কলকাতা: তিন বছর চুপ করে থাকার পর এনফোর্স ডাইরেক্টরেট কলকাতা টিভির সম্পাদককে হঠাৎ ডেকে পাঠায়। এ বার নোটিস পাঠাল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। চ্যানেলের সম্প্রচার-স্বত্ত্ব নবীকরণ নিয়ে ওই নোটিস পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের বক্তব্য, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে অনুমোদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দিয়ে থাকে তা কলকাতা টিভির ক্ষেত্রে খারিজ হয়ে গিয়েছে।
কলকাতা টিভির বক্তব্য, হ্যাঁ ঠিকই খারিজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কোন যুক্তিতে তা বলা হয়নি। তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক কলকাতা টিভির ওই আবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রের জন্য ফরওয়ার্ড করেছিল। কেন্দ্র সাত দিনের মধ্যে এই নোটিসের জবাব চেয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে কেন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হবে না।
#সংবাদমাধ্যমেরস্বাধীনতা#কলকাতাটিভিরপাশেদাঁড়ান@MamataOfficial @abhishekaitc @Dolasen7 @Sukhendusekhar @ItsYourDev @rajchoco4 @sayani06 @RitabrataBanerj @DEV_PvtLtd @MahuaMoitra @nusratchirps @SushmitaDevAITC @jawharsircar @SantanuSenMP @MukulR_Official @FirhadHakim https://t.co/knQOAzsQI7
— Kaustuv Ray (@kaustuvray) September 28, 2021
কেন হঠাৎ করে ইডি? কেন হঠাৎ করে কেন্দ্রের নোটিস? টুইট করেছেন কলকাতা টিভি’র সম্পাদক কৌস্তুভ রায়। টুইটে তিনি অনেককেই ট্যাগ করেছেন। রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন লালুপ্রসাদ যাদব, বামপন্থী দলের সীতারাম ইয়েচুরি, সূর্যকান্ত মিশ্র, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, অধীররঞ্জন চৌধুরীদেরও নাম ট্যাগ করা হয়েছে ওই টুইটে।
কৌস্তুভ রায় লিখেছেন, ‘প্রথমে ওরা সিবিআই-ইডি পাঠিয়েছিল। সুবিধে হয়নি। এবার কলকাতা টিভির লাইসেন্স বাতিল করার নোটিস দিয়েছে। দেশের স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের উপর আরও একটা আঘাত। আমরা প্রতিবাদ করব ফ্যাসিস্ট অগণতান্ত্রিক মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলব। কোনও অন্যায় চাপের কাছে মাথা নোয়াব না। আশা রাখি দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের এই লড়াইয়ের পাশে থাকবে।’
When TV channels, newspapers and committed journalists EXPOSE and don’t suck up to Modi’s BJP, here is what they get.
Stay strong, all media👇 https://t.co/VdCNQf3Cav
— Derek O'Brien | ডেরেক ও'ব্রায়েন (@derekobrienmp) September 28, 2021
২০০৬ সাল থেকে দীর্ঘ ষোল বছর ধরে বাংলা সংবাদমাধ্যমের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ কলকাতা টিভি। সরকারে যে দলই থাকুক স্পেডকে স্পেড বলতে, কালোকে কালো বলতে বা সাদাকে সাদা বলতে ছাড়েনি। সংবিধানকে মর্যাদা দিয়ে এক প্রকৃত সংবাদ মাধ্যমের কর্তব্য এবং দায়িত্ব, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গিয়েছে। হয়তবা সে কারণেই বারবার শাসকের কোপে পড়তে হয়েছে কলকাতা টিভিকে। তা না হলে, কলকাতা টিভি সম্প্রচারের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার বিরোধ কোথায় ঘটছে? কী এমন সংবাদ সম্প্রচারিত হয়েছে যে যার জেরে দেশের সার্বভৌমত্ব বা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে কেন্দ্র!
বরং কলকাতা টিভি তো তুলে ধরেছে মানুষের আওয়াজ। মানুষের প্রশ্ন। কেন্দ্রের নতুন কৃষি আইন হোক বা জাতীয় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, কলকাতা টিভি একেবারে মাঠ থেকে রিপোর্টিং করেছে। তুলে ধরেছে প্রকৃত তথ্য আর সাধারণ মানুষের প্রতিবেদন। ২০২১। বিধানসভা ভোটের সময় শীতলকুচিতে গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে একেবারে গ্রাউন্ড জিরো থেকে রিপোর্ট তুলে এনে চ্যানেলে সম্প্রচার করে কলকাতা টিভি। ধর্মীয় ভেদাভেদ, মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে চ্যানেলের স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন ‘চতুর্থ স্তম্ভে’ প্রতিদিনই বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে চ্যানেল তার বক্তব্য সরাসরি বলে থাকে। তাতে যদি কেন্দ্রের শাসক দলের দিকে আঙুল ওঠে তাতেও পিছপা হয় না কলকাতা টিভি। আর তাই হয়ত এ বার একেবারে লাইসেন্স বাতিল করার নোটিস।
Attack on Kolkata TV. Through objective journalism, this channel has repeatedly unmasked the central government.
Central Government has now cancelled the Uplink & downlink renewing request of Kolkata TV.
Will the Delhi media stand by them? Or enjoy with popcorn?#WithKolkataTV
— Debangshu Bhattacharya Dev (@ItsYourDev) September 28, 2021
সব মিলিয়ে তিনশোরও বেশি সাংবাদিক-কর্মী কলকাতা টিভিতে পেশাদার। তাঁদের অদম্য মনোভাবে ভর করেই চ্যানেল আজ অনেক লড়াইয়ের ভিতর দিয়ে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়ে এসেছে। এরইমধ্যে সমাজ মাধ্যমে কেন্দ্রের পাঠানো নোটিস নিয়ে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। কলকাতা টিভির প্রশ্ন, তা হলে এই নোটিস কি আসলে ভয় দেখিয়ে বশ্যতা আদায়ের চেষ্টা? চ্যানেল শাসকের স্তাবকতা করে থাকে না বলেই কি হুমকি? প্রশ্ন থাকল।