আত্নঘাতী গোলে জয়ে তাদের মন নিশ্চয়ই ভরেনি। এবং এই জয়ের মধ্য দিয়েই ডুরান্ডে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল মোহনবাগান। প্রথম ম্যাচে হার, তারপর ড্র। এবার জিৎ। তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেল মোহনবাগান। বি গ্রুপে তাদের শেষ ম্যাচ দুর্বল ইন্ডিয়ান নেভির বিরুদ্ধে। উল্টো দিকে গ্রুপ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার কাজটা বেশ কঠিন হয়ে গেল ইস্ট বেঙ্গলের। কারণ তিন ম্যাচে তাদের পয়েন্ট মাত্র দুই। তিন ম্যাচে তাদের কোনও গোল নেই। শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিধর মুম্বই সিটি এফ সি। ইস্ট বেঙ্গল টিমের যা অবস্থা গ্রুপ থেকেই না বিদায় নিতে হয়। মরসুমের প্রথম ডার্বিতে তারা কিস্যু খেলতে পারেনি এটা স্বীকার করে নেওয়াই ভাল।
ইস্ট বেঙ্গলের ফরোয়ার্ড লাইন বলে কিছু ছিল না। এ রকম নির্বিষ, ন্যাতানো ফরোয়ার্ড লাইন নিয়ে ইস্ট বেঙ্গলে শেষ কবে খেলতে দেখা গেছে তা মনে করা মুশকিল। সারা ম্যাচে বাগান গোলকিপার বিশাল কাইথকে একটা কঠিন বলও ধরতে হয়নি। তবু যে ম্যাচটা স্টিভন কনস্ট্যানটাইনের টিম মাত্র এক গোলে হারল তার জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে তাদের ডিফেন্সকে। মোহনবাগানের সামনের দিকটা তো দুর্দান্ত। তিন বিদেশি কার্ল ম্যাকহিউ, হুগো বুমো এবং জনি কাউকো বহু দিন এক সঙ্গে খেলছেন। তাঁদের সঙ্গে লিস্টন কোলাসো এবং দীপক ট্যাংরির সমঝোতা বেশ ভাল। নবাগত আশিক কুরিয়ানের এদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে। কিন্তু ছয়জনের মধ্যে একজন সামান্য বেমানান হলে কিছু যায় আসে না। মোহনবাগানের নিরন্তর আক্রমণে তাই কোনও ভাঁটা পড়েনি। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গলের সামনের দিকের প্লেয়ারদের তো দাঁত বা নখ বলতে কিছু ছিল না। এই যে অ্যালেক্স লিমা বলে ব্রাজিলের মিডফিল্ডারটি সারা ম্যাচেই খেললেন। কিন্তু একবারও জাত চেনাতে পারেননি। এদিনের ম্যাচে তিনি নেহাতই প্যাসেঞ্জার। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার এলান্দ্রোও তধৈবচ। একটা ভাল শট ড্রিবল বা পাস তাঁর পা থেকে বেরোয়নি। বিরতিতে তাঁকে বসিয়ে আরেক ব্রাজিলিয়ান ক্লেটন সিলভাকে নামালেন স্টিভন। কিন্তু তিনিও একটা দুর্বল শট ছাড়া কিছু করতে পারেননি। তবু মন্দের ভাল বলতে হবে দুই সেন্টার ব্যাক কারিয়ুকু এবং ইভান গঞ্জালেসকে। বাগানের অ্যাটাকারদের তাঁরা বেশ ভালভাবেই সামলালেন। জুয়ান ফেরান্দোর তো সেট টিম। নতুন ডিফেন্ডার পল পোগবার দাদা ফ্লিওরিন্তিন কামন খেলেন তা দেখার খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু লাল হলুদ আ্যাটাকাররা তো তাঁর পরীক্ষাই নিতে পারলেন না। তাঁর পাশে প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসু, আশিস রাইরা একটা ডার্বি খেললেন নিশ্চিন্তে। আশিস মাঝে মাঝেই উঠে যাচ্ছিলেন গোল করার নেশায়। গোল পাননি সেটা অন্য কথা। কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগের প্রশংসা করতেই হবে।
আগেই বলেছি বাগান তাদের প্রাধান্য বা বল পসেসনকে গোলের সুযোগে পরিণত করতে পারেনি। শুরু থেকেই লিস্টন কোলাসো বল ধরলে মাঠে বিরাট চিৎকার হল। বাঁ দিক দিয়ে লিস্টন তাঁর দুরন্ত গতিতে ভাল উঠছিলেনও। কিন্তু একে বড় ম্যাচের চাপ, তার উপর ভরা গ্যালারির সামনে ম্যাচ না খেলার অভিজ্ঞতা লিস্টনকে তেমনভাবে ফণা তুলতে দেয়নি। বাগানের আক্রমণের উৎস ছিলেন সেই দুই বিদেশি–জনি কাউকো এবং হুগো বুমো। লাল হলুদ ডিফেন্সকে বাগে আনতে না পেরে তারা দূর থেকে শট নেওয়া শুরু করেন। বেশির ভাগ শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। আর যেগুলো গোলের দিকে গেছে সেগুলো কমলজিতের জোড়া হাতে আশ্রয় নিয়েছে।
আসলে সবে মরসুম শুরু হয়েছে। দু দলের ফুটবলারদের তেমন আড় ভাঙেনি। আর ইস্ট বেঙ্গলের তো প্র্যাক্টিসটাই ঠিক মতো হয়নি। বিরতির পর নেমে তাই অনিকেত যাদব কিংবা হিমাংশু জাংরারা কিছুই করতে পারেননি। প্রথমার্দ্ধ যখন প্রায় শেষ হব হব তখনই ম্যাচের এক মাত্র গোল। ৪৬ মিনিটে লিস্টন কোলাসোর কর্নার ক্লিয়ার করতে যান সুমিত পাসি। বল তাঁর পায়ে লেগে গড়াতে গড়াতে গোলে ঢুকে যায়। এবং ওই গোলেই আড়াই বছর পরে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ডার্বিতে জিতে গেল মোহনবাগান। মনে হয় না, এই টুর্নমেন্টে আর দু দলের দেখা হবে। কলকাতা লিগে মোহনবাগানের খেলা অনিশ্চিত। পরের ডার্বি হয়তো সেই আই এস এল-এ। তত দিনে দুটো দলই তৈরি হয়ে যাবে। এ রকম ম্যাড়মেড়ে ডার্বি আর দেখতে হবে না।